১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়

পোশাক রপ্তানি
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা বর্তমানে নানান সংকটে পড়েছে। তবে কারখানা মালিক ও ব্যবসায়ী নেতারা এ বিষয়ে আশাবাদী।

এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের কারখানার জন্য সরকারের নীতি সহায়তা, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও সার্বিক নিরাপত্তা আশা করছেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করেছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

দেশে সংকটের মধ্যে আছে—দুর্বল ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশ, উত্পাদন ও জাহাজীকরণে বাধা এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ ঘাটতি।

বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ ও রপ্তানির মূল বাজারগুলোয় পোশাক পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

এ ছাড়াও, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় এলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা তুলে নেওয়া হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) হিসাবে এই সুবিধা সাত দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে ফিরে আসছেন। সরকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়লে রপ্তানি লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।'

২০২২ সালে বিজিএমইএতে থাকাকালে রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন ফারুক হাসান। এটি অর্জনে পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, নতুন বিনিয়োগ, পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ এবং কৃত্রিম সুতায় বিনিয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বিজিএমইএ।

বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।

ফারুক হাসান আরও বলেন, 'পর্যাপ্ত গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে এ খাতে নতুন বিনিয়োগ আসবে। অনেক উদ্যোক্তা কৃত্রিম সুতার পোশাক, জ্যাকেট, অ্যাক্টিভওয়্যার, জার্সি, স্কিওয়্যার ও স্পোর্টস পণ্যের মতো দামি পোশাক তৈরিতে বিনিয়োগ করবেন।'

মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি বিজয়ী হলে পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা আছে। তখন চীন থেকে পোশাকের কার্যাদেশ বাংলাদেশে চলে আসতে পারে।

তার মতে, এসব পোশাক প্রচলিত পোশাকের তুলনায় বেশি দাম পাবে।

জাপান, ভারত, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মতো প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি এসব অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বর্তমান গতিতে চললে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।'

'২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নতির কারণে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের ওপর আস্থা রেখেছেন।'

ফারুক হাসান জানান, বিশ্ববাজারের চীনের পোশাক বিক্রি কমছে। শুধু চীন নয়, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ইথিওপিয়া ও শ্রীলঙ্কা থেকেও পোশাকের কার্যাদেশ বাংলাদেশে আসছে।

ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কল্পন হোসেনও মনে করেন, প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারগুলোই এই লক্ষ্য অর্জনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।

'লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হতে পারে,' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'লক্ষ্য অর্জন চ্যালেঞ্জিং হবে, তবে তা সম্ভব। আমাদের সামর্থ্য আছে এবং তা কাজে লাগাতে হবে।'

শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক দশকে দেশের পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।'

'পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ, সরকারি নীতি ও আর্থিক সহায়তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শিল্প নিরাপত্তা পেলে আগামী ছয় বছরে পোশাক রপ্তানি আরও বাড়তে পারে।'

বিজিএমইএর অধুনা বিলুপ্ত পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম মনে করেন, প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।

তিনি বলেন, 'পর্যাপ্ত গ্যাস পেলে অনেকে কারখানা বড় করবেন বা বিনিয়োগ বাড়াবেন।'

তবে সময়মতো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।

তার ভাষ্য, 'যখন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তখন দেশের ব্যবসার পরিবেশ ভিন্ন ছিল। এখন তা বদলে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জন চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে রপ্তানি ৭০ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।'

বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ার সঙ্গে দেশের ভেতরে সংকট এই লক্ষ্যমাত্রাকে কঠিন করে তুলছে বলে মনে করছেন তিনি।

মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি বিজয়ী হলে পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা আছে। তখন চীন থেকে পোশাকের কার্যাদেশ বাংলাদেশে চলে আসতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser returns home after joining COP29 in Baku

Chief Adviser Professor Muhammad Yunus returned home this evening wrapping up his Baku tour to attend the global climate meet Conference of Parties-29 (COP29)

1h ago