বন্যা থেকে বাঁচতে বাঁধে, সেই বাঁধও যাচ্ছে ভেঙে

প্রতিবছর বন্যার সময় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ী ইউনিয়নের মহিলা বাঁধে আশ্রয় নেন বন্যা কবলিত মানুষজন। এবার দুদিন আগে এই বাঁধের একটা অংশ নতুন করে ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন বাঁধে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ২০টি পরিবার। গতকাল শনিবার বিকেলে তোলা ছবি। ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

বগুড়ায় গত ছয় দিন ধরে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ হাজারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুসারে, আজ রোববার সকাল ৯টায় বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

স্কুল-কলেজে পানি ওঠায় এই দুই উপজেলায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৮টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বন্যার কারণে এসব এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুরু হওয়া ষান্মাসিক পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হজরত আলী।

গত এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের। অনেক জায়গায় এখনো পর্যন্ত কোনো ত্রাণ বা সাহায্য পৌঁছায়নি।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ী ইউনিয়নের মহিলা বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় বাঁধে আশ্রয় নেওয়ারা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

এমনি দুই গ্রামের নাম চর শনপঁচা ও চর কর্ণিবাড়ী। এখানকার প্রায় শতাধিক পরিবার এখনো সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য পাননি বলে জানিয়েছে।

কর্ণিবাড়ী চরাঞ্চল অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় অনেকের বাড়িতে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। বন্যার পানি থেকে বাঁচতে অনেক পরিবার ইতোমধ্যে কাছের মহিলা বাঁধে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি এবং পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই বাঁধের একটি জায়গায় আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এসব পরিবার, জানিয়েছে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ী ইউনিয়নের মহিলা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে ২০টি পরিবার। ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

মহিলা বাঁধে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেওয়া বগুড়া জেলার সাবেক ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আইন উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১২ সালে এখানে ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধটি নির্মাণের সময় পানি যাওয়ার জন্য কোনো ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়নি। ফলে এই বাঁধের বিভিন্ন  জায়গা ভেঙে গেছে। গত ১০ বছর ধরে বাঁধের একটি বড় অংশে বন্যাদুর্গত মানুষ আশ্রয় নিত কিন্তু এবার সেখানেও গতকাল একটি অংশ ভেঙে গেছে।'

মহিলা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মোন্তেজার রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই বাঁধ ভেঙে গেলে আমাদের অনেক দূরে আশ্রয় নিতে যেতে হবে যা অনেক খরচের। এখন থেকে সারিয়াকান্দি ঘাট প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার পানির পথ। একটা নৌকা নিলে প্রায় ৩০০০ টাকা লাগে। বাঁধটি ভেঙে গেলেও কেউ সংস্কার করে না।'

বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ফেরদৌসী বেগম বলেন, 'গত ৮-১০ দিন হলো কেউ এক প্যাকেট বিস্কুটও দিতে আসেনি। দিনে এক বেলা রান্না করে কোনো রকমে ছোট-বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে দিন পার করছি। টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় অনেক দূর থেকে সাঁতার দিয়ে পানি আনতে হচ্ছে।'

জানতে চাইলে বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারিকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় ১৫০ টন চাল এবং শুকনো খাবার কিনে দেওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৮০ হাজার মানুষ। ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

মহিলা বাঁধে কেন ত্রাণ পৌঁছায়নি জানতে চাইলে সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দীপন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ৪ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। সেগুলো আজ কাছেই একটি চরে বণ্টন করছি। শোনপঁচা চরের অনেকে এখানে এসেছে। যারা আসেনি তাদের পরে দেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Panic grips NBR officials

The relief that followed the end of a disruptive strike by tax officials at the National Board of Revenue has quickly given way to anxiety and regret, as the government started a clampdown on those involved.

12h ago