যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

আগামী মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানান বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান। ছবি: স্টার

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, ক্রেতাদের হাত-খোলা খরচ ও মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

২০২৩ সালে এ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৫ শতাংশ। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম দুই মাসে এই হার ১৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এ বছর শেষে এর পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।'

করোনা মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা কম খরচ করায় অনেক পোশাক অবিক্রীত থেকে যায়। ফলে সেখানকার ব্র্যান্ডগুলো গত দুই বছরে সারা বিশ্ব থেকে কম পোশাক আমদানি করে।

গত বছরও এমন পরিস্থিতি অব্যাহত ছিল। মহামারির বিপর্যয়ের পরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বহু দশকের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে যায়। এটি ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

গত বছরের নভেম্বরে বিক্রি বাড়তে শুরু করলে পণ্যের মজুদ কমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে পোশাকের কার্যাদেশ বাড়তে থাকে।

ফারুক হাসান আরও বলেন, 'গত বছর প্রায় প্রতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছিল। এ বছর শুরু থেকেই তা বাড়ছে।'

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১৮ কোটি ডলার। বস্ত্র ও পোশাকের মোট চালান ছিল ১২১ কোটি ডলার, যা ১৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে চীন ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। তবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ।

রপ্তানিকারকদের মতে, প্রতিযোগিতামূলক দাম ও সময় মতো পণ্য সরবরাহ করায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য আকর্ষণীয় সোর্সিং গন্তব্য। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রেতাদের বৃহত্তম বাণিজ্য সংস্থা ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ) গত ২০ মার্চ পূর্বাভাসে বলেছে, চলতি বছর খুচরা বিক্রি আড়াই শতাংশ থেকে সাড়ে তিন শতাংশের মধ্যে বাড়বে। এটি পাঁচ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে পাঁচ দশমিক ২৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এটি হবে আমেরিকার অর্থনীতিতে ক্রেতাদের শক্তিশালী ভূমিকার কারণে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনআরএফ প্রেসিডেন্ট ও সিইও ম্যাথিউ শায় বলেন, 'ক্রেতাদের আর্থিক অবস্থা মার্কিন অর্থনীতিতে শক্তি যোগাচ্ছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে বছরের শেষ নাগাদ মাঝারি আকারে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি হবে।'

২০২৪ সালের বিক্রয় পূর্বাভাসে ২০২৩ সালের তিন দশমিক ছয় শতাংশ বার্ষিক বিক্রয় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও, ১০ বছরের প্রাক-মহামারি গড় বার্ষিক বিক্রয় প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ছয় শতাংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে এই পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

নন-স্টোর ও অনলাইন বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত থেকে নয় শতাংশের মধ্যে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি এক দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে এক দশমিক ৫০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। ২০২৩ সালে নন-স্টোর ও অনলাইন বিক্রি ছিল এক দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার।

এনআরএফ ধারণা করছে, পুরো বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় দুই দশমিক তিন শতাংশ হবে। এটি ২০২৩ সালের আড়াই শতাংশের তুলনায় কম। তবে চাকরির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য তা যথেষ্ট শক্তিশালী।

চাঙা অর্থনীতি, শ্রম ও পণ্যের বাজারে আরও ভারসাম্য এবং আবাসন খরচ কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও আগের বছরের তুলনায় দুই দশমিক দুই শতাংশ কমবে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এনআরএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যাক ক্লেইনহেনজের প্রশ্ন, 'শেষ পর্যন্ত এ বছর ক্রেতারা খরচের বিষয়ে কি দাপট বজায় রাখতে পারবেন?'

তার ভাষ্য, 'বেশ কয়েকটি জরিপে খরচের বিষয়ে ক্রেতাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে। তবে কঠোর ঋণ ব্যবস্থা ও মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকে কষ্টে আছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Will protect investments of new entrepreneurs: Yunus

Yunus held a meeting with young entrepreneurs at the state guest house Jamuna where15 male and female entrepreneurs participated

5h ago