নেতানিয়াহুকে ‘হিটলারের ভাগ্য’ বরণ করতে হবে: তুরস্ক

এরদোয়ান ও নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই একে অপরের সমালোচনায় মুখর। গাজার যুদ্ধ শুরুর পর তাদের সম্পর্কে আরও অবনতি দেখা দেয়।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান (বাঁয়ে) ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স/এএফপি
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান (বাঁয়ে) ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স/এএফপি

এক বিবৃতিতে আঙ্কারার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

এর কয়েক ঘণ্টা আগেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে প্রয়োজনে ইসরায়েল হামলা চালানোর হুমকি দেন। এই হুমকির জবাবে এরদোয়ানকে প্রয়াত ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তুলনা করে ইসরায়েল। এরপর এলো তুরস্কের পাল্টা জবাব।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনাদোলু নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, 'যেভাবে গণহত্যাকারী হিটলারের সময় ঘনিয়ে এসেছিল, ঠিক সেভাবেই গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর সময় ঘনিয়ে আসবে।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'যেভাবে গণহত্যাকারী নাৎসিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছিল, সেভাবেই যারা ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করতে চাইছে, তাদেরকেও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। মানবতা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়াবে। আপনারা ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করতে পারবেন না।'

বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আঙ্কারা ইসরায়েলকে নাৎসি ও নেতানিয়াহুকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করে এসেছে।

আলাদা করে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এক্সে লেখেন, 'আমাদের প্রেসিডেন্ট এখন মানবতার বিবেক ও কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'যারা তার কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চায়, বিশেষত, ইসরায়েলসহ আন্তর্জাতিক জায়োনিস্ট চক্র—তারা এখন আতঙ্কে আছে। সব গণহত্যাকারী ও তাদের দোসরদের পরিণতি একই হয়, যা ইতিহাস আমাদেরকে শিখিয়েছে।'

বিশ্লেষকদের মতে, রোববার এরদোয়ানের বক্তব্যে ১০ মাস ধরে গাজায় নির্বিচার হত্যাকাণ্ড বন্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পরোক্ষ হুমকি ছিল।

তিনি গাজার যুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেন, 'তুরস্ককে অত্যন্ত বলিষ্ঠ হতে হবে, যাতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে এরকম আচরণ চালিয়ে যেতে না পারে। যেভাবে আমরা (নাগর্নো) কারবাখে প্রবেশ করেছি, যেভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছি, একই কাজ আমরা তাদের সঙ্গেও করতে পারি। আমরা পারি না এমন কিছুই নেই। আমাদের শুধু বলিষ্ঠ থাকতে হবে।'

দলীয় বৈঠকে এরদোয়ান এই মন্তব্য করেন।

এক কালে নেতানিয়াহু ও এরদোয়ানের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। ফাইল ছবি: এএফপি
এক কালে নেতানিয়াহু ও এরদোয়ানের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। ফাইল ছবি: এএফপি

২০২০ সালে এরদোয়ানের নির্দেশে আরমেনিয়ার সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে বিবাদে আজারবাইজানকে সামরিক সহায়তা দেয় তুরস্ক। নাগর্নো-কারবাখ অঞ্চলকে ঘিরে ৪৪ দিনের এই সংঘাতে তুরস্কের সেনাবাহিনী সরাসরি অংশ না নিলেও সহায়তা দিয়েছে। আজারবাইজানকে সিরিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা ও ড্রোন সরবরাহ করে তুরস্ক।

একই বছর লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারকে সহায়তা করতে ১ বছর মেয়াদের একটি ম্যান্ডেট পাস হয় তুরস্কের পার্লামেন্টে। সে অনুযায়ী লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে সরকারকে সহায়তা করে তুরস্কের যোদ্ধারা।

তবে ন্যাটো জোটের অন্যতম সদস্য হিসেবে তুরস্ক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে গেলে অন্যান্য সদস্যদের তোপের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যদের বেশিরভাগের সঙ্গেই ইসরায়েলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

এরদোয়ানের এই বক্তব্যের পর ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ (তার নামের সঙ্গেই 'ইসরায়েল' রয়েছে) তাকে ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে তুলনা করেন। ২০০৩ সালে একনায়ক হিসেবে পরিচিত সাদ্দাম হোসেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী উৎখাত করে।

পরবর্তীতে ইরাকের আদালতের রায়ে সাদ্দামকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

ক্যাটজ বলেন, 'এরদোয়ান সাদ্দাম হোসেনের পথে হাঁটছেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছেন। সেখানে (ইরাকে) কি হয়েছিল এবং কীভাবে ঘটনার অবসান হয়েছিল, সেটা তার মনে রাখা উচিৎ।'

এরদোয়ান ও নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই একে অপরের সমালোচনায় মুখর। গাজার যুদ্ধ শুরুর পর তাদের সম্পর্কে আরও অবনতি দেখা দেয়।

গাজা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মে মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিতের ঘোষণা দেন এরদোয়ান।

Comments