যেভাবে জেন-জি পাঠকদের আকৃষ্ট করেছে যুক্তরাজ্যের প্রকাশকরা

নেট থেকে ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জেনারেশন জেড বা জেন-জি পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে। বিশেষ করে ফোলিও সোসাইটির কথা বলতেইর হয়। ফোলিও সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি এক সময় ক্লাসিক ও ইতিহাসের বই প্রকাশের জন্য ব্যাপক পরিচিত ছিল। তখন এর গ্রাহক ছিল প্রধানত বৃদ্ধ বয়সীরা।

কিন্তু এখন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে ফোলিও সোসাইটির অর্ধেকের বেশি গ্রাহকের বয়স ২৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি এখন বেশি বেশি সাই-ফাই ও ফ্যান্টাসি ঘরানার বই প্রকাশ ও বিক্রি করছে।

এই পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশেষ করে টিকটকের বই বিষয়ক প্লাটফর্ম বুকটকের মাধ্যমে উৎসাহিত হয়ে তারা প্রকাশনাতে পরিবর্তন এনেছে। ফলে, জেনারেশন জেড বা জেন-জি ফোলিও সোসাইটির বইয়ে কিনতে আগ্রহী হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির ইলাস্ট্রেটেড বইগুলোর বিক্রি ২০১৭-১৮ সাল থেকে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

২০১৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন জোয়ানা রেনল্ডস। তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, 'আমরা আগে যে ধরনের বই বিক্রি করতাম তা পুরোপুরি বদলে ফেলেছি। আমরা ফ্যান্টাসি, সাই-ফাইসহ শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশ বাড়িয়েছি। বিশেষ করে ফ্যান্টাসি ও সাই-ফাই আগের সময়ের সঙ্গে বর্তমানের বড় একটি ব্যবধান গড়ে তুলেছে। গেম অব থ্রোনস আক্ষরিক অর্থেই গেমচেঞ্জার ছিল। এটি আমাদের জন্য অনেক অর্থ উপার্জনের পথ করে দিয়েছে।'

এসব বলতে গিয়ে একটু পেছনে ফিরে যান রেনল্ডস। জানান, তিনি যখন প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন, তখন ফোলিও সোসাইটির ব্যবসা পড়তির দিকে ছিল।

তার ভাষ্য, 'তারা ব্যবসায়ে লোকসান করছিল, গ্রাহক হারাচ্ছিল। তারা একটা ঝামেলার মধ্যে ছিল।'

তাই প্রকাশনার মডেল পরিবর্তন আনেন রেনল্ডস। তিনি জানার চেষ্টা করলেন, পাঠক কেমন বই চান। তিনি যে উত্তর পেয়েছিলেন, তা হলো পাঠক সাই-ফাই ও ফ্যান্টাসি চান। এই ঘরানার বই যুক্তরাজ্যের প্রকাশনায় একটি ক্রমবর্ধমান বাজার। ২০২৩ সালে এ ঘরানায় রেকর্ড বই বিক্রি হয়েছে বলে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছর, ফোলিও সোসাইটির সর্বাধিক বিক্রিত তিনটি বই হলো- ডায়ানা ওয়াইন জোনসের লেখা হাউলস মুভিং ক্যাসেল, ফ্র্যাঙ্ক হারবার্টের লেখা ডিউন এবং মাইকেল ক্রিকটনের লেখা জুরাসিক পার্ক।

গত সপ্তাহে ফোলিও সোসাইটি চিলড্রেন অব ডিউন প্রকাশ করে। প্রকাশের ২৪ ঘণ্টায় ৮০ পাউন্ড মূল্যের বইটি এক হাজারের বেশি কপি বিক্রি হয়ে যায়। তরুণরা টলকিয়েন ও গেম অব থ্রোনস কিনে থাকেন। যখন বয়স্ক পাঠকরা জেমস বন্ড ও দ্য উইন্ড ইন দ্য উইলোস কেনেন।

রেনল্ডস বলেন, ২৫ এর বাজার এখন ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মতোই বড়। ফোলিও সোসাইটির বইগুলো সস্তা নয়, তবুও পাঠক কিনছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ ম্যাডেলিন মিলারের উপন্যাস সার্কে এর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে, বইটি আগামী বছর প্রকাশ করা হবে। উইন জোনসকে ঘিরেও ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি জানান, হাউলের মুভিং ক্যাসেলের ভালো পাঠক আছে। এই বইয়ের অলঙ্করণ তরুণরা বেশ পছন্দ করেছে। তার মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোটাভুটি ও জরিপের তথ্য অনুযায়ী বই প্রকাশ করায় বিক্রি বেড়েছে।

'আমরা জরিপে জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের ৭৫তম বার্ষিকীতে কোন বই আপনারা দেখতে চান? আশ্চর্যজনকভাবে তারা মাইকেল এন্ডের লেখা দ্য নেভারএন্ডিং স্টোরি এর কথা বলেছিল। আমরা তাতে ভালো ফল পেয়েছিলাম,' বলেন তিনি।

বর্তমানে যে কোনো প্লাটফর্মের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশি প্রভাবশালী। তাই কেবল ফোলিও সোসাইটি নয়, যুক্তরাজ্যের অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জেন জি প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে। আবার বই নিয়ে কাজ করছে টিকটকের বুকটক। এই প্লাটফর্মটিও এখন প্রকাশনা শিল্পের বিক্রি বৃদ্ধি ও লেখকদের ক্যারিয়ারে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

ফোলিও সোসাইটিসহ অন্যান্য প্রকাশনার বইয়ে রঙিন কাগজ, টেক্সচার ও চমৎকার অলঙ্করণ ব্যবহার করা হয়। এগুলো একটি বইকে টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার উপযোগী করে তোলে।

রেসল্ডস বলেন, এই প্রজন্মকে বইমুখী করতে বুকটক আমাদের জন্য খুব ভালো কাজে দিয়েছে। মিলারের লেখা ফ্যান্টাসি রোম্যান্স দ্য সং অব অ্যাকিলিস ইতোমধ্যে অনলাইনে ভালো সাড়া ফেলেছে। কারণ ফোলিও সোসাইটি বইটির একটি সংস্করণ প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলে বুকটকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যে ভিডিওতে একজন ব্যবহারকারী বইটির কপি 'আনবক্সিং' করেছেন।

তার ভাষ্য, 'আমরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি সংস্করণ বিক্রি শেষ করি। পরে এটি পুনরায় মুদ্রণ করেছি।'

প্রকাশকরা মনে করছেন, তরুণ প্রজন্ম এমনকি যারা ই-রিডার ব্যবহার করেন তারাও পছন্দসই বইয়ের জন্য বড় অঙ্কের খরচ করতে রাজি। তবে বইয়ের তথ্য তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এমন মাধ্যমে বইয়ের প্রচারণা বাড়াতে হবে যে মাধ্যমে এই প্রজন্ম বেশি সক্রিয়।

Comments

The Daily Star  | English
conflict over security responsibilities at Dhaka airport

Dhaka airport: APBn at odds with aviation force over security duties

A conflict has emerged between the Aviation Security Force (AVSEC) and the Airport Armed Police Battalion (APBn) over security responsibilities at Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA). APBn claims that AVSEC took control of their office on October 28, hindering their ability to perform duties effectively

54m ago