স্বাভাবিক হয়ে আসছে কিরগিজস্তানের পরিস্থিতি, নিরাপদে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

কিরগিজস্তানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনরত ডা. জেরিত ইসলাম। ইনসেটে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর কিরগিজস্তানের স্থানীয়দের হামলার একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। ছবি: সংগৃহীত

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা নিরাপদে আছেন। ওই এলাকা পুলিশি নিরাপত্তায় আছে এবং প্রায় ২-৩ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আতঙ্কের কিছু নেই।

আজ রোববার দুপুর ২টার দিকে বিশকেকের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানান দেশটিতে এমবিবিএস শেষ করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনরত ডা. জেরিত ইসলাম।

ডা. জেরিত জানান, বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শিক্ষকরাও স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন।

দেশটিতে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ডা. জেরিত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের হোস্টেল থেকে বের হতে দিচ্ছি না। তবে আনুষঙ্গিক কেনাকাটার জন্য তাদের বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত।'

তিনি জানান, কিরগিজস্তানের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের সবাই মেডিকেল শিক্ষার্থী।

ডা. জেরিত বলেন, 'এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে হোস্টেলে থাকতে হয়। তৃতীয় বর্ষে ওঠার পর কেউ চাইলে বাইরে চলে যেতে পারেন। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বর্তমানে তাদের হোস্টেলে অবস্থান করছেন। অন্যরা বাইরের বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন।'

হামলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'হোস্টেলে মিশরীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সমস্যা হয়। পরে মিশরীয় শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের মারধর করে। ঘটনাটি ৩-৪ দিন আগের। এরপর সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। কিন্তু পরে সেই ঘটনার একটি ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।'

তিনি বলেন, 'তবে আমরা আগে থেকেই বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছিলাম যে রাত ৮টার পর কেউ যেন বাইরে না যায়। সেসময় আমাদের হোস্টেল গেট বন্ধ ছিল, পুলিশি নিরাপত্তা ছিল। তবে রাতে স্থানীয় তরুণ জনতা পুরো শহরজুড়ে আন্দোলন এবং ভাঙচুর শুরু করে।'

'তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে টার্গেট করেই প্রথম আক্রমণ করে। সেসময় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের রুমেই ছিল। তাদের রুম ভাঙচুর করা হয়েছে, তবে তারা কেউ আহত হননি। যদিও একটি ভিডিওতে দেখেছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দুজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন শ্রমিকের গায়ে হাত তোলা হয়েছে', বলেন তিনি।

ডা. জেরিত আরও বলেন, 'এখন শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই দেশে ফিরতে চাচ্ছেন। এমনিতেই পরীক্ষার পর দেশে ফিরতে তাদের জন্য ১২, ১৬ ও ২৬ জুন চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা রেখেছিলাম। এখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠায় আমরা এখনই চার্টার্ড ফ্লাইট ম্যানেজের চেষ্টা করছি।'

'তবে আমরা সবাইকে দেশে ফিরে যেতে বলছি না। যারা যেতে চান তাদের তালিকা তৈরি করছি এবং সেভাবেই চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছি। তবে আমরা ফ্লাইটের কোনো তারিখ এখনো ঠিক করিনি', যোগ করেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে কিরগিজস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকা কোনো প্রভাব পড়ছে না বলেও জানান ডা. জেরিত।

তিনি বলেন, 'কিরগিজস্তানে পাকিস্তানি শিক্ষার্থী প্রায় ১৫ হাজার। তাদের জন্য আগে থেকেই প্রতি সপ্তাহে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা ছিল। যে কারণে তারা সেই চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশে ফিরে গেছেন।'

'আমাদের চার্টার্ড ফ্লাইট রয়েছে ১২, ১৬ ও ২৬ জুন। সেটা এগিয়ে আনতে হচ্ছে। যেহেতু শনিবার ও রোববার এখানে অফিসিয়ালি সবকিছু বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের পাসপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে, ফলে সেগুলো আমাদের এখন সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাছাড়া একেকজন একেক জায়গায়, যে কারণে একটু সময় লাগছে', বলেন তিনি।

ডা. জেরিতের ভাষ্য, 'আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখা ও খাবারসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু সরবরাহ করছি। বাইরে যারা আছেন তাদেরকেও হোস্টেলে নিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত কারো কোনো সমস্যা হয়নি।'

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কিরগিজস্তানে কেন পড়তে যান, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কিরগিজস্তানে ভিসা জটিলতা নেই। শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি প্রতি সেমিস্টারে দিতে পারেন। কোনো এজেন্সি ছাড়াই শিক্ষার্থীরা সরাসরি এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারেন। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখানকার শিক্ষার মান খুবই ভালো। তাছাড়া টিউশন ফি বাংলাদেশের তুলনায় কম।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Banks deposit growth in 2024

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

11h ago