কঠিন সময়ের আঁটসাঁট বাজেট

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আগামীকাল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বাজেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'আসন্ন বাজেট খুবই টাইট হবে।'

গত পাঁচ বছরে প্রতি বছর বাজেট বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ১১ শতাংশ। আগামী বাজেট চলতি বছরের তুলনায় মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি হতে পারে।

চলতি অর্থবছরের বাজেট আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

এমনকি মহামারি চলাকালীনও আগের বছরের চেয়ে বাজেট বেড়েছিল প্রায় ৯ শতাংশ।

দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই প্রথমবারের মতো বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেটের আকার প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ানো সম্ভব নয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, চলমান সংকটের তিনটি দিক রয়েছে—উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট এবং আর্থিক সংকট।

তিনি বলেন, 'অর্থমন্ত্রীর পক্ষে রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন, কিন্তু অর্থনীতির জন্য এটা প্রয়োজন। গত নির্বাচনে যারা সরকারের পাশে ছিলেন, তারা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করবেন।'

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, 'অর্থমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক চাহিদা এবং বড় খেলোয়াড়দের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।'

'বাজেটের সাফল্য কেবলমাত্র এই ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করবে,' যোগ করেন তিনি।

সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম বাজেট পেশ করেছিলেন। তার সেই বাজেট ছিল আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

২০১৩-১৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি বাজেট পেশ করেছিলেন।

গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ডলার সংকটের সমাধান করা।

তাদের ভাষ্য, সরকার চায় মাঝারি আকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি।

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের বেশি ছিল। কিন্তু, আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

সরকার মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে—৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ, গত বছরের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ৯ শতাংশের বেশি।

আসন্ন বাজেটে সরকার বাজেট ঘাটতি ধরতে পারে জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, যা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল এক দশক আগে। এবার বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা।

এই ঘাটতি মেটাতে সরকারের বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই খাত থেকে ১ লাখ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি মেটানো হতে পারে। বাকি ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি মেটানো হবে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে।

কর্মকর্তাদের মতে, আগামী অর্থবছরে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ চলতি অর্থবছরের মতোই হবে। এ বছর ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, এমন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার কম হওয়া উচিত। 'তাহলে সেটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমানোর জন্য ভালো হবে। এ ছাড়া, বেসরকারি খাতও পর্যাপ্ত ঋণ পাবে।'

সরকার প্রথমবারের মতো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে নিজস্ব অর্থায়ন কমাতে যাচ্ছে।

আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ ব্যয় হবে সুদ পরিশোধে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা, ভর্তুকি ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও পেনশন ১ লাখ কোটি টাকা।

রাজস্ব সংগ্রহে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে সরকার, যা আগের বছরের তুলনায় আট শতাংশ বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

এবারের বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত সম্পদের বৈধতা নেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago