পুলিশ জানে না বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চু কোথায়

শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। স্টার ফাইল ছবি

বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু কোথায় আছেন সেটা জানে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যদিও গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকার একটি আদালত তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় ৫২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছেন।

এর আগে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানায় দায়ের করা আরও দুটি মামলায় তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বাচ্চুর বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় এবং তার বর্তমান বাসা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায়।

গত ৩০ এপ্রিল ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান জানান, তিনি এক সপ্তাহ আগে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পেয়েছেন, কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারের কেউই ওই ঠিকানায় থাকেন না।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পল্টন থানায় দায়ের করা একটি দুর্নীতির মামলায় এ পরোয়ানা দেওয়া হয়।

মোল্লাহাট থানার ওসি এসএম আশরাফুল আলম ৩০ এপ্রিল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি বাচ্চুর বিরুদ্ধে কোনো পরোয়ানা পাননি।

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, 'এক হাজার টাকা কৃষিঋণের কারণে কেউ জেলে যায়, আর ১০ হাজার কোটি টাকা শিল্পঋণের খেলাপি গ্রাহক সরকারের পাশে বসে।'

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক সংকটে পড়ার আগে লাভজনক ছিল।

তিনি বলেন, 'ওই ব্যাংক (বেসিক ব্যাংক) যিনি নষ্ট করেছেন, শুনেছি দেশেই আছেন।'

বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৯টি মামলায় বাচ্চুকে আসামি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পল্টন, মতিঝিল ও গুলশান থানায় মামলাগুলো করা হয়।

গতকাল বুধবার পর্যন্ত থানায় দায়ের করা পাঁচটি মামলার অভিযোগ এখনো গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান দুদকের এক কর্মকর্তা।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, বাচ্চু আইনের চোখে পলাতক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।

২৯ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন আব্দুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু কোথায় আছেন আমরা সত্যিই জানি না। আমরা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তার বাসায় অভিযান চালিয়েছি, কিন্তু তাকে পাইনি।'

'তিনি বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ত্যাগ করেননি। তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদি কোনো বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন, তাহলে আমরা জানতে পারব। সে কারণেই আমরা মনে করি, তিনি এখনও বাংলাদেশেই আছেন। আট বছর তদন্ত করার পর আমরা বাচ্চুর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছি,' যোগ করেন তিনি।

ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুদকের আরেক আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, 'নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার না করা হলে সরকার গেজেট প্রকাশ করবে এবং আদালত তার অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু করবে। তিনি চাইলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন।'

বাচ্চুর আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন গত ২৯ মার্চ ডেইলি স্টারকে বলেন, কারাগারে পাঠানো হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তার মক্কেল আদালতে হাজির হননি।

মাহসিব আরও জানান, মামলাগুলোর নিম্ন আদালতের কার্যক্রমের সবশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাচ্চু ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান থাকাকালীন বেসিক ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাচার হয়।

২০১৪ সালের ১৪ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুদককে একটি প্রতিবেদন দেয়, যেখানে শেল কোম্পানি ও সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কীভাবে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছিল তার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাচ্চু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কার্যক্রমে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করেন এবং কর্মকর্তাদের সুপারিশ উপেক্ষা করে অনেক ঋণ অনুমোদন করেন। জাল কাগজপত্রের ভিত্তিতে ঋণও অনুমোদন করেন তিনি।

গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে বাচ্চু তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়েছিলেন।

তার আইনজীবী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি আদালতের কাছে দাবি করে যাচ্ছেন যে তিনি নির্দোষ এবং তার বিরুদ্ধে কোনো বস্তুগত প্রমাণ নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

7h ago