অনুভবের যৎসামান্য- ২৩

নিখুঁতের সন্ধানে

মানুষ কি নিখুঁত হতে পারে? দেখতে নিখুঁত হতে পারে কি না সে-কথা বলছি না, বলছি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা। আপনি যখন কাউকে ভালোবাসেন তখন তাকে দেখতে নিখুঁতই লাগে, যদিও হয়তো তা কেবল আপনার চোখেই, অন্যদের চোখে নয়।

প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি। অনেকদিন আগে, আমার তরুণ বয়সে, ইতালির ত্রিয়েস্তে শহরে জেমস জয়েসের এক সময়ের বাসভবন খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম, যেখানে তিনি তাঁর বিশ্বখ্যাত উপন্যাস ইউলিসিস লিখতে শুরু করেছিলেন।

আমার সঙ্গী ছিলেন আরেক তরুণ। অচেনা শহরে কোনো কিছু খুঁজে বের করা তো কঠিন, তাও একশ' বছরের পুরনো এক বাড়ি। ম্যাপ ধরে খুঁজতে গিয়েও পথ হারালাম। অগত্যা বাধ্য হয়েই একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, বাড়িটা কোথায়। ঘটনাক্রমে তিনি ছিলেন একজন রূপবতী তরুণী। না, ইচ্ছে করে তাকে বেছে নিইনি জিজ্ঞেস করার জন্য। সামনে পেয়েছি বলে জানতে চেয়েছি। তিনি অবশ্য বাড়িটির খোঁজ দিতে পারলেন না, তবে কিছুক্ষণ আলাপ করলেন। বিদায় নেওয়ার সময় মিষ্টি একটা হাসিও উপহার দিলেন। আর তখনই চোখে পড়লো, তার সামনের দুটো দাঁত একটু বেমানানভাবে উঁচু। আদর করে যাকে আমরা গজদন্ত বলি। তো, সঙ্গী তরুণকে বললাম, 'দেখেছ, মেয়েটা এত সুন্দর, অথচ হাসলে উঁচু দাঁত দেখা যায়।' সে কালবিলম্ব না করে উত্তর দিলো, পৃথিবীর সমস্ত সুন্দর মেয়ের দাঁতে সমস্যা থাকে।'

বলাইবাহুল্য, পৃথিবীর সব সুন্দর মেয়েকে সে দেখেনি, ওটা কথার কথা। তাছাড়া, আমি কখনো খেয়ালও করিনি, সুন্দর মেয়েদের সত্যিই দাঁতে সমস্যা থাকে কি না! কিন্তু আমার সঙ্গী তরুণটি কেন ওরকম করে বললো, বুঝতে পারলাম না। বুঝলাম বেশ কিছুদিন পর যখন তার প্রেয়সীর সঙ্গে দেখা হলো। মেয়েটি অপরূপা, কিন্তু সে হাসার সময় মুখের ওপর আলতো করে হাতচাপা দেয়।

সবসময় সেটি সম্ভব হয় না বলে একবার দেখে ফেললাম, তার সামনের একটা দাঁত নষ্ট। আমরা যাকে বলি পোকায় খাওয়া, ওরকম। আমার তরুণ বন্ধু তার প্রিয়তমার নষ্ট দাঁতকেই সরলীকরণ করেছিল এই বলে যে, পৃথিবীর সব সুন্দর মেয়ের দাঁতেই সমস্যা থাকে! ভালোবাসতো বলে সে সেই খুঁতকে গ্রহণ করেছিল তো বটেই, প্রয়োগ করেছিল জগতের সকল সুন্দর মেয়ের ওপরই। অর্থাৎ, আমার চোখে যা খুঁত, তার চোখে তা নয়। ভালোবাসা তার দেখার চোখকে পাল্টে দিয়েছে।

এ তো গেল দেখার কথা, কিন্তু আচার-আচরণ? আমরা মানুষের বাহ্যিক রূপ দেখে বড়োজোর সাময়িকভাবে মুগ্ধ হই, দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে জড়াই না। তার চারিত্রিক নানা বৈশিষ্ট্য বিচার-বিশ্লেষণ করার পর তার সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিই। এই সিদ্ধান্ত যে সবসময় সঠিক হয় তাও নয়, কিন্তু আমাদের কী-ই বা করার আছে? বিশেষ করে অচেনা এবং দূরের মানুষ সম্বন্ধে আমরা জানবোই বা কী করে, কাছের মানুষদেরই যেখানে সারাজীবনেও চিনে ওঠা যায় না! কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই বুঝবেন, আমরা সবসময় একজনকে বিচার-বিশ্লেষণ করার সময় নিখুঁত মানুষের সন্ধান করি। পাই না, বরং, সব মানুষের মধ্যেই নানারকম দোষত্রুটি খুঁজে পাই। সেই ত্রুটি আবার আমাদের নিজেদের মানদণ্ডে ঠিক করা। অর্থাৎ, আমরা যেটিকে ত্রুটি মনে করি সেটিই ত্রুটি, যদিও অন্যের চোখে আদৌ তা ত্রুটি বলে মনে নাও হতে পারে।

ইচ্ছে করলেই আপনি যে-কোনো মানুষের দোষ-ত্রুটি-খুঁত খুঁজে বের করতে পারেন, কারণ কোনো মানুষই নিখুঁত নয়। কিন্তু সেটি করতে থাকলে একসময় আপনার চোখে শুধু মানুষের খুঁতই চোখে পড়বে, ছোট ভুলকেও বড়ো করে দেখতে থাকবেন, মানুষের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস-ঘৃণা-বিদ্বেষ বাড়তে বাড়তে আপনার মন বিষাক্ত হয়ে যাবে, সেখানে আর কোনো ভালোবাসা-মায়া-মমতা থাকবে না, হবে ঘৃণার চাষবাস। স্বস্তি হারিয়ে যাবে আপনার জীবন থেকে, শান্তিও মিলবে না কোনোদিন।

কারণ আপনার মন ভালো কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। আপনি তা করবেন কি না সেটি সম্পূর্ণই আপনার স্বাধীন ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। খুঁত ধরতে ভালো লাগলে ধরতে থাকুন। কিন্তু আপনি বোধ হয় ভুলে গেছেন যে, আপনি নিজেও নিখুঁত নন, ত্রুটিহীন নন -- আপনি নিজে সেটি বুঝতে পারছেন না, আপনাকে যারা বাইরে থেকে দেখছে তারা ঠিকই বুঝতে পারছে, এবং তারাও একইভাবে আপনার দোষত্রুটি নিয়ে আলাপ করছে!

তাহলে কি নিখুঁত এবং ত্রুটিহীন মানুষ পাওয়া যাবে না? না, পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষ যত বড়োই হোক, এমনকি মহামানবদেরও, দোষত্রুটি থাকে, যদি আপনি ধরতে চান। তাহলে কী করবো আমরা? না, কিছু করার নেই এই সত্য মেনে নেওয়া ছাড়া যে নিখুঁত মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। আসলে সমস্যা আমাদেরই, অন্যদের নয়। আমরা প্রায়ই সচেতনভাবে অথবা নিজের অজান্তেই নিজেদেরকে বিচারকের আসনে বসিয়ে অন্য মানুষের দোষ-ত্রুটি বিচার করতে থাকি এবং বিচারকসুলভ মন্তব্য করি। অথচ দার্শনিকভাবে মানুষের অবস্থান বিচারকের আসনে নয়, বরং আসামীর কাঠগড়ায়।

কারণ, প্রতিটি মানুষের জীবনই ভুল-ত্রুটিতে ভরা। আমরা জেনে অথবা না জেনে প্রচুর ভুল করি, অন্যায়-অবিচার-অপরাধ করি, অনেক সময় বুঝতেও পারি না যে ওগুলো ভুল বা অন্যায়। কিংবা বুঝতে পেরেও সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করি না। অথচ নিজের কথা ভুলে গিয়ে আমরা অন্যের দোষত্রুটি ধরতে সদা তৎপর থাকি। এত খুঁত ধরি বলেই আমরা একসময় ঘৃণা করতে শিখি। এই উপমহাদেশে এমন এক পারিবারিক-সামাজিক-রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতরে আমরা বেড়ে উঠি যে, ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে শ্রেণি-পেশা আর সম্প্রদায়ের বিভাজনটা চিনিয়ে দেয়া হয়। আমরা মানুষকে চেনার আগে তাদের শ্রেণিকে চিনি, পেশাকে চিনি, সম্প্রদায়কে চিনি। ভালোবাসতে শেখার আগে ঘৃণা করতে শিখি।

আমি অন্তত ত্রুটিহীন বিশুদ্ধ মানুষ খুঁজি না। যে যেমন তাকে তেমনভাবেই গ্রহণ করতে চাই। কারণ মানুষের পক্ষে নিখুঁত হওয়া সম্ভব নয়। জেনে বা না-জেনে মানুষ ভুল করে, অন্যায় করে, অপরাধ করে।

সত্যি বলতে কি, মানুষের নিখুঁত হওয়ার দরকারও নেই। কিছু ভুলত্রুটি আর খুঁত নিয়ে যে মানুষ, সে-ই স্বাভাবিক, এবং আমাদের আপন মানুষ। এ প্রসঙ্গে মিথতত্ত্ববিদ জোসেফ ক্যাম্পবেলের একটা কথা মনে পড়ছে -- 'নিখাদ মানুষ মোটেও আকর্ষণীয় নয়। একেবারে বুদ্ধের মতো সে দুনিয়া ত্যাগ করে চলে যায়।... বাচ্চাদের ভালো লাগে কেন আমাদের? ওরা হরদম পড়ছে, উঠছে; আর ওদের ছোট্ট টালমাটাল শরীরে বিশাল মাথা।... সত্যিই, একেবারে নিখুঁত কিছু খুবই একঘেঁয়ে হতো। না হয়ে উপায় কী? অমানবিকও হতো। জরায়ুতে যে স্তরে মানুষ পশু থেকে আলাদা হয়ে যায়, অর্থাৎ আপনি মানবসন্তান হয়ে ওঠেন-- অতিপ্রাকৃত বা অমর কিছু হন না -- সেই স্তরটাই ভালো লাগার মতো। এজন্য  দেখবেন, অনেকে ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারে না। কোনো খাদ নেই এমন কিছুর প্রতি দরদ লাগা সত্যিই খুব কঠিন। আপনি ভীতি অনুভব করতে পারেন, কিন্তু সে তো ভালোবাসা নয়। খ্রিস্টকে কিন্তু ক্রুশে বিদ্ধ অবস্থাতেই ভালোবাসা যায়।'

তাঁর এই ভাষ্য সত্যিই যেন আমাদের অন্তর্চক্ষু খুলে দেয়! আর আমাদের নিখুঁত হওয়ার ইচ্ছে/ লোভ কমে আসে, খুঁত ও ত্রুটিকে মেনে নিয়েই জীবনকে যাপন করার এবং একইসঙ্গে উপভোগ করার সাধ জেগে ওঠে। মনে হয়, এভাবে তো কখনো ভেবে দেখিনি! কী অবাক কান্ড! আমরা যতই নিখুঁত-নিখাদ মানুষের কল্পনা করি না কেন, বস্তুতপক্ষে আমরা ভালোবাসি খুঁতযুক্ত মানুষই। হয়তো নিখুঁত মানুষকে আমাদের নিতান্তই অচেনা আর দুর্ভেদ্য মনে হয়, দূরবর্তী বলে মনে হয়। বরং যাদের খুঁত থাকে, থাকে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি তাদেরকেই আপন মনে হয়। মনে হয় -- এ আমাদেরই মানুষ।

আমি অন্তত ত্রুটিহীন বিশুদ্ধ মানুষ খুঁজি না। যে যেমন তাকে তেমনভাবেই গ্রহণ করতে চাই। কারণ মানুষের পক্ষে নিখুঁত হওয়া সম্ভব নয়। জেনে বা না-জেনে মানুষ ভুল করে, অন্যায় করে, অপরাধ করে। তবে হ্যাঁ, সব মানুষ একরকম নয়। কিছু মানুষ ভুল বা অন্যায় করলেও তা বুঝতে পারে না বা বুঝতে চায় না, এমনকি বুঝেও কেউ কেউ তা স্বীকার করতে চায় না, 'যা করেছি ঠিকই করেছি' -- এইরকম একটা উদ্ধত ভাব নিয়ে তাদের জীবন কাটে। অন্যদিকে কিছু মানুষ নিজের কৃত অন্যায় বা ভুল বুঝতে পারে, বুঝে অনুতপ্ত হয়, অনুতাপের আগুনে পুড়ে শুদ্ধ হবার পথে এগিয়ে যায় এবং পরিশেষে ক্ষমাপ্রার্থী হয়। আমার পক্ষপাত এই দ্বিতীয় ধরনের মানুষের প্রতিই।

আমি প্রায়ই বলি, মানুষের তৈরি যা কিছু সমস্যা-সংকট ত্রুটি-বিচ্যুতি তার সমাধান পাওয়া যাবে প্রকৃতিতে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, প্রকৃতিও নিখুঁত নয়। এর উদাহরণ আমরা নিজেরাই। আমরা যেহেতু প্রকৃতি থেকে বিযুক্ত নই, বরং প্রকৃতিরই অংশ, আমরা নিখুঁত না হলে প্রকৃতিই বা নিখুঁত হয় কী করে? অবশ্য এ প্রসঙ্গে অনেকে প্রকৃতিপ্রদত্ত মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা বা ফ্রি ইউলের কথা বলবেন। মানুষ যেহেতু সেই স্বাধীন ইচ্ছার কারণে প্রাকৃতিক জীবন ত্যাগ করে সভ্যতা নির্মাণ করেছে এবং উপজাত হিসেবে অনেক অসুখবিসুখ নিয়ে এসেছে, প্রচুর ভল-ত্রুটি-অন্যায়-অবিচার করে ফেলেছে. তাই মানুষের খুঁতের দায় প্রকৃতিকে দেওয়া যাবে না। ঠিক আছে, তা না হয় না দিলাম। কিন্তু মানুষ ছেড়ে প্রকৃতির অন্য প্রাণীদের দিকে তাকালে ব্যাপারটা আরো জটিল হয়ে পড়ে। এই যে প্রকৃতিতে এক প্রাণী অন্য প্রাণীকে খাচ্ছে, সাধারণত সবলরা খাচ্ছে দুর্বলদের, এটাকে কীভাবে জাস্টিফাই করা যায়? বলতেই পারেন, বেঁচে থাকার জন্যই তো খাচ্ছে! তা বটে। কিন্তু যাকে খাওয়া হলো তারও তো বাঁচার অধিকার ছিল। একজনের বাঁচার জন্য অন্যজনকে প্রাণ দিতে হচ্ছে কেন? এটা প্রকৃতির খুঁত নয়? প্রকৃতি তো ভিন্ন কোনো ব্যবস্থাও করতে পারতো।

প্রসঙ্গে ক্যাম্পবেল বলেন --  'মিথতত্ত্বের অন্যতম সমস্যা হলো অন্যের জীবন নাশ করে খেয়ে বেঁচে থাকার শর্তের সঙ্গে আপস করা। শুধু শাকসবজি নিরামিশ খান বলে নিজেকে চোখ ঠারবেন না যেন, কারণ উদ্ভিদও জীবন্ত সত্তা। অতএব জীবনের মূল সত্যই হলো জীবন ভক্ষণ করা। জীবনেই জীবন বাঁচে... এই অপরাধ থেকে গড়ে উঠেছে এই নশ্বর পৃথিবী এবং আমরা সবাই এর অংশীদার। ... অন্য প্রাণীদের খেয়েই আমাদের জীবন বাঁচে। খুব শোভনীয়ভাবে পরিবেশিত খাবার গ্রহণের সময় আমাদের অবশ্য সে কথা মনে থাকে না। কিন্তু আসলে তো যা কিছুক্ষণ আগেও তরতাজা জীবন্ত একটা কিছু ছিল, তাকেই তো আপনি খাবার টেবিলে বসে কেটে-ছিঁড়ে খাচ্ছেন, নয় কি?'

মানব-সমাজের নিয়ম-কানুন জীবজগতের অন্যদের বেলায় খাটে না। মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে তার সমাজের-সংস্কৃতির-ধর্মের-রাষ্ট্রীয় আইনের দাসত্ব করে। প্রাণীদের জগতে ওসবের বালাই নেই।

কিন্তু আমরা তো এই অপরাধের অংশীদার হতে চাইনি। আমার ধারণা, অন্য পশুপাখিরাও চায়নি। পুরো ব্যবস্থাটিই প্রকৃতিসৃষ্ট। প্রকৃতিকে তাহলে নিখুঁত বলবো কীভাবে?

তাহলে কি আমরা নিখুঁতের দেখা পাবো না কোথাও? এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তবে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে মনে হয় -- নিখুঁতের ধারণাটিই নিয়েই প্রশ্ন তোলা উচিত। যাকে আমরা নিখুঁত ভাবি, নির্মল ভাবি, নিষ্পাপ এবং নিষ্কলুষ ভাবি, ওগুলো কি আসলেই ওরকম? আমাদের ভেতরে ঠিক-বেঠিক, ভুল-শুদ্ধ, নৈতিক-অনৈতিক, ন্যায়-অন্যায়ের এই ধারণাগুলো কোত্থেকে এলো? যেখান থেকেই আসুক, তা কি সর্বজনসম্মত? এক দেশে যা পাপ, অন্য দেশে তা পূণ্য তা তো আমরা জানিই। এক জাতির গালি অন্য জাতির বুলি তাও জানি। 

উদাহরণ হিসেবে বলি: মানব-সমাজের নিয়ম-কানুন জীবজগতের অন্যদের বেলায় খাটে না। মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে তার সমাজের-সংস্কৃতির-ধর্মের-রাষ্ট্রীয় আইনের দাসত্ব করে। প্রাণীদের জগতে ওসবের বালাই নেই। তারা নিখুঁতভাবে প্রকৃতিপ্রদত্ত জীবনযাপনই করে এসেছে, কখনো বদলাতে চায়নি। ফলে, মানুষের সমাজে সাধারণভাবে বহুগামিতাকে নিন্দনীয়, পাপ, অনৈতিক, এমনকি অপরাধ হিসেবে দেখা হলেও, পশুপাখির জগতে ওটাই রীতি। কোনটাকে তাহলে সঠিক বলবো, কোনটিকে নৈতিক এবং ন্যায়সঙ্গত বলবো? মানুষের জগতে ভুল-শুদ্ধ, ন্যায়-অন্যায়, নৈতিক-অনৈতিক ইত্যাদির ধারণা মানুষেরই তৈরি।

অন্যদিকে বাকি জীবজগতের সবকিছুই প্রকৃতির তৈরি। তাহলে সেগুলোকে অনৈতিক-অসুন্দর বলার অধিকার কি আমাদের আছে? আমরা সবাই তো প্রকৃতিরই সন্তান। তাহলে এই পার্থক্যগুলো তৈরি করা হলো কেন? দেশে-দেশে, জাতিতে-জাতিতে- ধর্মে-ধর্মে, মানুষে-মানুষে এই পার্থক্যগুলো আমাদের কী বলতে চায়? এইসব বিভিন্নতা বলতে কি চায়, জগত বৈচিত্র্যময়, কারো মনের মতো হওয়ার দায় তার নেই, সে তার নিজের মতো আর এই বৈচিত্র্যের ভেতরেই আছে নিখুঁতের সন্ধান?

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

51m ago