‘ফিলিস্তিনিদের কোনো ঈদ নেই, ঈদের পরিবেশও নেই’

গাজা সিটির ঐতিহাসিক ওমারি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করছেন মুসুল্লিরা। ছবি: এএফপি
গাজা সিটির ঐতিহাসিক ওমারি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করছেন মুসুল্লিরা। ছবি: এএফপি

আট মাসের ভয়াবহ যুদ্ধের পর গাজার মুসলিমরা দু:খ দুর্দশার মাঝে আজ রোববার ঈদুল আজহা পালন করছেন। ফিলিস্তিনিদের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে।

আজ রোববার বার্তা সংস্থা এএফপি ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গরু, ভেড়া, খাসি বা অন্য কোনো গবাদি পশু কোরবানি দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা এই দিনটি পালন করেন। ধনী-গরীব সবাই একে অপরের সঙ্গে কোরবানির মাংস ভাগ করে এই দিনটি উদযাপন করেন।

টানা আট মাস ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ও গণহত্যার মধ্য দিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের জন্য এবারের ঈদে আনন্দের তেমন কোনো উপলক্ষ নেই।

সমগ্র ফিলিস্তিনি অঞ্চলের বাসিন্দারা ক্ষুধার্ত ও দুর্ভিক্ষপীড়িত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ইসরায়েলিরা এ অঞ্চলে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী প্রবেশে বড় ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।   

অনেক ফিলিস্তিনি ঈদ উদযাপন করতেও আগ্রহ বোধ করছেন না।

গাজার বেইত আল লাহিয়া এলাকায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: এএফপি
গাজার বেইত আল লাহিয়া এলাকায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় বালুভর্তি একখণ্ড জমিতে তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করছেন জাইনা কামুনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। তিনি বলেন, 'আমাদের (ফিলিস্তিনিদের) কোনো ঈদ নেই। ঈদের পরিবেশও নেই।'

'আমি গত পাঁচ মাসে কোনো মাংস খাইনি', বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'এই দিনটি অন্য যেকোনো দিনের মতোই একটি দিন হবে। ঈদ-উল-ফিতরও এভাবেই গেছে।'

তীব্র তাপের মাঝে তাঁবু খাটিয়ে, কোনো মতে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে এবং বোমাহামলায় বিধ্বস্ত মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করে ঈদ পালনের চেষ্টা করছেন গাজাবাসীরা।

দক্ষিণ গাজার রাফা থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন মালাকিয়া সালমান (৫৭)। আপাতত এই নারী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের একটি তাঁবুতে বাস করছেন।

তিনি বলেন, 'আমাদের কোনো আনন্দ নেই। আমাদের কাছ থেকে সব আনন্দ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।'

গাজা উপত্যকার ২৪ লাখ মানুষের বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের অনেকের জন্য ঈদ আনন্দ নয়, বরং দু:খের দিন।

সালমান বলেন, 'আমি আশা করব বিশ্ববাসী আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই যুদ্ধ অবসানের জন্য চাপ দেবেন। কারণ আমরা প্রকৃত অর্থে মৃত্যুর কাছাকাছি রয়েছি এবং প্রতিনিয়তই আমাদের শিশুদের মনোবল ভেঙে পড়ছে।'

গাজা সিটির ঐতিহাসিক ওমারি মসজিদের প্রাঙ্গণে আজ ঈদের দিন সকালে ফিলিস্তিনি মুসুল্লিরা নামাজের জন্য জমায়েত হন। মসজিদটি ইসরায়েলি বোমাহামলায় বড় আকারে ক্ষতির শিকার হয়েছে। ভাঙা পাথরের সামনেই জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন মুসুল্লিরা।

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আল-রাহমা মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করছেন মুসুল্লিরা। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আল-রাহমা মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করছেন মুসুল্লিরা। ছবি: রয়টার্স

গাজা সিটির বাসিন্দা হাইথাম আল-গুরা (৩০) বলেন, 'আজ সকাল থেকে কোনো গোলাগুলি বা বোমার শব্দ পাচ্ছি না। বিচিত্র এক ধরনের নীরবতা। এটা খুবই বিচিত্র।'

তিনি আশা প্রকাশ করেন, সাময়িক এই বিরতি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রূপ নেবে।

উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে উম মুহাম্মাদ আল-কাতরি এএফপিকে বলেন, 'আমরা অনেক মানুষ হারিয়েছি। অনেক কিছু ধ্বংস হয়েছে।'

'এই ঈদ পুরোপুরি ভিন্ন। অনেক গাজাবাসীকে তাদের প্রিয়জন ছাড়া ঈদের ছুটি উপভোগ করতে হবে, কারণ তারা মারা গেছেন অথবা গাজার অপর প্রান্তে আছেন', যোগ করেন তিনি। 

রোববার স্থায়ী ও অস্থায়ী কবরস্থানে ভিড় করেছেন ফিলিস্তিনিরা।

খলিল দিয়াব এসবিয়াহ তার দুই সন্তানের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, 'এখানে আসলে শান্তি পাই।'

রাফা থেকে খান ইউনিসে পালিয়ে এসেছে হানা আবু জাযার (১১)। এই শিশুটি এএফপির সংবাদদাতাকে জানায়, 'ইসরায়েলিরা শিশু, নারী ও বয়স্কদের হত্যা করছে। আমরা কীভাবে উদযাপন করব?'

অপরদিকে, আল-আকসা মসজিদে ৪০ হাজার মুসলিম ঈদের নামাজ পড়েছেন।

ফিলিস্তিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াফার বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী মসজিদের পথে রওনা হওয়া ও মসজিদ থেকে বের হয়ে আসার সময় মুসুল্লিদের ওপর হামলা চালায়।

গাজার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। 

২০২৩ সালে প্রায় এক লাখ মুসুল্লি এই মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

গত বছর হঠাত করেই ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদ কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়েছিল। তারা সে সময় মুসুল্লিদের তাড়িয়ে দেয় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলার নিদর্শন। ছবি: এএফপি
নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলার নিদর্শন। ছবি: এএফপি

২০২৩ এর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এতে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন ও হামাসের হাতে জিম্মি হয় প্রায় ২৫১ জন। এ ঘটনার পর গাজার ওপর নির্বিচার পাল্টা হামলা শুরুর পাশাপাশি সেখানে সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল।

পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে ধীরে ধীরে কিছু পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। এ মুহূর্তে গাজায় যতটুকু ত্রাণ প্রবেশ করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। 

গত ৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা অন্তত ৩৭ হাজার ২৯৬। আহতের সংখ্যা অন্তত ৮৪ হাজার ৮৩২। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘ বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ফিলিস্তিনিরা।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে জানায়, 'মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকায় গাজার মানুষ চরম পর্যায়ের ক্ষুধার মুখোমুখি হচ্ছে।'

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় ত্রাণ প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটের আশেপাশে প্রতিদিন ১১ ঘণ্টা করে যুদ্ধ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

তবে এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

14h ago