ঝালকাঠিতে ট্রাকের ধাক্কায় পরিবারের ৬ সদস্যের মৃত্যুতে ম্লান ঈদ মিলনমেলা

ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় প্রাইভেটকারটি। ছবি: স্টার

ঈদের এক সপ্তাহ আগে রাঙ্গামাটির মো. নূরুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেনের (২৩) সঙ্গে বিয়ে হয় ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাংগর গ্রামের আব্দুল বারেক মৃধার মেয়ে নিপা আক্তারের (২১)।

ঈদের পর গত মঙ্গলবার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যান বিমান বাহিনীর সৈনিক ইমরান। গতকাল বুধবার স্বামী ইমরান, বোন নাহিদা আক্তার সোনিয়া (২৮), সোনিয়ার স্বামী হাসিবুর রহমান প্রিন্স (৩৩) এবং তাদের দুই সন্তান তাকিয়া আক্তার (৩) ও তাহমিদ রহমানসহ (১) পরিবারের ছয়জন মিলে রাজাপুর থেকে বরিশালে যাচ্ছিলেন নিপা।

কিন্তু পথে গাবখান সেতুতে টোল দেওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকের চাপায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাদের প্রাইভেটকারসহ আরও দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এই পরিবারের ছয়জনসহ মোট ১৪ জন নিহত হন।

ঈদ ঘিরে একসঙ্গে হওয়ার আনন্দ ম্লান হয়ে শোক নেমে আসে পরিবারটিতে।

আজ সকালে জানাজা শেষে প্রিন্স-সোনিয়া ও তাদের দুই সন্তানের মরদেহ দাফন করা হয় রাজাপুরের উত্তর সাউথপুরা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে।

প্রিন্সের চাচাত ভাই মো. বরকতউল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত মঙ্গলবার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী সাংগর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন প্রিন্স।

'তাদের মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে', বলেন তিনি।

তিনি জানান, তিন বছর আগে প্রিন্সের বাবা মিজানুর রহমান মারা যান। এরপর একসঙ্গে তাদের চারজনের মৃত্যুকে শোকস্তব্দ প্রিন্সের মা ও ছোট দুই ভাই।

নিহতদের জানাজায় স্থানীয়রা। ছবি: স্টার

নিপা-সোনিয়ার ফুফাত ভাই মোহাম্মদ জিয়া জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বরিশালে যাওয়ার সময় সোনিয়া তার বোন নিপা ও নিপার স্বামী ইমরানকেও সঙ্গে নিয়েছিল।

'তাদের মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে দুর্বিষহ পরিস্থিতি নেমে এসেছে,' বলেন জিয়া।

আজ সকালেই নিপার মরদেহ সাংগার গ্রামে তার বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে এবং ইমরানের মরদেহ রাঙ্গামাটিতে তার বাড়িতে দাফন করা হয়।

চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে, তাদের জামাই ও দুই নাতি-নাতনিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন নিপা-সোনিয়ার বাবা আব্দুল বারেক মৃধা। একই অবস্থা তাদের মায়েরও।

গতকালের এই দুর্ঘটনায় ঝালকাঠি সদর উপজেলার ওস্তাখান গ্রামের সেলিম হাওলাদারের ছেলে, স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক নজরুল ইসলামের (৩৫) মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার পরিবারে। নজরুলের মৃত্যুতে তার বাবা-মা, স্ত্রী এবং চার বছর ও দেড় বছর বয়সী কন্যাকে ভরণপোষণের আর কেউ রইল না বলে জানান প্রতিবেশী প্রদীপ মিত্র।

সকালে জানাজা শেষে নজরুল ও একই দুর্ঘটনায় নিহত তার আত্মীয় ও প্রতিবেশী শফিকুল মাঝিকে (৫৫) পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এক আত্মীয়ের বিয়েতে অংশ নিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় রাজাপুর থেকে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সাগরকান্দা গ্রামে বরের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তারা। দুর্ঘটনায় তাদের আরও দুই স্বজন নিহত হয়েছেন।

ঘটনার পরই পুলিশ ট্রাকচালক আল আমিন এবং সহকারী নাজমুল শেখকে আটক করেছে। চালক আল আমিনের ভারী যানবাহন চালানোর কোনো লাইসেন্স ছিল না।

এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

1h ago