মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে ১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে জোর করে নিয়োগ: এইচআরডব্লিউ

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে অপহরণ ও জোরপূর্বক নিয়োগ দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

এক্ষেত্রে দেশটির সামরিক জান্তা সরকার বাধ্যতামূলক এক আইন ব্যবহার করছে যা কেবল মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। যদিও ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত।

এক বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, রাতে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের তুলে নেওয়া এবং নাগরিকত্বের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে হুমকি দিয়ে গ্রেপ্তার এবং অপহরণের পর মারধর করা হয় তাদের।

সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের মোতায়েনের আগে তাদের দুই সপ্তাহের একটা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা অবমাননাকর বলে জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থেকে মারা গেছেন। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত অনেক রোহিঙ্গা নিহত বা আহত হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক গবেষক শায়না বাউচনার বলেন, 'এটা ভয়ানক ব্যাপার যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়ে আসছে, এখন তাদের পক্ষেই আবার লড়াই করতে বাধ্য করছে।'

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাখাইন রাজ্যের সিত্তে, মংডু, বুথিডং, পাউকতাও এবং কিয়াউকতাও শহর এবং বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের ২৫ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জোরপূর্বক নিয়োগের ১১টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী ২০১০ সালের পিপলস মিলিটারি সার্ভিস আইন সক্রিয় করে। এর ফলে বর্তমান জরুরি অবস্থার সময় সামরিক বাহিনী ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের পাঁচ বছর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক নিয়োগের অনুমতি দেয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও জানায়, সামরিক জান্তা ঘোষণা করেছিল যে এপ্রিলে মাসিক পাঁচ হাজার কোটা দিয়ে বাধ্যতামূলক নিয়োগ শুরু হবে, তবে রাখাইন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ শুরু করে।

সাক্ষাত্কার নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বুথিডং টাউনশিপের গ্রামগুলোতে অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী দেড়শর বেশি রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে।

২২ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে বুথিডং শহরে লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সৈন্যরা তাকে এবং আরও ৩০ জন যুবককে বন্দুকের মুখে অপহরণ করে।

তিনি বলেন, 'আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সবচেয়ে ছোট ছেলেটির বয়স ১৫ বছর। তিনি বলেন, 'আমাদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী তিনজন রিক্রুট ছিল। আমাদের আটক করে মিলিটারি ব্যাটালিয়নে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা রোহিঙ্গাদের তালিকা দেখেছি, যাদের রিক্রুট করা হবে। ওই অঞ্চলের সব রোহিঙ্গা যুবককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।'

মার্চ মাসে মংডু শহরে আরও অভিযান চালানো হয়। কা নিইন তান গ্রাম থেকে অনেককে অপহরণ করা হয়। যাদের মধ্যে ২৪ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি বলেন, অফিসাররা তাদের বলেছে, 'মংডু রক্ষা করা তোমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।'

এইচআরডব্লিউর মতে, বর্ণবাদ ও নিপীড়ন ব্যবস্থার অধীনে আনুমানিক ৬ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্যে রয়ে গেছে, যার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে উন্মুক্ত ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি রাখা হয়েছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকার  রোহিঙ্গাদের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ ও ত্রাণ সহায়তায় অবরোধ আরোপ করে।

Comments

The Daily Star  | English
Tariffs

Economic lessons from the tariff war

Our understanding of tariffs might not be complete.

9h ago