পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করবে: বিএসপিপি

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করবে: বিএসপিপি

সাংবাদিকতা নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) বলেছে, এই বিবৃতি স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ওপর প্রচ্ছন্ন হুমকি এবং দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা।

আজ সোমবার বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরীর সই করা এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সংগঠনটির নেতারা বলেন, কেবলমাত্র পুলিশি রাষ্ট্রেই সাংবাদিকদের এমন হুমকি দিতে দেখা যায়। এ কথা বলতে আজ দ্বিধা নেই যে, পুলিশের ওপর ভর করে বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের কারণে পুলিশের ঔদ্ধত্য এতই বেড়েছে যে, তারা আজ ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি এটাই প্রমাণ করে 'দেশ ক্রমেই পুলিশি রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে'।

তারা পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবি জানান।

বিএসপিপির বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ গড়ার পরপর কয়েকটি সংবাদ প্রকাশে ক্ষুব্ধ হয় পুলিশ ক্যাডার সার্ভিসের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তারা গণমাধ্যমকে 'সতর্ক' করে যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে সাংবাদিকদের জন্য প্রচ্ছন্ন হুমকিও রয়েছে, যা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত।

আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বিবৃতির একদিন পরই গণমাধ্যম যাতে পুলিশের খবর প্রকাশের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়! চিঠিতে বলা হয়েছে, 'পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এ ধরনের খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহের অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।' স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা দেখে মনে হচ্ছে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে গণমাধ্যম মহাঅপরাধ করে ফেলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন চিঠি এটাই প্রমাণ করে রাষ্ট্র দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিতে যাচ্ছে, বলা হয় বিএসপিপির বিবৃতিতে।

এতে আরও বলা হয়, আমরা পত্রিকায় দেখলাম, পুলিশের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে তা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সদর দপ্তরের অনুমতি নেওয়ার বিধান চান পুলিশ কর্মকর্তারা। শিগগির সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পুলিশ এই দাবি জানাবে। আমরা মনে করি, এ ধরনের উদ্যোগ দুর্নীতিকে আরও বেশি উৎসাহিত করবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) 'সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপে বারবার দুর্নীতিতে শীর্ষে রয়েছে পুলিশ—উল্লেখ করে বলা হয়, টিআইবির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পুলিশের কাছে সেবা নিতে গিয়ে ৭২ দশমিক পাঁচ শতাংশ খানা দুর্নীতি-অনিয়মের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গ্রেপ্তার, ট্রাফিক সংক্রান্ত বিষয়, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন, মামলা দায়ের, চার্জশিট এমনকি জিডি করতে গিয়েও ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

এটি পুলিশ বাহিনীকে লজ্জিত না করলেও আমরা লজ্জা পাই—উল্লেখ করা হয় বিএসপিপির বিবৃতিতে।

পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও জনগণের সেবক কিন্তু এখন তারা সেটি ভুলে গেছে। পুলিশের কাজ হচ্ছে 'দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন'। রাষ্ট্রের সফলতার অন্যতম নিয়ামক হলো, দুষ্টকে দমন করে শিষ্টকে পালন করে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এবং সমৃদ্ধ করা। উন্নত বিশ্বে এই নীতি এখনো চর্চায় থাকলেও বাংলাদেশে এই নীতিকথার চর্চা তো হচ্ছেই না, বরং হচ্ছে তার উল্টো।

সংগঠনটির নেতারা বলেন, আমরা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সাংবাদিকদের পেছনে না লেগে, সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দেশ রক্ষার কাজে ছড়িয়ে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

6h ago