বগুড়ায় সালমা হত্যা তদন্তে র‍্যাবের গাফিলতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার দুপাচাঁচিয়ায় গৃহবধূ সালমা খাতুন হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কোনো র‍্যাব সদস্যের গাফিলতি বা তথ্যগত ভুল পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গত ১০ নভেম্বর দুপাচাঁচিয়া উপজেলার জয়পীরপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে খুন হওয়া উম্মে সালমা খাতুনের (৫০) হত্যাকাণ্ড নিয়ে র‌্যাব ও পুলিশের পরস্পরবিরোধী দাবির পর আজ শনিবার এ কথা জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

গত ১১ নভেম্বর র‍্যাব দাবি করে মাকে হত্যার পর লাশ ফ্রিজে লুকিয়ে রেখেছিল স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাদ বিন আজিজুর রহমান। তবে পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডে সাদ জড়িত নয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস বলেন, 'ছেলের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। তার স্পষ্ট জবানবন্দির ফুটেজসহ আমাদের কাছে আছে। তিনি যখন জবানবন্দি দিচ্ছিলেন পাশের রুমে তার আত্মীয়স্বজন ছিলেন।

গাফিলতি বা ত্রুটির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, তদন্তকালে  র‍্যাবের কোনো সদস্য যদি গাফিলতি বা কোনো ধরনের অসদাচরণের জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‌্যাবের কাছে মাকে হত্যার অভিযোগ স্বীকার করা ছেলে কেন আদালতে একই বক্তব্য দেয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস বলেন, স্বীকারোক্তি অনেক ধরনের হতে পারে। নিজে দিতে পারে, ম্যজিস্ট্রেটের সামনেও দিতে পারে। স্বীকারোক্তি দিলেন মানেই ঘটনা প্রমাণ হয়ে গেল বিষয়টা কিন্তু এমন না। তিনি যেখানেই স্বীকারোক্তি দেন না কেন, তিনি কিন্তু পরবর্তীতে যেকোনো সময় পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে পারেন, এটা তার আইনগত অধিকার।'

র‌্যাবের প্রাথমিক তথ্যের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, তিনি (গ্রেপ্তার ছেলে) আমাদেরকে যে তথ্য দিয়েছেন, তাকে নিয়ে যে ধরনের আলামত উদ্ধার করেছিলাম, তার ভিত্তিতেই আমরা এটা জানিয়েছিলাম। এরপরেও আমাদের যদি কোনো গাফিলতি থাকে, এটা তদন্তাধীন বিষয়। উভয় সংস্থাই তদন্ত করছে। আমরা পুলিশের তদন্তে সহায়তা করব, তাদের দরকার হলে যোগাযোগ করতে পারে। তদন্তে যদি আমাদের কোনো গাফিলতি হয়, গাফিলতিতে যার দায় থাকবে- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

এটা মিডিয়া ট্রায়াল কিনা জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস বলেন, 'তার (ছেলে) দেওয়া তথ্য মতে- সেটার ভিত্তিতে জানিয়েছি। মিডিয়া ব্রিফিংটা একটা সামাজিক সচেতনামূলক কাজ, অপরাধ নিবারণমূলক যে কাজ, মানুষ যাতে এটা থেকে শিক্ষা নেয়। মানুষকে সচেতন করা, নিবারণমূল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্রিফিং করা হয়।

এখন যেটা তথ্য বেরিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ তদন্তে অন্যকিছুও বের হতে পারে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তদন্তে র‌্যাবের যদি কোনো গাফিলতি থাকে, তথ্যগত বা প্রক্রিয়াগত কোনো ভুল থাকে এবং এ প্রক্রিয়ার সাথে যদি কেউ দায়ী হয়, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেন তিনি।

গত ১১ নভেম্বর র‌্যাব-১২ এক সম্মেলনে দাবি করে যে, নিহত গৃহবধূর ছোট ছেলে সাদ-বিন-আজিজুর রহমান মাকে হত্যা করে মরদেহ ফ্রিজে রেখেছিলেন।

১১ নভেম্বর সাদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তবে সাদ জড়িত নয় বলে জানায় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ তথ্য জানায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— মাবিয়া বেগম (৪০) ও তার সহযোগী মোসলেম উদ্দিন (২৬) ও ভ্যানচালক সুমন রবি দাস (২৮)।

বগুড়া আদালতের পরিদর্শক মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, আসামি মোসলেম ১৬৪ ধারায় অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত মাবিয়া ও সুমনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন, তবে মোসলেমকে রিমান্ডে দেওয়া হয়নি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনসপেক্টর নাজমুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, হত্যার সময় সাদ মাদ্রাসায় থাকায় তার জড়িত থাকার সম্ভাবনা কম বলে মনে হচ্ছে।

হত্যাকাণ্ডে ভাড়াটিয়া মাবিয়ার সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া গেছে জানিয়ে পুলিশ বলছে, সালমা ও তার স্বামী জানতে পারেন মাবিয়া মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ব্যবসা করেন। তারা তাকে চলে যেতে বললেও তিনি তা করেননি।

র‌্যাবের কাছে দেওয়া সাদের জবানবন্দি সম্পর্কে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, তবে প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি সাদ নির্দোষ।

Comments

The Daily Star  | English

Corruption a significant obstacle to doing business in Bangladesh: CPD 

Around 17% of businesses identified corruption as biggest challenge, according to a CPD survey 

1h ago