বাজেটে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সুসংবাদ নেই

প্রবাসী শ্রমিক
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

প্রবাসী শ্রমিকদের সহায়তার জন্য আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সুসংবাদ নেই। এর ফলে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর সুযোগ হারাতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা আশা করেছিলেন যে অন্তত রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাড়ানো হবে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা কমাতে প্রকল্প ও প্রণোদনাসহ নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে স্বস্তি দেওয়া হবে।

দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদানের কথা প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার স্বীকার করলেও তাদের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, 'বিদেশে কর্মসংস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত।'

প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের রিজার্ভ বাড়ানো ও দেশের অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।

অর্থমন্ত্রী জানান, বাণিজ্যভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে বিদ্যমান ১০৪ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ছাড়াও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আরও ৫০টি কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশা করেছিলাম, এবারের বাজেটে রেমিট্যান্স প্রণোদনা কমপক্ষে পাঁচ শতাংশে উন্নীত হবে।'

বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে ও হুন্ডি ঠেকাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে সরকার।

২০২২ সালে এই প্রণোদনা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, 'মৃত্যুর ক্ষেত্রে অভিবাসী শ্রমিকের মরদেহ ফিরিয়ে আনা বা আইনি সহায়তা রাজস্ব বাজেট থেকে দিতে হবে।'

তার মতে, টিটিসিগুলোকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আওতায় আনা উচিত। কারণ, সরকার একা এত সুবিধা দিতে পারবে না।

শরিফুল হাসান জানান, প্রবাসী শ্রমিক মারা গেলে পরিবার তিন লাখ টাকা পেলেও তা সরকারি কোষাগার থেকে আসে না। দেশ ছাড়ার সময় একজন শ্রমিক যে কল্যাণ ফি দেন তা পরিবারকে দেওয়া হয়।

'রেমিট্যান্স ডলারের বড় উৎস। এটি দেশে ডলার ঘাটতি মোকাবিলায় বড় ভূমিকা রাখছে,' উল্লেখ করে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিন্তু, প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে প্রস্তাবিত বাজেটে বড় উদ্যোগ নেই। খুবই দুঃখজনক।'

'ফেরত আসা শ্রমিকরা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে সহযোগিতা পান না। তারা পরিবারের কাছে টাকার মেশিনের মতো, রাষ্ট্রের কাছে রিজার্ভ,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শরিফুল হাসান জানান, প্রবাসী শ্রমিক মারা গেলে পরিবার তিন লাখ টাকা পেলেও তা সরকারি কোষাগার থেকে আসে না। দেশ ছাড়ার সময় একজন শ্রমিক যে কল্যাণ ফি দেন তা পরিবারকে দেওয়া হয়।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'প্রবাসী শ্রমিকরা এত ডলার দেশে নিয়ে আসেন, অথচ তাদের কল্যাণে পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা নেই।'

'আমরা যদি প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে আরও উদ্যোগ নিতে পারি এবং তাদের জন্য আরও ব্যবস্থা নিতে পারি তবে তারা বড় রিটার্ন দেবে,' বলে মনে করেন এই ব্র্যাক কর্মকর্তা।

দেশের প্রতিটি দূতাবাসে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ওয়েলফেয়ার সেন্টার করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ডব্লিউএআরবিই ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকদের কল্যাণে নিজেদেরকেই টাকা দিতে হয়। এমন পরিস্থিতি থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।'

শ্রমিকদের কল্যাণে রাজস্ব বাজেট থেকে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু শ্রমিকদের কল্যাণ শ্রমিকের টাকায় করা হয়, সেহেতু সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নেই। তারা সরকারি টাকা খরচ করলে তো জবাবদিহিতা আসবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Regulator repeatedly ignored red flags

Time after time, the internal safety department of the Civil Aviation Authority of Bangladesh uncovered irregularities in pilot licencing and raised concerns about aviation safety, only to be overridden by the civil aviation’s higher authorities.

8h ago