আরও বাড়ছে করের বোঝা, আরও দুঃসহ হতে পারে জীবনযাপন

বাড়ছে করের বোঝা

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটে নতুন করে কর আরোপের যেসব প্রস্তাব এসেছে, তাতে জনসাধারণের জীবন আরও দুঃসহ হয়ে উঠতে পারে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর পেশ করা বাজেটে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্কের প্রস্তাবনায় এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ধরা যাক কোনো নবদম্পতি মাত্র ৪৪ হাজার টাকা মাসিক আয় দিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করেছেন।

নতুন বাজেটে করমুক্ত ন্যূনতম আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকায় দুই সদস্যের এই পরিবারের উপার্জনকারীকে আয়কর দিতে হবে, যার ফলে যত টাকা আয় করছেন তার সবটা পরিবারের জন্য ব্যয় করতে পারবেন না।

এই দম্পতি একটি রেফ্রিজারেটর কিনতে গেলে দাম চলতি অর্থবছরের চেয়ে বেশি পড়বে।

বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী, মোবাইল ফোনে প্রতিবার ১০০ টাকা রিচার্জে উচ্চ কর আদায় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে ফোন কল ও ডেটা ব্যবহারের খরচ বেড়ে যাবে। শুধু এই দম্পতি নন, দেশের সবার জন্য মোবাইল ফোন বিল বাবদ খরচ বেড়ে যাবে।

এসব উচ্চ করের বোঝা এমন সময়ে চাপানো হচ্ছে, যখন মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব থেকে বাঁচতে প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছে মানুষ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক ৮৯ শতাংশ, এক মাস আগেই তা ছিল নয় দশমিক ৭৪ শতাংশ।

তবে ব্যক্তিপর্যায়ে কিছু ভালো দিক রয়েছে এবারের বাজেটে। যেমন: ন্যূনতম কর হার বাড়েনি। ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত ন্যূনতম কর পাঁচ হাজার টাকা। অন্যান্য শহরের জন্য তা চার হাজার টাকা।

সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকার বাসিন্দাদের কর তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বার্ষিক ১১ থেকে সাড়ে ২১ লাখ টাকার মধ্যে যাদের আয়, তাদের জন্য কিছু সুখবর আছে।

চার বছর পর এবার উচ্চ আয়ের উপার্জনকারীদের ওপর ৩০ শতাংশ কর পুনর্বহাল করতে চায় এনবিআর।

বার্ষিক ৪৩ লাখ টাকার বেশি আয় হলে ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। যদিও, ধনীদের সম্পদের ওপর নতুন করে কোনো অতিরিক্ত সারচার্জ চাপানো হয়নি।

জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ থাকলেও আছে সুখবর। কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে সম্পদের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না সরকারি কোনো সংস্থা। এ ক্ষেত্রে শুধু নগদ বিনিয়োগ, ব্যাংক আমানত, আর্থিক সিকিউরিটিজ বা অন্য যেকোনো বিনিয়োগের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।

এ ছাড়াও, কালো টাকা সাদা করতে জমি, ভবন, ফ্ল্যাট বা বাণিজ্যিক স্পেসের ওপর নির্দিষ্ট হারে ট্যাক্স গুনতে হবে। এরকম অবৈধ আয়কে বৈধ করার সুযোগ জনগণকে নিরুৎসাহিত করবে।

ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন ছাড়া করপোরেট করদাতাদের জন্য নতুন কোনো সুবিধা নেই।

কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করলে এবং প্রতিটি লেনদেন পাঁচ লাখ টাকার বেশি হলে তাদের করপোরেট কর কমবে। বার্ষিক লেনদেন ৩৬ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেলে ব্যাংক লেনদেন বাধ্যতামূলক৷

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো করহার কমানোর দাবি জানালেও তা হচ্ছে না। এদিকে এনবিআর চায় ক্যাশলেস লেনদেন এবং আরও কর আদায়।

দেশের অর্থনীতির অর্ধেক এখনো নিয়ন্ত্রণ করে অনানুষ্ঠানিক খাত। হোটেল, রেস্তোরাঁ, মোটেল, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নেওয়া ও নবায়নের জন্য ট্যাক্স রিটার্নের প্রমাণ জমা বাধ্যতামূলক করতে চায় এনবিআর। এটি জমা না দিলে ২০ হাজার টাকার বেশি জরিমানা হতে পারে।

ব্যক্তিগত ও করপোরেট করদাতাদের একটি সুসংবাদ হলো নতুন করহার দুই বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।

বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কর ব্যবস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো এবং স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ উত্সাহিত করতে প্রস্তাবিত করহার বছরের পর বছর ধরে রাখতে চায় এনবিআর।

এটিকে সম্ভাব্য কর (প্রসপেকটিভ ট্যাক্স) উল্লেখ করে বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এই কর ব্যবস্থার ফলে করদাতারা যথাযথ কর পরিকল্পনা নিতে পারবেন যা কর পরিপালন বাড়াতে সহায়তা করবে এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে ও ঋণের ওপর সরকারের নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।

এদিকে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও পেনশন তহবিল থেকে আয়ের ওপর ২৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ করের হার ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বর্তমানে ১৫ শতাংশ।

সমবায়ের আয়ের ওপর ২০ শতাংশ করের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মাধ্যমে চার দশমিক ৮০ লাখ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

এ লক্ষ্য অর্জনে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের মতো পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করবে এনবিআর।

যদিও, সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যের ঝুঁকির বিপরীতে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

কিন্তু কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনোদন পার্কের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে যা চলতি অর্থবছরের দ্বিগুণ।

কোনো নতুন দম্পতি ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে প্যাকেজ টুরে যেতে চাইলে তাদের খরচ আগের চেয়ে বেড়ে যাবে কারণ অপারেটরদের সেবার ওপর ভ্যাট ছাড় শেষ হচ্ছে এবং তাদের এখন থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট গুনতে হবে। এই দম্পতিকে মেট্রোরেলে ঘুরতেও বাড়তি খরচ করতে হবে, কারণ এনবিআর মেট্রোর টিকিটের মূল্যের ওপর ভ্যাট ছাড় দিতে চায় না আর।

Comments

The Daily Star  | English

Leading univs withdrawing from cluster system

Undergraduate admission tests under the cluster system faces uncertainty for the 2024-25 academic year, as several prominent universities have decided to withdraw and conduct their own admission tests independently. 

8h ago