প্রকৌশলী আকবর ও বিপ্লবের মুক্তি দাবি পেশাজীবী পরিষদের
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব ও জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম-আহবায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর মোল্লাকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
আজ শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে পেশাজীবী পরিষদ এ দাবি জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মো. বিপ্লবুজ্জামানকে বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভা শেষে বাসায় ফেরার পথে শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রকৌশলী আলী আকবর মোল্লাকে আজ সকালে টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও সদস্যসচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, 'একের পর এক পেশাজীবী নেতাদের গ্রেপ্তার করে পেশাজীবীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।'
বিবৃতিতে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, গণতন্ত্রের পোশাকে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে চলেছে সরকার। মানুষের কথা বলার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে, ব্যবহার করা হচ্ছে ভিন্নমত দমনে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তারা সব নাগরিকের জান, মাল ও সম্মানসহ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
'বর্তমান সরকারের আমলে পেশাজীবীরা ন্যূনতম সম্মান ও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না' উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'ইঞ্জিনিয়ার আকবর ও বিপ্লবই নয়, ইতোমধ্যে অন্তত আরও ৩৫ জন পেশাজীবীকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন ৮০ বছর বয়সী আইনজীবী সৈয়দ আজহারুল কবির ও ব্যারিস্টার সৈয়দ ইজাজ কবির, কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক শামসুল হুদা লিটন, চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মইনুল হোসেন সাদিক ও অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, গাইনোকোলজিস্ট ডা. ফাতেমা সিদ্দিকী, ডা. আতিকুল ইসলাম, দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জাহিদুল কবির জাহিদ, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যক্ষ জাকির হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ হোসাইন, সুপ্রিম কোর্ট বারের অ্যাডভোকেট মনজুরুল আলম সুজন, অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হাসান মিলন, অ্যাডভোকেট জুয়েল মুন্সি সুমন প্রমুখ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম একই হাতকড়ায় দুই আইনজীবীকে আদালতে নেওয়া হলো। সম্পর্কে তারা পিতা-পুত্র। একজন প্রায় আশি বছর বয়সী বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ আজহারুল কবির। প্রবীণ এ আইনজীবীকে জামিন তো দেওয়া হয়নি, উল্টো রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ভিন্নমতের কারণে পিতার সঙ্গে ব্যারিস্টার সৈয়দ ইজাজ কবিরকেও গ্রেপ্তারের পর দুই মামলায় ৬ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।'
বিবৃতিতে পেশাজীবী দুই নেতা বলেন, 'এভাবে পেশাজীবীদের বিনা অভিযোগে এবং বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়ার মাধ্যমে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। পেশাজীবীরা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বিরোধীমতের হাজারো নেতাকর্মী আজ ঘর ছেড়ে, বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের অনেকের বন-জঙ্গলে দিনাতিপাত করার খবর আমরা গণমাধ্যমে পেয়েছি।'
'সরকার দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে' উল্লেখ করে তারা বলেন, 'এভাবে পেশাজীবীদের হেনস্থা অব্যাহত থাকলে দেশের কৃতি ও মেধাবী সন্তানরা দেশে থাকতে চাইবে না। তাই আমরা পেশাজীবীসহ ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ, দেশে গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, বিচারালয়ের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।'
Comments