শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান প্রসঙ্গে মন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়া

রাজাকার স্লোগান
সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ছবি: সংগৃহীত

কোটাসংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মধ্যরাতে স্লোগানে স্লোগানে যে প্রতিবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, তার বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।

গতকাল রোববার বিকালে চীন সফরের বিষয় তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।'

এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে থালাবাটি বাজিয়ে সমস্বরে 'তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার' স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর একে একে রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী। এ সময় শিক্ষার্থীরা 'চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার', 'মেধা না কোটা/ মেধা মেধা'সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

কাছাকাছি সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন। এগুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা চালানোর খবর আসে।

কোটা আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের স্লোগান নিয়ে ফেসবুকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি লেখেন, 'যারা নিজেদেরকে রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তস্নাত লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে নিয়ে মিছিল করবার কোন অধিকার থাকতে পারে না।'

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল লেখেন, 'যাদের মুখ থেকে বের হয়, "আমি রাজাকার"--তারা প্রমাণ করছে তারা এ-যুগের "সাচ্চা" রাজাকার! এরা আদালত মানে না, সরকারও মানে না, সুতরাং, এই রাষ্ট্রদ্রোহীদের পক্ষে এই রাষ্ট্রকে মানা সম্ভব না! সঠিক শ্লোগানই ধরেছে তারা! বের হয়ে আসুক এ যুগের রাজাকারদের আসল চেহারা!'

বিষয়টি নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে কাছাকাছি সময়ে দুটি পোস্ট দেন। একটিতে তিনি বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনও রাজাকারদের দখলে থাকতে পারেনা। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে, ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। দাবি আদায়ে রাজাকার স্লোগানে তাঁদেরকে (মুক্তিযোদ্ধাদের) অপমান যারা করছে তারা নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছেন।'

অন্য পোস্টে 'সংগৃহীত' উল্লেখ করে লেখেন, 'এমন ভাবে স্লোগান দিচ্ছে যেন আমরা জানতাম না ওরা রাজাকারের নাতি-নাতনি।'

এটি নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তিনটি পোস্ট দিয়েছেন। একটি পোস্টে লেখেন, 'যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫শে মার্চ ছাত্র শিক্ষকদেরকে গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে শ্লোগান দিতে লজ্জা করে না?'

অন্য দুটি পোস্টে আলাদা দুটি ফটোকার্ড যুক্ত করেন তিনি। এর একটিতে লেখেন, 'তুমি কে? আমি কে?/বাঙালি, বাঙালি।/তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।' আরেকটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা দানব ইয়াহিয়া খানের পোস্টারে তিনি লেখেন, 'একাত্তরের হাতিয়ার/গর্জে উঠুক আরেকবার/তোরা যারা রাজাকার/এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়'।

এছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এক পোস্টে লেখেন, 'যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং মেধার পক্ষে কথা বলেছে তাদের প্রতি আমার সহানুভুতি ছিল এবং আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে নিজেরে "রাজাকার" বলে স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যলয়ের পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করেছে, তাদের প্রতি জানাই ধিক্কার। নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দিতে এসব ছেলে-মেয়েদের লজ্জা হলো না? এই রাজাকাররা যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ গণহত্যা চালিয়েছিল, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের রাজাকারদের সহায়তায় হত্যা করা হয়েছিল, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দেয়। লজ্জা লাগে না? নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোনো দাবি আদায় হবে না।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

4h ago