রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর: বিচার দাবিতে স্বজনহারাদের কান্না

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর আজ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ১০ তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত হন এক হাজার ১৩৬ জন। আহত হন দুই হাজারের বেশি শ্রমিক। দীর্ঘ ১১ বছরেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকদের কষ্ট ভারী হয়েছে।

আজ বুধবার প্রতি বছরের মতো নিহতদের স্মরণে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে জড়ো হন নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দোষীদের শাস্তি ও যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ সাত দফা দাবি তোলেন তারা।

এর আগে রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।

মানবেতর জীবনযাপন করছেন আহতরা

রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক বুলবুলি আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রানা প্লাজা ধসে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। নামমাত্র অনুদান ছাড়া ক্ষতিপূরণ পাইনি, বিচারও পাইনি। আমাদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি।
আমি ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।'

রানা প্লাজার আটতলায় কাজ করতেন শারমিন আক্তার। ওই ঘটনায় প্রাণে বাঁচলেও গুরতর আহত হয়ে আর কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারেননি তিনি।

শারমিন আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জীবন ফিরে পেয়েছি কিন্তু স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছি। পায়ে-কোমরে গুরুতর আঘাত পেয়ে এখন দুর্বিষহ জীবন পার করছি। কাজ করতে পারি না। সন্তানদের নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে দিন পার করছি। এখনো যথাযথ ক্ষতিপূরণ পেলাম না৷ আমি যথাযথ ক্ষতিপূরণ চাই।'

বিচারের দাবিতে স্বজনহারাদের কান্না

রানা প্লাজা ধসকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে করেন, আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের স্বজন এবং শ্রমিক নেতারা। ঘটনার পর থেকে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। দীর্ঘ ১১ বছরেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

রানা প্লাজার সামনে অঝরে কাঁদছিলেন ৭০ বছর বয়সী সাফিয়া বেওয়া। রানা প্লাজা ধসে মেজ ছেলে লাল মিয়াকে হারিয়েছেন তিনি। লাল মিয়া কাজ করতেন ভবনটির তৃতীয় তলায়।

কান্না জড়িত কন্ঠে সাফিয়া বেওয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কে করবে সোহেল রানার বিচার? আমি কি ছেলে হত্যার বিচার পাইমু না? আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।'

যা বলছেন শ্রমিক নেতারা
গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই আমরা বেশ কয়েকটি দাবি তুলে আসছি। গত ১১ বছরেও আমাদের দাবিগুলো পূরণ হয়নি। এত বছর পর আমরা একই দাবি জানাচ্ছি।'

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার এখনো নিশ্চিত হয়নি। দীর্ঘ দিনেও বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় আমরা হতাশ। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, এটা সবার দাবি।'

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, 'দীর্ঘ ১১ বছরেও আমাদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি। আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English
Strategies we can employ in tariff talks with the US

US tariff talks: Bangladesh writes to USTR, seeking date

The negotiation team from Bangladesh will fly to America once the USTR fixes a date for the talks

10h ago