রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর

সংখ্যা বাড়লেও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় পিছিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন

রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপ। ছবি: সংগৃহীত

রানা প্লাজা ধসের পর থেকে দেশের তৈরি পোশাক খাতে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বেড়েছে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।

২০১৩ সালের আজকের দিনে দেশের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক শিল্প দুর্ঘটনা ঘটে। এতে এক হাজার ১৩০-র বেশি শ্রমিক নিহত হন। আহত হন অন্তত আড়াই হাজার।

প্রচণ্ড আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের নিয়ম শিথিল করায় পোশাক খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ার পথ প্রশস্ত হয়।

রানা প্লাজা ধসের পর এ শিল্পে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ২৫০ থেকে বেড়ে এক হাজার ৩০০ হয়েছে।

তারপরও দেশের প্রায় চার হাজার পোশাক কারখানার প্রায় ৭০ শতাংশে নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন নেই।

এসব কারখানায় 'অংশগ্রহণ কমিটি' আছে। সেই কমিটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের স্বার্থ সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনা করে।

যেহেতু যেকোনো শিল্প খাতে সুস্থ কর্মপরিবেশের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ, তাই শ্রম আইনটি দুবার সংশোধন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মূল কনভেনশন অনুমোদনের পাশাপাশি সংগঠন গড়ার স্বাধীনতা ও মালিক পক্ষের সঙ্গে দর কষাকষির অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে।

কয়েকজন ইউনিয়ন নেতাদের মতে, কয়েক বছরে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলেও অদক্ষতার কারণে সেগুলো কার্যকর হয়নি।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেশিরভাগ ইউনিয়ন হয় কারখানার মালিকদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট অথবা শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি।'

তার মতে, 'ফলে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। তাছাড়া কিছু নেতা ইউনিয়নের গুরুত্ব একেবারেই বোঝেন না।'

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকটি ইউনিয়নের দর কষাকষির ক্ষমতা আছে। ইউনিয়নগুলোর দর কষাকষির ক্ষমতা না থাকলে তারা কার্যকারিতা হারিয়ে শুধু সংগঠনে পরিণত হয়।'

যেসব ইউনিয়নের দর কষাকষির ক্ষমতা নেই, নিছক সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের প্রধান খাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না তাদের সমালোচনাও করেন তিনি।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদের মতে—আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা, ব্র্যান্ড ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপে অনেক পোশাক কারখানার মালিক তাদের অনুগত শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনে সহায়তা করেছেন।

বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পোশাক খাতের ইউনিয়নগুলোর মান ভালো নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ফলে অধিকাংশ ইউনিয়নের দর কষাকষির ক্ষমতা নেই।'

ইউনিয়নগুলো যাতে সঠিকভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে পরবর্তী সংশোধনীর সময় শ্রম আইনে শিথিল বিধানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে গত এক দশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের কারণে পোশাক খাতে কর্মনিরাপত্তার অনেক উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

যদিও রানা প্লাজা-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে এখন ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা অনেক বেশি। তবুও এ ধরনের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা এখনো সহজ নয়।

শ্রম আইনে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন গঠনে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সই প্রয়োজন।

নাজমা আক্তারের অভিযোগ, অনেক সময় সরকারি কর্মকর্তারা ইউনিয়ন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এমন শর্ত জুড়ে দেন যা পূরণ করা কঠিন। ফলে শ্রমিকরা নিরুৎসাহিত হন।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধিকাংশ ইউনিয়ন নেতার সঙ্গে কারখানা পর্যায়ের শ্রমিকদের সম্পর্ক নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'ইউনিয়ন গঠনের পর নেতারা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। তাই যখনই সংকট দেখা দেয়, তখনই ইউনিয়ন নেতাদের ভূমিকা নগণ্য থেকে যায়।'

ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'সেখানে শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা এমনকি একজন উপ-প্রধানমন্ত্রীও ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে উঠেন।'

'বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়নের ধরন ভিন্ন। অনেক সময় দুর্বল নেতৃত্বের কারণে ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

3h ago