ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: নতুন সংকটে পোশাক শিল্প

ইরান ইসরায়েল সংঘাত
কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান দ্রুত পণ্য পেতে কার্যাদেশ বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক বা ভিয়েতনামে সরিয়ে নিচ্ছে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

চলমান লোহিত সাগর সংকট ও গাজা যুদ্ধের কারণে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি নতুন করে উদ্বেগের মুখে পড়েছে।

স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন—ব্যবসার খরচ আরও বাড়বে। কারণ, এই উত্তেজনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের খরচ বেড়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা তেলের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে।

সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গত রোববার ইরান থেকে ইসরায়েলে সরাসরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বিদেশি ক্রেতারা ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পণ্য সরবরাহ করতে বলেছেন। কেননা, গত অক্টোবরে লোহিত সাগর সংকটের পর পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

সুয়েজ খালের মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগকারী লোহিত সাগরে সংকট বৈশ্বিক উত্তেজনার কেন্দ্র হিসেবে দেখা দেওয়ার আগে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের বন্দরে পণ্য পাঠাতে সাধারণত ৩০ দিন লাগত।

সেই নৌপথে চলাচলকারী জাহাজগুলো লক্ষ্য করে হুতিদের হামলার কারণে পণ্যবাহী জাহাজগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ ঘুরে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার ঘুরে যাওয়ার কারণে পণ্য সরবরাহে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি হচ্ছে এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

এই সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি খুচরা পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ড পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা এড়াতে কিছু পণ্যের কার্যাদেশ বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক বা ভিয়েতনামে সরিয়ে নিচ্ছে।

কার্যাদেশ কমে যাওয়ার এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটলো যখন বাংলাদেশের আয়ের সবচেয়ে বড় খাতটি করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মারাত্মক বিপর্যয় থেকে জেগে উঠার চেষ্টা করছে।

পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, 'কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাছাকাছি জায়গা থেকে পণ্য নেওয়া হচ্ছে। এসব কার্যাদেশ বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও অনেক ক্রেতা তুরস্ককে দিচ্ছেন।'

'কারণ সময়মতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ক্রেতাদের জন্য জরুরি।'

বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এক সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয় বলে কম সময়ের মধ্যে পণ্য বাজারে আনার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর পণ্যের দাম বাড়লে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম কমে যায়। এটি শেষ পর্যন্ত রপ্তানিকারকদের মুনাফা কমিয়ে দেয়।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোহিত সাগর সংকটের কারণে বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানিকারকদের কম দাম দিয়ে জাহাজ পরিচালনার খরচ তুলে নিচ্ছে।'

রপ্তানিকারকরা বলছেন, যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জাহাজ চলাচলের খরচ বহন করে তবু অনেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রপ্তানিকারকদের ওপর খরচ চাপিয়ে দেন।

৯৫ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে ক্রেতারা ফ্রেইট অন বোর্ড পদ্ধতিতে পণ্য কেনায় জাহাজের খরচ দিয়ে থাকেন। রপ্তানিকারকরা পাঁচ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ দেন।

আশরাফ ও নাসির উভয়ের মতে, ক্রেতারা যেকোনো অতিরিক্ত খরচ রপ্তানিকারকদের ওপর চাপিয়ে দেন।

কারখানার মালিকরা আশঙ্কা করে বলছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বাড়লে তা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে।

তেলের দাম বাড়লে জাহাজ চলাচলের খরচ বেড়ে যাবে। এটি উত্পাদন ও পণ্য পরিবহন খরচ বাড়িয়ে তুলবে।

দীর্ঘ সময় মধ্যপ্রাচ্য সংকট চললে সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক ও ইরানের মতো উদীয়মান বাজারগুলোয় পোশাক বিক্রি ততটা সহজ হবে না যতটা অনেকে আশা করছিলেন।

বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোহিত সাগর সংকট শুরুর পর ঢাকা থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে গেছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে তা আরও বাড়তে পারে।'

বর্তমানে ঢাকা থেকে ইউরোপের বিমানবন্দরগুলোয় এক কেজি পণ্য পরিবহনে এয়ারলাইনসগুলো আড়াই ডলারের বেশি চার্জ করে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে একই গন্তব্যে ৩০ মার্কিন সেন্টের চেয়ে বেশি দরকার হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

6h ago