‘হাসিমুখেই বের হয়েছিল, ভাবি নাই লাশ হয়ে ফিরবে’

গুলিতে নিহত জসিমের মরদেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। ছবিটি খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ বাজার এলাকা থেকে শুক্রবার রাতে তোলা। ছবি: স্টার

'লাশটা বাড়িতে পাঠাইতে হইবো। যা পারেন সাহায্য করেন ভাই!'

পাশেই খাটিয়ার ওপর পড়ে ছিল ৩২ বছরের জসিম উদ্দিনের লাশ। সেখানে দাঁড়িয়ে সাহায্য চাইছিলেন জসিমের চাচা ফুটপাতের বিক্রেতা কালা মিয়া।

গত শুক্রবার রাতে খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ বাজার এলাকায় একটি মসজিদের সামনে এই দৃশ্য দেখা যায়।

স্থানীয়দের দাবি, সেদিন বিকেল ৫টার দিকে বনশ্রী এলাকায় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে বিজিবি ও পুলিশ গুলি চালালে জসিম নিহত হন। সেখান থেকে তাকে পাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কালা মিয়া জসিমের মরদেহ শনাক্ত করেন। কোনো ধরনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই সন্ধ্যা ৭টার দিকে কালা মিয়ার কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সিপাহীবাগে লাশ আনার পর সাহায্যের জন্য স্থানীয়দের কাছে হাত পাতেন কালা মিয়া।

তিনি বলেন, 'আমি আর জসিম দুজনই ফুটপাতে ব্যবসা করি। ও চানাচুর বিক্রি করত। জিনিসপত্রের দামের কারণে এমনিতে কষ্টে ছিলাম। আর গেল তিন দিনে আমরা একটা টাকাও রোজগার করতে পারি নাই।'

'ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে থাকে জসিমের পরিবার। বাড়িতে লাশ পাঠানো দরকার। এদিকে আমার কাছেও কোনো টাকা নাই। তাই টাকা জোগাড় করতেছি।'

বিভিন্ন বয়সের অনেকেই কালা মিয়াকে সাহায্য করতে দেখা যায়। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকা পর্যন্ত দেন কেউ কেউ। এক ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয়দের সহায়তায় ৬০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন কালা মিয়া। সময় নষ্ট না করে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে তিনি জসিমের লাশ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।

গাড়ি ছাড়ার আগে তিনি জানান, জসিমের চার মেয়ে ও শারীরিক প্রতিবন্ধী একটি ছেলে আছে। ওদের বয়স এক থেকে ১২ বছরের মধ্যে। বাবা মারা যাওয়ায় ওদের এখন কী হবে?

প্রতিবেশী রুমা বেগম জানান, কয়েকদিন ধরে জ্বর ছিল জসিমের। জ্বর কমতেই রামপুরা, বনশ্রী ও আশপাশের যেসব এলাকায় গিয়ে সে দেখে সেখানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। এর পর তিন দিন ধরে সংঘর্ষ চলে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। আন্দোলনকারীদের রামপুরার বিটিভি কার্যালয়ের আশপাশে ঘেঁষতে না দিতে বিজিবি সেদিন গুলি চালায়। র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে নিচে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড ছোড়া হলে বনশ্রীতেও সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়ে।

রুমা বলেন, আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জসিম অস্থির হয়ে ওঠেন। বিকেলের দিকে হাসিমুখে ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন তিনি। বের হওয়ার সময় জসিম খুব শিগগির ফিরবেন বলে যান। আমরা ভাবতেও পারিনি জসিম এভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় কাফনে মোড়ানো হয়ে ফিরবেন।

পরদিন কালা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কারফিউর মধ্যেই তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছান। জসিমের জানাজা ও দাফনে কিছু টাকা খরচ হয়। বাকি টাকা তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

13h ago