নির্বিচারে রোহিঙ্গা হত্যা: এখন তাদের কাছেই সহায়তা চায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা

rohingya influx
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। রয়টার্স ফাইল ছবি

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হাজারো রোহিঙ্গা হত্যা করেছে এবং এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লাখো সদস্যকে পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। প্রায় সাত বছর আগে থেকে পরিকল্পিত ভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন ও নির্যাতন শুরুর পর এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশটির সামরিক জান্তা এই নৃগোষ্ঠীর সহায়তা চাইছে। 

আজ সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসির সাংবাদিকরা জানতে পেরেছেন, সম্প্রতি অন্তত ১০০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একাধিক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান লড়াইতে সামরিক শক্তিমত্তা বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এই ১০০ জন রোহিঙ্গাকে সুরক্ষিত রাখতে তাদের নাম-পরিচয় বদলে দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে, সেনা কর্মকর্তারা তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে এসে অপেক্ষাকৃত তরুণ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তারা নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে যেতে পারেন না।

রয়টার্স ফাইল ফটো

২০১২ সালে অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে বসবাসরত হাজারো রোহিঙ্গাকে আলাদা করে কিছু ক্যাম্পে এনে রাখা হয়। এসব ক্যাম্পে তারা মানবেতর পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন। ২০১৭ সালের আগস্টে সামরিক বাহিনীর 'নির্মূল' অভিযানের মুখে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যায়। এ সময় হাজারো রোহিঙ্গাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। তাদের গ্রামগুলো আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও, এখনো প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা সেখানে টিকে আছে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার কার্যক্রম এখনো চলছে।

সম্প্রতি আরাকান আর্মি নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে রাখাইন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূখণ্ডের দখল হারানোর পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে।

রোহিঙ্গাদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ হারানো ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টার উদাহরণ—এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।

দেশের অন্যান্য অংশেও ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশটির সামরিক জান্তা। শনিবার পূর্বাঞ্চলে থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ শহর মায়াবতীর দখল হারিয়েছে জান্তা। বাণিজ্যিককেন্দ্র হিসেবে এই স্থলবন্দরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সাম্প্রতিক সংঘর্ষগুলোতে সামরিক জান্তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সেনাও হারিয়েছে। বিরোধী পক্ষের হাতে তারা নিহত, আহত হয়েছেন এবং কেউ কেউ আত্মসমর্পণ বা এমন কী, বিরোধী পক্ষেও যোগ দিয়েছেন। যার ফলে নতুন সেনা খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে জান্তা।

রোহিঙ্গারাও বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত। তারা আশঙ্কা করছেন, জান্তার পক্ষে যুদ্ধ করতে যেয়ে তারাও প্রাণের ঝুঁকিতে থাকবেন।

বিবিসি জানতে পেরেছে, নতুন রোহিঙ্গা সেনাদের বন্দুকে গুলি ভরা ও গুলি ছোড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মূলত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রথাগত অস্ত্র বিএ ৬৩ রাইফেলের ব্যবহার শিখছেন তারা।

হাত বেঁধে রাখা মুসলমান রোহিঙ্গাদের পাহারা দিচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। ফাইল ছবি: রয়টার্স

তবে সামরিক বাহিনী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন বিবিসিকে জানান, রোহিঙ্গাদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।

তিনি জানান, রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে পারে, সে উদ্দেশে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা। প্রায় তিন বছর ধরে মিয়ানমারে জ্বলছে গৃহযুদ্ধের আগুন।

বিবিসির সাক্ষাৎকারে পাঁচটি ভিন্ন ক্যাম্পের সাত রোহিঙ্গার প্রত্যেকেই নিশ্চিত করেন, অন্তত ১০০ জন রোহিঙ্গাকে এ বছর সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেশটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করছে, বিশেষত, দেশটির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে—যাদের বেশিরভাগই বিদ্রোহীদের পক্ষে।

Comments

The Daily Star  | English
Int’l firms to be hired to recover laundered money

Foreign firms to be hired to recover laundered money

A meeting between BFIU and managing directors of the banks made the decision

13h ago