কর্মক্ষেত্রে মিলেনিয়াল বনাম জেন জি

মিলেনিয়াল বনাম জেন জি
ছবি: সংগৃহীত

যত দিন যাচ্ছে, জেন জি প্রজন্মের লোকজন আরও বেশি করে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছেন এবং বর্তমান কর্মক্ষেত্রে আসছে বহু নাটকীয় মোড়। জেন জিদের কাজের পদ্ধতি এতটাই ব্যবহারিক ও প্রযুক্তিনির্ভর যে, এতে করে সবার অতিচেনা কর্মক্ষেত্র বেশ বদলে যাচ্ছে কিংবা অন্তত তারা বদলানোর চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়।

অন্যদিকে মিলেনিয়ালরা, যারা কি না এরই মধ্যে কর্মজীবনের বেশ কয়েকটি বছর কাটিয়ে ফেলেছেন, তারাও এই জেন জিদের সঙ্গেই কাজ করছেন। এই দুই প্রজন্মের মিশ্র অবস্থানের ফলে কাজের জায়গাতে যেমন নতুন নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, তেমনি মুখোমুখি হতে হচ্ছে অসংখ্য নতুন চ্যালেঞ্জেরও।

এই লেখায় এই দুই প্রজন্মের মধ্যকার পার্থক্যগুলো দেখানোর পাশাপাশি কীভাবে দুই দলকেই সমবেত, সন্তুষ্ট এবং একটি সুবিধাজনক কর্মক্ষেত্রের আওতায় আনা যায়, সেদিকেও দৃষ্টিপাত করা হবে।

শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক, মিলেনিয়াল ও জেন জি কারা। যাদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে হয়েছে, অর্থাৎ যে সময়টাতে প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্বে নতুন সব বদলের হাওয়া বইছিল, ডট কমের সেই জোয়ারের সময়টাতে এবং ইন্টারনেটের উত্থানকালে জন্ম নেওয়া মানুষজনকেই মিলেনিয়াল বলা হয়।

ওই সময়টায় জন্ম ও বেড়ে উঠার কারণে মিলেনিয়ালদের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীলতার জন্য এক ধরনের মৌলিক আগ্রহ কাজ করে। ফলে এই প্রজন্মের সদস্যরা ব্যক্তি ও কর্মজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পছন্দ করেন এবং এমন একটি চাকরি করতে চান, যাতে তাদের নিজস্ব আগ্রহ এবং মূল্যবোধের মধ্যে সুরটা কখনো কেটে না যায়।

অন্যদিকে জেন জিরা জন্ম নিয়েছেন ১৯৯৭ সালের পরে এবং জীবনের শুরুর সময় থেকেই তারা প্রযুক্তিকে কাছে পেয়েছেন। যদিও তাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল বৈশ্বিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তন সংকট এবং প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়ন, তবু তারা মিলেনিয়ালদের চেয়ে বেশি উপভোগ্য, বিশেষ করে আরামদায়ক একটি শৈশব কাটিয়েছেন।

বেশিরভাগ জেন জি-ই প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে এবং নিজেদের অর্থনৈতিক দায়িত্ব এবং সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে সচেতন।

মিলেনিয়ালরা বেড়ে উঠেছেন গত শতাব্দীর শেষের দিকে, যখন প্রযুক্তির গতি দিন দিন বাড়ছিল। তবুও তারা ডিজিটাল ও মুখোমুখি যোগাযোগ, দুটোর মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় রাখতে পছন্দ করেন। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে ভালো করে আয়োজন করা মিটিং, খাওয়াদাওয়া এ ধরনের দেখা-সাক্ষাতই তাদের কাছে বেশি ভালো লাগে। কারণ এতে কাজের পাশাপাশি সামাজিক মেলামেশার সুযোগ রয়েছে।

ওদিকে জেন জি যেহেতু প্রযুক্তির সঙ্গে বেশি মাত্রায় যুক্ত এবং এ বিষয়ে তাদের দক্ষতাও অপেক্ষাকৃত বেশি, প্রায় সব ক্ষেত্রে অনলাইন যোগাযোগই তাদের কাছে প্রাধান্য পায়। নিজেদের কমফোর্ট জোন এবং নিজেদের ব্যক্তিত্বের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করাটা জেন জির আচরণের একটি বড় অংশ। আর যোগাযোগের পদ্ধতিতে থাকা এই তারতম্যের ফলে কর্মক্ষেত্রে এই দুই প্রজন্মের মধ্যে মতভেদ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শুধু যোগাযোগই নয়, কাজের নৈতিকতাও এই দুই দলকে আলাদা করে। মিলেনিয়ালরা সাধারণত দলগতভাবে, সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে চান এবং ফিডব্যাক, অনুমোদন এসব বিষয়ের ওপর জোর দেন। মিলেনিয়ালদের কাছে নিজেদের কাজের জায়গা বা অফিস একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জায়গা, এক ধরনের সামাজিক মিলনমেলাও বটে।

অন্যদিকে জেন জিরা কর্মক্ষেত্রকে ভীষণই প্রতিযোগিতামূলক একটি জায়গা হিসেবে দেখেন। আর তাই নিজের নিরাপত্তাবোধ ধরে রাখতে তাদের বেশি ঝোঁক থাকে একা কাজের দিকে। তাদের মনোযোগ নির্দিষ্ট কাজের প্রতি বেশি কেন্দ্রীভূত এবং আচরণও অপেক্ষাকৃত বাস্তবসম্মত বলে মনে হয়।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এই দুটো দলই প্রযুক্তি ব্যবহারে অত্যন্ত দক্ষ, তা সে সামাজিক জীবনে হোক বা কর্মক্ষেত্রে। তবে তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরনটা আলাদা। মিলেনিয়ালরা নিজেদের ব্যক্তি ও কর্মজীবনের মধ্যে সঙ্গতি ধরে রাখতে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন এবং ডিজিটাল নোম্যাড বিপ্লবের সূচনাও হয়েছে তাদের হাত ধরেই। জেন জিদের কাছে প্রযুক্তি সবসময় ব্যবহার করা যায়, এমন একটি মাধ্যম।

প্রযুক্তিকে তারা তাই নিজেদের কাজকে আরও দক্ষ ও দ্রুত করার একটি টুল হিসেবে ব্যবহার করেন। এই দুই প্রজন্মের লোকদের মধ্যে আগ্রহ ও আচরণের একটি সাধারণ বিন্দু খুঁজে বের করাটা বড় চ্যালেঞ্জ, তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে তা অসম্ভব কিছু নয়।

এমন কিছু কর্মশালা আয়োজন করা যায়, যাতে দুই পক্ষের শক্তিশালী দিকগুলো তুলে ধরা যায়। এ ছাড়া আলাদা আলাদা শিখন প্রক্রিয়ার মধ্যে মিল ঘটিয়ে পারস্পরিক আস্থা ও সমন্বয় বৃদ্ধি করা যায়। এ ছাড়াও, মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দুই প্রজন্মের কর্মীদের মধ্যে অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতি সম্মান বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।

যেকোনো ধরনের কর্মক্ষেত্রেই কোন ভূমিকায় ঠিক কেমন কাজ প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এই বিষয়টি যদি স্পষ্ট হয়, তবে কর্মক্ষেত্রে দুই প্রজন্মের কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই সাফল্য অর্জন করা যাবে। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক যেমন জোরদার হবে, তেমনি কাজের মানও ভালো হবে। ভবিষ্যতটা যেহেতু এই দুই প্রজন্মের ওপরই নির্ভর করছে, তাই তাদের উপস্থাপন করা দৃষ্টান্তই পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় হবে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

35m ago