যে জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে

‘একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। এমন জীবন গড়ো যা তোমাকে স্মরণীয় করে রাখবে’
ফারহান ফাইয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

'একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। এমন জীবন গড়ো যা তোমাকে স্মরণীয় করে রাখবে'—এই কথাগুলো ইংরেজিতে লেখা ছিল ফারহান ফাইয়াজের ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতে।

১৮ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে একটি মরদেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পরেছেন এক নারী।

মরদেহটি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজের (১৭)। এইচএসসি প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ফারহান ফাইয়াজ।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন ফারহান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সেই সময় যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লিখছিলেন, বিচার চাই।

শিক্ষকদের ভাষ্য, ফারহান ছিলেন নম্রভদ্র শিক্ষার্থী।

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, 'ফারহান শান্ত ও সংযত ছেলে ছিল। সহপাঠী ও শিক্ষকসহ সবাই তাকে ভালোবাসতো। কখনো তাকে কোনো কিছুর জন্য বকাঝকা করলেও সে কোনো টু শব্দও করতো না।'

তিনি জানান, সহপাঠীর সঙ্গে কখনো ঝগড়া-বিবাদে জড়ায়নি ফারহান।

নজরুল ইসলাম বলেন, 'অসুস্থতার কারণে সে আমার ক্লাসের নিয়মিত ছাত্র ছিল না। কিন্তু যতটুকু আমি তাকে পেয়েছি, সে খুবই নম্র বলেই আমার মনে হয়েছে।'

তিনি জানান, কয়েক মাস আগে কাকরাইলে বাবার কাছে যাওয়ার আগে মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে দাদির সঙ্গে থাকত ফারহান।

টেন মিনিট স্কুলের শিক্ষক মুনজারিন শহীদ নিজের সঙ্গে ফারহানের একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। একজন প্রিয় শিক্ষার্থী হারানোর বেদনা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, 'সে আমার ছাত্র ছিল। তার বয়স ১৮ বছরও হয়নি! সে মারা গেছে!'

ফারহানের মতো একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারানোর শোকে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার কালো করে প্রতিবাদ জানায়।

বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় নিহত সবার ন্যায়বিচার দাবি করেন এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

10h ago