আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: আড়াই লাখ মানুষের সেবায় মাত্র ৩ চিকিৎসক

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ট্রমা সেন্টার। ছবি: স্টার

চিকিৎসক সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকের মোট ৩১টি পদ আছে। এর বিপরীতে আছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও দুজন মেডিকেল অফিসারসহ তিনজন চিকিৎসক। ২৮টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকায় উপজেলায় আড়াই লাখ মানুষের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

চিকিৎসক ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিসংখ্যানবিদ, ক্যাশিয়ার, স্টোর কিপারসহ দ্বিতীয় শ্রেণির ৯০টি পদের মধ্যে ৬০টি এবং ওয়ার্ডবয়, আয়া, মালি, বাবুর্চি, নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকার্মীসহ তৃতীয় শ্রেণির ৩৩ পদের মধ্যে ১৯টি পদ প্রায় তিন বছর ধরে খালি রয়েছে। এতে হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমই ব্যাহত হচ্ছে।

চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ডা. ফায়জুর রহমান আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করলেও পরদিন থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এর কারণ জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ তাকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ তার বেতন-ভাতা বন্ধ রেখেছে। এ বিষয়ে জানতে ফোন দেওয়া হলেও মন্তব্য করতে রাজি হননি ডা. ফায়জুর রহমান।

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে দাপ্তরিক কাজের জন্য সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়। এ অবস্থায় দুজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে ৫০ শয্যা এই হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগ পরিচালনা করা কষ্টকর। চলমান অবস্থায় এখানে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। তাদেরকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা ৭৫ কিলোমিটার দূরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। নদী পার হতে হয় বলে রোগীরা ১৫ কিলোমিটার দূরের বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যেতে আগ্রহী নন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাব্বি মঙ্গলবার সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা না পেয়ে পরে তিনি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান।

উপজেলার হলদিয়া গ্রামের রুশিয়া নামের ষাটোর্ধ্ব এক রোগী জানান, কিছুদিন ধরে শরীরে চুলকানি দেখা দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। কিন্তু গিয়ে শোনেন চিকিৎসক নেই।

'আমরা গরিব মানুষ। টাকা খরচ করে অন্য কোথাও যাওয়ার অবস্থাও নাই', বলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মাত্র তিনজন চিকিৎসক আছে। এখানে চিকিৎসক পদায়ন হলে এ সংকট থাকবে না।'

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে এবং জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক চাওয়া হয়েছে। দূরের চিকিৎসকদের এ অঞ্চলে পদায়ন করলে তারা এখানে থাকতে চান না। তাই এ অঞ্চলের চিকিৎসকদের পদায়ন করলে এ অচলাবস্থা দূর হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

No place for Islamic extremism in Bangladesh: Yunus

Islamic extremism will never find a place in Bangladesh again, said Chief Adviser Muhammad Yunus recently

34m ago