৩০ বছরের পর কেমন হবে খাদ্যাভ্যাস

৩০ বছরের পর খাদ্যাভ্যাস
ছবি: সংগৃহীত

সুস্বাস্থ্যই সুখের মূল। শরীর সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকে, কাজেও মনোযোগ থাকে এবং সহজভাবে কাজ করা সম্ভব হয়। তাই শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আর বয়স যদি হয় ৩০ এর ঘরে, তখন শরীরের যত্ন আরও বেশি প্রয়োজন।

কারণ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কোষের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এ সময়ে বিভিন্ন রোগ শরীরের বাসা বাঁধার সুযোগ পেয়ে যায়। এ ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের একটি বড় অংশ সঠিক খাদ্যাভাস।

৩০ বছর বয়সের পর খাদ্যাভাস কেমন হওয়া উচিত এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরীন শম্পা।

তিনি বলেন, আমাদের অনেকের ধারণা মানুষ বৃদ্ধ হলে অসুস্থ হয়। কিন্তু যেকোনো বয়সেই শরীর জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বয়স ৩০ হলে এ ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। সঠিক খাদ্যাভাসের মাধ্যমে শরীরকে ফিট রেখে এ ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। সুস্থ থাকতে কিছু কিছু খাবার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে, আবার কিছু খাবার পরিহার বা কম করে খেতে হবে।

যে ধরনের খাবার খেতে হবে

শর্করা

দৈনন্দিন শর্করার চাহিদা পূরণ করার জন্য হোল গ্রেইন জাতীয় খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন লাল চাল, লাল আটার রুটি, ওটস, মোটা চাল ইত্যাদি। মিনিকেট চাল, সাদা আটা ইত্যাদি রিফাইন করা দ্রব্য পরিহার করার চেষ্টা বরতে হবে। হোল গ্রেইন জাতীয় খাবারে পুষ্টি উপাদান পরিশোধন করা খাবারের চেয়ে বেশি থাকে। এই পুষ্টি উপাদান শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

প্রোটিন

দেহ গঠন, ক্ষয়পূরণে প্রোটিনের ভূমিকা ব্যাপক। ৩০ এর পর যেহেতু কোষের কর্মক্ষমতা কমে যায় তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। নিয়মিত একটি করে ডিম খেতে হবে। বড় মাছ, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, মুরগির মাংস, কলিজা ইত্যাদি যেকোনো একটি বা দুটি খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে কি না।

রেডমিট  নিয়মিত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রেডমিট ১৫-২০ দিন পর একদিন খাওয়া ভালো এবং চর্বিযুক্ত মাংস না খাওয়াই ভালো। প্রাণিজ প্রোটিনের পাশাপাশি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনও গ্রহণ করতে হবে। ডাল, বিভিন্ন বীজ, পালং শাক ইত্যাদিতে প্রোটিন রয়েছে। তবে মাছ, মাংস যেকোনো খাবার রান্নার ক্ষেত্রে তেল, মসলা ব্যবহারের পরিমাণ কমাতে হবে। কম তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

দুধের তৈরি খাবার

দুধ একটি আদর্শ খাদ্য। সব বয়সের মানুষেরই প্রতিদিন দুধ খাওয়া উচিত। বয়স বাড়তে থাকলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। হাড় দুর্বল হতে থাকে, শরীরে ক্লান্তিভাব হয়। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিদিন দুধ, টক দই বা দুধের তৈরি খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

তবে দুধের তৈরি খাবারে চিনি দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে চিনির বিকল্প উপাদান ব্যবহার করতে হবে। দুগ্ধজাতীয় খাবার শুধু ক্যালসিয়ামের ঘাটতিই পূরণ করে না, অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের চাহিদাও পূরণ করতে সক্ষম।

ভিটামিন ও মিনারেলসসমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন ও মিনারেলস খুবই অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও দেহের জন্য অত্যাবশ্যক। ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ না হলে শরীর সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ভিটামিন ও মিনারেলসের ভালো উৎস শাকসবজি ও ফলমূল।

সবুজ শাকসবজি প্রতিদিন অবশ্যই খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। মাটির নিচে জন্মে এমন সবজি যেমন আলু, গাজর, মিষ্টি আলু, শালগম ইত্যাদি একটু কম খেতে হবে। কাঁচা খাওয়া যায়, এমন শাকসবজির সালাদ খাওয়া অনেক উপকারী।

প্রতিদিন যেকোনো একটি ফল খাওয়ার চেষ্টা  করতে হবে। বিশেষ করে মৌসুমি ফল যেমন আম, জাম, লিচু ইত্যাদি খেতে হবে। তবে মিষ্টি জাতীয় ফলগুলো কম খাওয়াই ভালো। টক জাতীয় ফল বেশি করে খেতে হবে। ফলের রস খাওয়ার চেয়ে আস্ত ফল খাওয়া বেশি ভালো।

এ ছাড়া ড্রাইফ্রুটস যেমন বাদাম, খেজুর, আখরোট, কিশমিশ ইত্যাদি অল্প পরিমাণে প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে ভালো। এগুলো থেকে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস পাওয়া যায়।

এসব খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম দিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। এ ছাড়া জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড, সফট ড্রিঙ্কস, ধূমপান, অ্যালকোহলের অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

17m ago