ব্যাংক একীভূতকরণ, আতঙ্কে টাকা তুলছেন আমানতকারীরা

ব্যাংক একীভূতকরণ, বাংলাদেশ ব্যাংক,
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বেসিক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে জমানো টাকা তোলার পরিমাণ বেড়েছে। এতে সংকটে পড়া ব্যাংক দুটির পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে।

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার খবর প্রকাশের পর গত সপ্তাহে দুই ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকরা ভিড় জমাতে শুরু করেন।

পরিস্থিতি মোকাবিলার উপায় জানতে চেয়ে গত ১৮ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেয়।

বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত সপ্তাহের কয়েকদিনে ব্যাংক থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

গত বছরের জুনে বেসিক ব্যাংকে আমানত ছিল ১৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকটির সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সেই পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আরেক চিঠিতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা চায় বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে অন্য কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করা হোক।

যোগাযোগ করা হলে বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু মো. মোফাজ্জল বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টাকা জমা দিতে বেসিক ব্যাংককে বেছে নিয়েছে।

'কিন্তু ব্যাংকটি বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের অর্থ তুলে নিচ্ছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'বেসিক ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের কাছে টাকা উত্তোলন করতে ইচ্ছুক নানা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক ফোন কল আসছে। এতে শেষ পর্যন্ত সরকারের ক্ষতি হবে।'

২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এতে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়ে, এখনো সেখান থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৬৪ শতাংশ।

গত ১৬ এপ্রিল ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে জানান, একীভূতকরণের প্রস্তাবের কথা শুনে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

অন্যদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহকরাও তাদের জমা অর্থ ‍তুলে নিতে ভিড় করছে।

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম খান বলেন, 'হঠাৎ করে টাকা তোলার তাড়াহুড়ো ব্যাংকটিকে প্রচণ্ড চাপে ফেলেছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা বিভিন্ন শাখায় গিয়ে আমানতকারীদের সঙ্গে কথা বলছি এবং টাকা উত্তোলন না করতে অনুরোধ করছি।'

গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির লোকসান হয়েছে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালে লোকসান হয়েছিল ৩৫৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তে আমানতকারী, স্টেকহোল্ডার, ব্যাংকার ও পরিচালকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'দুর্বল ও ভালো উভয় ব্যাংকই আমানত তুলে নেওয়ার হুড়োহুড়ির মুখে পড়তে পারে। আমানতকারীদের টাকা যেন খোয়া না যায়, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।'

তবে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, মানুষ অনেক সময় পরিবর্তন পছন্দ করে না। তবে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি দুর্বল ব্যাংকের ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ ও পরিচালন ক্ষতির ব্যাপারে আর্থিকভাবে সহায়তা করে তাহলে উদ্বিগ্ন হওয় বা খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই।

তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকের পুনর্গঠনের পর যদি দুটি ব্যালেন্সশিট এক করা হয়, তাহলে কোনো শঙ্কা থাকার কথা নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Donald Trump to be sworn in as US president for second term

The event was moved indoors because of cold weather

1h ago