‘আমার ছেলেটাকে পুলিশ সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলেছে’

জলকামানের পানিতে পা পিছলে রাস্তায় পড়ে যায় শুভ। রাস্তা থেকে উঠার সময় তার সারা শরীরে পুলিশের ছররা গুলি লাগে।
বগুড়া
নিহত মো. সিয়াম শুভ। ছবি: সংগৃহীত

পুরোনো প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে দিন কাটত বগুড়ার হাড্ডিপট্টি এলাকার ১৬ বছরের কিশোর মো. সিয়াম শুভর। বাবা-মার খোঁজ জানা ছিল না, ৭ বছর বয়সে স্থানীয় আশিক ও শাপলা খাতুন দম্পতি তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাদের কাছেই বড় হচ্ছিল সে।  

গত ১৯ জুলাই বিকেল ৩টার পর কাজ শেষে নানার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। আর ঘরে ফেরেনি সে।

শুভর মা শাপলা খাতুন ও প্রতক্ষ্যদর্শী সাকিব জানান, ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার সময় বগুড়া সেউজগাড়ী আমতলা মোড় আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। বিকেল ৫টার পরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে পুলিশ সেখানে জলকামান দিয়ে গরম পানি ছিটিয়ে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

এরপর পুলিশ এপিসি থেকে নেমে শটগান থেকে অসংখ্য গুলি করে বলে জানান সেখানে উপস্থিত থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়ার সমন্বয়ক সৈকত আলী।

এই সময় দৌড়ে সেখান থেকে সরে যাওয়ার সময় জলকামানের পানিতে পা পিছলে রাস্তায় পড়ে যায় শুভ। রাস্তা থেকে উঠার সময় তার সারা শরীরে পুলিশের ছররা গুলি লাগে বলে জানায় তার সঙ্গে আন্দোলনে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী। পরে তাকে কাছেই অবস্থিত বগুড়া নার্সিং হোমে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মো. মশিহুর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডাক্তার মশিহুরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছররা গুলি সিয়ামের দুই চোখ, মাথা এবং সারা শরীরে ঢুকেছে। সেইসঙ্গে সে পড়ে গিয়ে মাথায় তীব্র আঘাত পেয়েছে।

এরপরে আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন মিছিল করতে করতে শুভর মরদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) নিয়ে যায়। সেখানেও ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই সময় জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার মো. সালেহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছররা গুলি শুভর সারা শরীরে ঢুকে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।

রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তখন নিহত শুভর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। পরে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সে হাড্ডিপট্টি এলাকার বাসচালক আশিক ও শাপলা খাতুনের দত্তক ছেলে।

শুভর বাবা আশিক জানান, ৭ বছর বয়স থেকে শুভ তাদের সঙ্গে। 

মা শাপলা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নিজেও আগে বোতল কুড়াতাম। ৯ বছর আগে একদিন বগুড়া রেলস্টেশন বোতল কুড়ানোর সময় শুভকে পাই। সে আমাকে মা বলে জড়িয়ে ধরে। সেই থেকে শুভ আমাদের সঙ্গে থাকত আর বোতল কুড়ানোর কাজ করত।'

'আমার আরও চার সন্তান রয়েছে। শুভও আরেক সন্তান, তাকে আমি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতাম। আমার ছেলেটাকে পুলিশ সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই', বলেন তিনি।

হাড্ডিপট্টি বাসস্ট্যান্ডের নৈশ্য প্রহরী ফারুক হোসেন বলেন, 'শনিবার শুভর মরদেহ নিয়ে এসে যখন আমরা এখানে গোসল করিয়ে দিচ্ছিলাম, সেই দিনও পুলিশ এসে এখানে গুলি করে যায়। মরদেহ রেখে কিছু সময়ের জন্য আমাদের দৌড়াতে হয়েছিল।'

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago