ফ্যাসিবাদ ও তার প্রতিপক্ষ

হিটলারের ফ্যাসিবাদী বাহিনী একদিন আত্মসমর্পণ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুক্ত আজ এক হিটলারের দুঃস্বপ্নে পরিণত, মানুষ যাকে ভুলে যেতে চায়। কিন্তু তাই বলে কি বলা যাবে যে, ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পতন ঘটেছে, সে আর নেই, চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এই পৃথিবী থেকে? না, তা বোধ হয় বলা যাবে না, চরম আশাবাদীরাও বোধ করি তেমনটা বলতে ভরসা পাবেন না।

কেননা ফ্যাসিবাদ তো কেবল হিটলার, মুসোলিনি কিম্বা ফ্রাঙ্কো নন, ব্যক্তি নন, দেশও নয়, ফ্যাসিবাদ হচ্ছে একটি প্রবণতা ও বাস্তবতা যা মানুষের স্বভাবে এবং সামাজিক বিন্যাসের মধ্যেই রয়েছে, অনুকূল হাওয়া পেলে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, এবং আক্রমণ করে। ফ্যাসিবাদ হচ্ছে অতিউগ্র ও আক্রমণাত্মক চরম দক্ষিণপন্থি রক্ষণশীলতা যার অন্তর্গত উপাদানগুলোর মধ্যে রযেছে মানুষের আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা ও ধর্মীয় মৌলবাদের পশ্চাৎমুখিতা। 

ফ্যাসিবাদ সামাজিক ডারউইনবাদে বিশ্বাস করে, এবং অতিউৎসাহে তারই চর্চা করে থাকে। অর্থাৎ ডারউইন-প্রদর্শিত প্রাণিজগতে যেমন দুর্বল কেবলই আক্রান্ত হচ্ছে প্রবলের হাতে, এবং শুধু সেই টিকছে যার ক্ষমতা আছে টিকে থাকবার, অন্যরা যাচ্ছে ধ্বংস হয়ে, ফ্যাসিবাদের উদ্দিষ্ট রাষ্ট্রেও তেমনি প্রবলই শাসন করবে, যদিও রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করা হবে জনগণের নামে, এবং দুর্বল সেই শাসনের ভার বহন করে চলবে। ফ্যাসিবাদ সমাজে শ্রেণির বিদ্যমান বিন্যাসকে রক্ষা করবে, রক্ষা করেই চাইবে জনগণকে এক রাখতে, এবং সেই প্রয়োজনে আক্রমণ করবে অন্য দেশকে।

এই যদি হয় ফ্যাসিবাদের চেহারা তবে তা কি আজও বিদ্যমান নেই পৃথিবীর নানা দেশে- পুঁজিবাদী ধনী দেশগুলোতে যেমন, তেমনি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও। পুঁজিবাদের একেবারে কেন্দ্রভূমিতে পুঁজির স্বৈরশাসন বিরাজ করে। সেখানে গণতন্ত্র আছে ঠিকই, কিন্তু সে হচ্ছে ধনীদের গণতন্ত্র। তার সভ্যতার অভ্যন্তরে জঙ্গলই সত্য হয়ে রয়েছে। আর সাধারণ মানুষকে যে বশে রাখা সম্ভব হচ্ছে তা একদিকে স্বজাতির মহিমা প্রচার করে অন্যদিকে দরিদ্র দেশগুলোকে লুণ্ঠন করে।

সবই ফ্যাসিবাদের উপাদান। গরিব পৃথিবীর অনেক দেশেই স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠা আরো নগ্ন ও নিষ্ঠুর। সে সব জায়গায় শ্রেণি রয়েছে, এবং ধনিক শ্রেণি শাসন করছে, সাম্রাজ্যবাদী ধনী দেশগুলোর প্রত্যক্ষ পৃষ্টপোষকতায়। জনগণকে অজ্ঞ ও পশ্চাৎপদ রেখে, তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে ইহজাগতিকতার বোধকে ভোঁতা করে দিয়ে কোথাও ব্যক্তির কোথাও 'দলের শাসন' চলতে থাকে। এসব ঘটনা কি জাজ্বল্যমান সত্য নয়? তাহলে ফ্যাসিবাদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এমন কথা কোন সাহসে বলি?

ফ্যাসিবাদকে ঠিকমতো চিনতে হলে তার ইতিহাসের দিকে একবার দ্রুত তাকানো ভালো। হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেন ১৯৪১ সালের ২২ জুন তারিখে। আক্রমণ করে ভুল করেছেন এটা বলা যেতে পারে। কেননা, ওই আক্রমণের ফলেই ফ্যাসিবাদের বিপর্যয় ঘটেছে। প্রচ- যুদ্ধ হলো, কিন্তু হিটলারের বাহিনীকে শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করতে হলো, পরে হিটলার আত্মহত্যা করলেন এবং ১৯৪৫-এর মে'তে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলো। এই আক্রমণ আত্মঘাতী ছিল ঠিকই, কিন্তু এটি না করে হিটলারের পক্ষে কি কোনো উপায় ছিল? না, তা ছিল না। ছিল না এই জন্য যে, নাৎসী জার্মানির জন্য তখন ভূমির বড় প্রয়োজন ছিল।

সমাজতন্ত্রে তাই আপোসের স্থান ছিল না। থাকে না। হিটলার জানতেন তাঁর মূল শত্রু কে, তাই তাকে ধ্বংস করার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন তিনি- একেবারে অনিবার্যভাবে। আক্রমণের মতো পরাজয়ও অনিবার্য ছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করার সেটা একটা কারণ। আরো একটা কারণ এই যে, ফ্যাসিবাদ উগ্র ও আক্রমণাত্মক জাতীয়তাবাদের অন্ধ উত্তেজনা সৃষ্টি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাখে। তাকে এক ধরনের সন্তোষ দেয়। জার্মান জাতি পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ, পৃথিবীকে শাসন করার অধিকার কেবল তারই- এই আওয়াজ তুলে রুশদেরকে আক্রমণ করা হিটলারের জন্য সেদিক থেকেও প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় ও মৌলিক কারণ ছিল এই যে, সমাজতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ হচ্ছে পরস্পরের জাত শত্রু, ফ্যাসিবাদ তাই অবশ্যই চাইবে সমাজতন্ত্রকে নির্মূল করে দিতে। সমাজতন্ত্র চলে গেলে উদারনীতিকদের কাবু করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। অল্প সময়ের। হিটলার সেটাই চেয়েছিলেন।

এসব কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ না-করে তাঁর উপায় ছিল না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উদারনীতিকরাও লড়ছিল। ব্রিটেন লড়ছিল, ফ্রান্স লড়ছিল। হিটলারের নিজের দেশেও যে উদারনীতিকেরা ছিল না তা তো নয়; ছিলেন এবং হিটলারের সঙ্গে তাঁদেরও বিরোধিতা ছিল। কিন্তু উদারনীতিক তথা বুর্জোয়া গণতন্ত্রীদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের যে বিরোধ তা শেষ পর্যন্ত পারিবারিক বিরোধেই পর্যবসিত হয়। ফ্যাসিবাদ অবশ্যই গুন্ডা প্রকৃতির, উদারনীতি অবশ্যই ভদ্র স্বভাবের, কিন্তু তারা উভয়েই আবার পুঁজিবাদেরই অন্তর্গত, পুঁজিবাদ ধ্বংস হোক এ তাদের কারোই কাম্য হতে পারে না। সমাজতন্ত্রের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে পুঁজিবাদকে ধ্বংস করতে চায়, পুঁজিবাদকে ধ্বংস করে শ্রেণি ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই তার লক্ষ্য।

সমাজতন্ত্রে তাই আপোসের স্থান ছিল না। থাকে না। হিটলার জানতেন তাঁর মূল শত্রু কে, তাই তাকে ধ্বংস করার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন তিনি- একেবারে অনিবার্যভাবে। আক্রমণের মতো পরাজয়ও অনিবার্য ছিল। কেননা সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন একটি সদ্যজাগ্রত বিপ্লবী শক্তি, তার আছে উন্নতর আদর্শ ও গভীরতর সংঘবদ্ধতা। সেই উন্নত আদর্শ তাকে দিয়েছিল অসামান্য সাহস, নৈতিক শক্তি ও আপোসহীনতা।

মানুষে মানুষে সহমর্মিতার ভিত্তিতে যে ঐক্য ও দেশপ্রেম গড়ে উঠেছিল তাও ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই অপরাজেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন লড়ছিল মনুষ্যত্বের পক্ষে, হিটলারের জার্মানি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল পশুত্বের রাজত্ব; মনুষ্যত্বের জয় হয়েছে, পশুত্বকে পরাভূত করে। জয় না হলে মানুষের খুব বড় বিপদ ছিল। সমাজতন্ত্র পিছিয়ে যেত, সভ্যতাও পিছিয়ে পড়তো। আর ওই জয়ের ফলে পুঁজিবাদের পক্ষেও তার আগের রূপে থাকা সম্ভব হয়নি, ছাড় দিতে হয়েছে, নমনীয় করতে হয়েছে চেহারাটাকে, কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণাকেও প্রশ্রয় দিতে হচ্ছে কোথাও কোথাও।

এই যদি হয় ফ্যাসিবাদের চেহারা তবে তা কি আজও বিদ্যমান নেই পৃথিবীর নানা দেশে- পুঁজিবাদী ধনী দেশগুলোতে যেমন, তেমনি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও। পুঁজিবাদের একেবারে কেন্দ্রভূমিতে পুঁজির স্বৈরশাসন বিরাজ করে।

ইউরোপে ফ্যাসিবাদের অভ্যুদয়ের সময়ে সেখানে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন যে ছিল না তা নয়, বরঞ্চ শক্তিশালী আন্দোলনই বিদ্যামান ছিল, আর তাকে চুরমার করে দিয়েই ফ্যাসিবাদের অভ্যুদয় ঘটে। প্রথম জীবনে মুসোলিনি বামেরই লোক ছিলেন। বিপ্লবী বামের (আমাদের দেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কোনো কোনো নেতার মতো) সেই অবস্থানে থেকে জেল খেটেছেন, নির্যাতন ভোগ করেছেন। কিন্তু যথার্থ সমাজতন্ত্রী হয়ে ওঠেননি। ব্যক্তিগত সাফল্য খুঁজছিলেন আসলে; সেটা বাম দিক থেকে যখন আসছে না দেখলেন, তখন ডান দিকে ঝুঁকলেন, ঝুঁকে ফ্যাসিস্ট পার্টি গঠন করলেন। এটা ১৯১৯- এর ঘটনা। 

প্রথমাবস্থায় চেষ্টা ছিল বাম ও ডানকে একত্র করে ক্ষমতায় যাবেন চলে। ফ্যাসিস্ট পার্টি গঠন করার সময়ে মুসোলিনির ঘোষণাটি কৌতূহলোদ্দীপক। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, 'আমরা হচ্ছি প্রতিক্রিয়াশীল ও বিপ্লবী, অভিজাত্যগর্বী ও গণতন্ত্রী, রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল।' কিন্তু এক সঙ্গে ওই দুই বিপরীত পাড়ের হবেন এতো কিছুতেই সম্ভব নয়; সম্ভব হয়ওনি। তিনি দক্ষিণে চলে গেছেন, পুরোপুরি, এবং ভয়াবহ একটি রাষ্ট্রযন্ত্র গড়ে তুলেছেন, সাধারণ মানুষের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নিয়ে। এ কাজে তিনি উষ্ণ সমর্থন পেলেন জমি ও পুঁজির মালিকদের, যুদ্ধফেরৎদের এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের। অন্যদের তো পাবেনই, কিন্তু মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তও যে এলো তাঁর পেছনে এটাই বিশেষভাবে লক্ষ্য করবার মতো। এলো হতাশায় ও ভয়ে। 

যুদ্ধপরবর্তী মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব যে ভয়াবহ হতাশার সৃষ্টি করেছিল মুসোলিনি তাকে কাজে লাগালেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তকে টেনে নিলেন তাঁর দলে। আর ছিল ভয়। সমাজতন্ত্রীরা আন্দোলন করছিলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ভয় পেয়ে গেল, ভাবলো শ্রেণির যেটুকু অবলম্বন অবশিষ্ট রয়েছে সেটুকুও যাবে চুরমার হয়ে, সমান হয়ে যেতে হবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে; শ্রেণি-হারাবার সেই আতঙ্কে তারা ছুটলো মুসোলিনির পিছু পিছু। বিশেষভাবে গেল তরুণরা, তাদের মধ্যে হতাশাটা ছিল বেশি, বেশি ছিল অভিমানটাও।

হিটলারও জেল খেটেছেন প্রথম জীবনে। জেলে বসেই তিনি তাঁর 'দার্শনিক' গ্রন্থ 'মেইন কেমফ' রচনা করেন। তাঁর জার্মানিতেও অত্যন্ত প্রবল ছিল সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। এতো প্রবল যে, হিটলারকে তাঁর পার্টির নামই দিতে হয়েছিল জাতীয় সমাজতন্ত্রী দল। সমাজতন্ত্রকে উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না, তাই সমাজতন্ত্রকেই ব্যবহার করলেন সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাকে জাতীয় করে তুললেন, এবং ইহুদিদেরকে জাতীয় শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পুঁজিবাদ বিরোধী আন্দোলনের ধারাকে ইহুদি বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করলেন। পুঁজিবাদীরা খুশী হলো, সমর্থন দিলো। ওদিকে ওই যে হতাশ ও সন্ত্রস্ত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত তারা তো জার্মানিতেও ছিল, বেশি করেই ছিল, বাবা হিটলারকে পেয়ে বেঁচে গেল। হিটলার তাদেরকে আশার কথা শোনালেন, বললেন, জার্মানরা পৃথিবী জয় করবে, সারা পৃথিবীর প্রভু হবে। ফলে কারো জন্যই শ্রেণিচ্যুত হবার ভয় রইলো না, সম্ভাবনা রইলো জগৎ জয় করবার। হিটলারের জয় জয়কার পড়ে গেল।

স্পেনে সমাজতন্ত্রীরা আরো বেশি অগ্রসর হয়েছিলেন, ১৯৩৬ সালে তাঁদের পপুলার ফ্রন্ট রাষ্ট্র ক্ষমতাই প্রায় দখল করে নিয়েছিল, তখন ফ্রাঙ্কো নামলেন, গৃহযুদ্ধ শুরু হলো, এবং ক্ষমতা শেষ পর্যন্ত চলে গেল ফ্যাসিস্টদের হাতেই। এই ইতিহাসে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে একাধিক। প্রথম সত্য এই যে, হতাশা, বেকারত্ব ও বিক্ষোভ থাকলেই যে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন জয়ী হবে তেমন কোনো কথা নেই।

এই বিপ্লবী পরিস্থিতিকে কট্টর ডানপন্থিরাও ব্যবহার করতে পারে, এবং ব্যবহার করে নিজেদের লাইনে 'বিপ্লব' ঘটাতে পারে, যদি না সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সঠিক পথে অগ্রসর হয়। এবং সঠিক পথে অগ্রসর হওয়া যে সহজ তাও নয়। তুলনায় দক্ষিণপন্থিদের কাজটা অনেক সহজ। তারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার আনুকূল্য পায় তো বটেই, মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক যে স্বার্থপরতা ও পশ্চাৎমুখিতা রয়েছে তার দ্বারাও সমানে পুষ্ট হয়। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব সমাজপ্রগতির যে-ধারাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল, তাকে নষ্ট করার চেষ্টা কোনো অবধি ছিল না। 

ফ্যাসিবাদ সেই চেষ্টারই সবচেয়ে সুসংগঠিত রূপ বটে। রক্ষণশীলরা এমন কোনো অস্ত্র নেই যা ব্যবহার করে না, ধর্মকেও ব্যবহার করে থাকে, মুসোলিনি যা করেছিলেন। ১৯২৯ সালে মুসোলিনি পোপের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। ঠিক হয় পোপকে ভ্যাটিকান সিটির ওপর আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব দেওয়া হবে এবং ক্যাথলিক ধর্মকে ইতালির একমাত্র রাষ্ট্রীয় ধর্ম করা হবে; বিনিময়ে পোপ মুসোলিনিকে সমর্থন দেবেন।

প্রথম শিক্ষা যেমন ফ্যাসিবাদের সাফল্য থেকে প্রাপ্য, দ্বিতীয় শিক্ষা তেমনি পাওয়া যাচ্ছে ফ্যাসিবাদের পতনের ঘটনা থেকে। ফ্যাসিবাদের পতন উদারপন্থিদের হাতে হয়নি, সমাজতন্ত্রীদের হাতেই হয়েছে। হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ না করলে যুদ্ধের ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো। আক্রমণ যতটা অনিবার্য ছিল ততোটাই অনিবার্য ছিল পতন। যাতে বোঝা যায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন যুদ্ধ কেবল সমাজতন্ত্রীরাই করতে পারেন; অন্যরাও তা করেন বটে, কিন্তু বেশি দূর এগোন না, মাঝপথে আপোস করে ফেলেন। ভদ্র ভাই গুন্ডা ভাইটাকে মেনে নেন, কি করবেন, হাজার হোক ভাই তো। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই আজও চলছে। দেশে দেশে লড়ছে মানুষ।

(দুই পর্বের লেখাটির আজ দেওয়া হলো প্রথম পর্ব ) 

Comments

The Daily Star  | English

Time to build the country after overcoming dictatorship: Tarique

Highlights need to build skilled generations across all sectors

2h ago