প্রবাসী আয়ে জোয়ার, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা

আনোয়ার সোহেল/স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রচুর রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ফিরেছে স্থিতিশীলতা।

ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য বেড়েছে, ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার নেট ওপেন পজিশনে (এনওপি) ভালো অবস্থানে আছে। বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও দায়ের পাথ্যর্কই হলো নেট ওপেন পজিশন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে—গত ২০ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর এনওপি ৫৫০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটি মাসের শুরুতে ছিল মাত্র  ১৫০ মিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে এনওপি ২৫০ মিলিয়ন থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, এনওপি বেড়ে যাওয়ার পেছনে ডলার প্রবাহ বেড়ে যাওয়াই মূলত কারণ। ফলে, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্তিতিশীলতা ফিরেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রেমিট্যান্স আসার পাশাপাশি রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় আছে।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে ডলার বেশি আসায় সম্প্রতি বিদেশি মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হয়েছে। রেমিট্যান্স বেশি আসায় ডলারের প্রাপ্যতা বেড়েছে।'

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গত ২৩ মার্চ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে দুই দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, মার্চের শেষ নাগাদ তা তিন বিলিয়ন ডলার হতে পারে। এটি হবে সর্বকালের সর্বোচ্চ।

গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রেমিট্যান্স আসা বাড়তে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে—গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আসা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার, নভেম্বরে দুই দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, ডিসেম্বরে দুই দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার, এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল দুই দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।

যমুনা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, 'হুন্ডি ও হাওলার পাশাপাশি পাচার কমে গেছে। এটি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।'

তার মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারিতে কারসাজি কমেছে। এটি মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে—গত ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয়  দুই দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে তিন দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ২০ দশমিক শূন্য এক বিলিয়ন ডলার।

আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ডলারপ্রতি ১২২ টাকা। যদিও এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা মতে ঠিক করা ডলার রেট।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দাবি, ঈদে বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রাবাজারও স্থিতিশীল আছে।

তারা জানান, ঈদকে সামনে রেখে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নগদ টাকা তোলার চাপ থাকলেও কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকে এখন অতিরিক্ত টাকা আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে—গত ২৫ মার্চ স্বল্পমেয়াদি আন্তঃব্যাংক ঋণের সুদ বা কলমানি রেট ১০ শতাংশের বেশি থেকে কমে নয় দশমিক ৯৫ শতাংশ হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে বাজারে তারল্য চাহিদার তুলনায় জোগান ভালো আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Crimes against humanity: trial against Hasina begins at ICT

Co-accused in the case are former home minister Asaduzzaman Khan Kamal and former IGP Abdullah Al-Mamun

10m ago