হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা বেড়ে ৩১১
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দক্ষিণ গাজার রাফায় ৪০ দিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানে ২২জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। যার ফলে মোট নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা বেড়ে ৩১১ হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।
মূলত আইডিফের ১৬২তম ডিভিশন রাফা অভিযানে অংশ নিচ্ছে। শনিবার এক দিনে সর্বোচ্চ আট ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারান। আইডিএফের একটি সাঁজোয়া যান হামাসের হামলায় বিস্ফোরিত হলে তারা নিহত হন।
সোমবার রাফার উত্তর-পশ্চিমের তেল সুলতান মহল্লায় ৪০১তম আর্মার্ড ব্রিগেডের সেনারা হামাসের সঙ্গে সম্মুখ লড়াই করেন।
আইডিএফ জানিয়েছে, একই জায়গায় হামাসের একটি অস্ত্রের গুদাম ছিল। সেখান থেকে সেনাদের উদ্দেশে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে হামাস। পরবর্তীতে এই গুদাম ধ্বংস করা হয়।
রাফায় অভিযান শুরুর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছিলেন, রাফায় হামাসের চারটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। রাফায় হামাসের সামরিক উপস্থিতি নির্মূল না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি 'যুদ্ধ-লক্ষ্যমাত্রা' পূরণ হবে না বলেও জানান তিনি।
গতকাল সোমবার আইডিএফ জানিয়েছে, ইয়াবনা (দক্ষিণ) ও পূর্ব রাফা নামের দুই ব্যাটালিয়ন পুরোপুরি নির্মূল করা হয়েছে।
শাবৌরা (উত্তর) ও তেল সুলতান (পশ্চিম) নামের অপর দুই ব্যাটালিয়নের সক্ষমতাও আইডিএফের নিরবচ্ছিন্ন অভিযানের কারণে উল্লেখযোগ্য আকারে কমে গেছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা রাফায় হামাসের সামরিক শক্তির অর্ধেকেরও বেশি ধ্বংস করেছে। অন্তত ৫৫০ জন যোদ্ধাকে হত্যা ও ২৫টি দীর্ঘ সুড়ঙ্গ আবিষ্কার ও অকেজো করার দাবি করেছে আইডিএফ।
আইডিএফের ১৬২তম ডিভিশন রাফায় প্রায় ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে অভিযান চালাচ্ছে। প্রথমে মে মাসে তারা শহরে পূর্ব প্রান্ত ও মিশর-গাজার সীমান্তের রাফা ক্রসিংয়ের দখল নেয়।
প্রায় ১০ দিন পর, অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়ে সেনা ডিভিশনটি 'ব্রাজিল' নামে পরিচিত মহল্লার দখল নেয়।
অভিযানের তৃতীয় পর্যায়ে তারা মিশর-গাজা সীমান্তের পুরো অংশের দখল নেয়, যা ফিলাডেলফি করিডর নামে পরিচিত। এরপর তারা উত্তর-পূর্বের তেল সুলতান মহল্লার দিকে আগাতে শুরু করে।
আইডিএফ জানিয়েছে, তারা অন্তত ৫৫০জন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। যুদ্ধের পর মরদেহ শনাক্ত করে এই সংখ্যাটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার দাবি করেছে আইডিএফ।
আইডিএফের দাবি, 'আরও অনেক জঙ্গি সদস্য ভবন ও সুড়ঙ্গের ভেতর নিহত হয়েছেন, কিন্তু তাদের সংখ্যা অজানা। এ ছাড়া, ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর অনেক হামাস যোদ্ধা রাফা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।'
আইডিএফ জানিয়েছে, ফিলাডেলফি করিডরে তারা শত শত রকেট চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলের দিকে তাক করে রাখা ছিল। এ ছাড়া, সীমান্ত এলাকায় ২০০টি সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ আবিষ্কারেরও দাবি করেছে ইসরায়েল। এসব সুড়ঙ্গপথ দিয়ে ভূগর্ভের অনেক রুট সম্পর্কে জানতে পেরেছে আইডিএফ।
মিশর পৌঁছানোর জন্য প্রায় ২৫টি দীর্ঘ সুড়ঙ্গ চিহ্নিত করার দাবি করেছে। কয়েকটি পথ সিনাই পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই পথে অবৈধ অস্ত্র আনানেওয়া করে হামাস—এমন দাবি করেছে আইডিএফ। তারা এসব সুড়ঙ্গপথে তদন্ত চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
২০২৩ এর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন ও হামাসের হাতে জিম্মি হয় প্রায় ২৫১ জন। এ ঘটনার পর গাজার ওপর নির্বিচার পাল্টা হামলা শুরুর পাশাপাশি সেখানে সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল।
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে ধীরে ধীরে কিছু পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। এ মুহূর্তে গাজায় যতটুকু ত্রাণ প্রবেশ করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
গত ৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা অন্তত ৩৭ হাজার ২৯৬। আহতের সংখ্যা অন্তত ৮৫ হাজার ১৯৭। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হামাসের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩১১ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।
সম্প্রতি গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর পথে প্রতিদিন ১১ ঘণ্টা 'কৌশলগত' যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ। তবে এখনো এই উদ্যোগের সুফল নিতে পারেনি জাতিসংঘের ত্রাণ সমন্বয়কারী সংস্থা, এমন দাবি করেছে ইসরায়েল।
অপরদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন মধ্যস্থতাকারীরা।
Comments