চট্টগ্রামে অরক্ষিত খাল-নর্দমায় মৃত্যু, এবার কার পালা

চট্টগ্রাম নগরীর অরক্ষিত ড্রেন। ছবি: স্টার

প্রতি বছর অরক্ষিত নর্দমা ও খালে পড়ে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে অনেক মানুষ হতাহত হলেও, কর্তৃপক্ষের টনক যেন নড়ছেই না। 

এখনো নগরীর বিভিন্ন এলাকার নর্দমা ও খালগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত রয়ে গেছে।

অরক্ষিত নর্দমা ও খালে পড়ে গিয়ে ২০১৭ সাল থেকে নগরীতে এই পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ৮ জন মারা গেছে এবং অনেকে আহত হয়েছে।

২০২১ সালের ২৫ আগস্ট সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টিতে বন্দরনগরীর মুরাদপুর মোড়ের রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তার পাশের খালটিও প্লাবিত হওয়ায় পথচারীদের পক্ষে রাস্তা থেকে খালটিকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। 

সেদিন সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ (৫০) মাইজভাণ্ডার দরবারে যাওয়ার উদ্দেশে ফটিকছড়ি উপজেলাগামী বাস ধরতে মুরাদপুরে যান। খাল ও রাস্তার মাঝের সীমানা সম্পর্কে তার জানা না থাকায় তীব্র পানির স্রোতে পিছলে খালে পড়ে গিয়ে ডুবে যান তিনি। 

দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা কয়েকদিন ধরে তাকে খুঁজতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি সালেহ আহমেদকে।

চট্টগ্রাম নগরীর অরক্ষিত ড্রেনের পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: স্টার

গত রোববার সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালটি এখনো অরক্ষিত অবস্থায় আছে। এতে আসন্ন বর্ষায় আবার দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন সিরাজি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পথচারীরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে এখানে চলাচল করছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই যেন এখানে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়।'

মুরাদপুর মোড়ে অরক্ষিত খালের পাশ দিয়ে ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির স্টাফ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুষ্ক মৌসুমেও খোলা খালের পাশ দিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটা ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২১ সালে এই খালে পড়ে একজন নিখোঁজ হন। তাকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ খালটি এখনো অরক্ষিত।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি এই বর্ষা মৌসুমের আগে খালটিতে একটি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব।'

শুধু তাই নয়, মুরাদপুর থেকে বহাদ্দারহাটগামী সড়কের পাশে নর্দমাও অরক্ষিত অবস্থায় দেখা গেছে। এমনকি ষোলশহর থেকে মুরাদপুরগামী সড়কের পাশের নর্দমার অনেক অংশই উন্মুক্ত ও অরক্ষিত দেখা যায়। পথচারীরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে অরক্ষিত নর্দমা ও খাল গুলির পাশ দিয়ে চলাচল করছেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কর্মকর্তাদের মতে, নগরীতে মোট ৫৭টি (১৬১ কিলোমিটার) খাল এবং ৭৬৫ কিলোমিটার নর্দমা আছে। চসিক ২০২১ সালে নগরীর নর্দমা, খাল ও ফুটপাতের ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোর ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। 

জরিপের পর মোট ৫ হাজার ৫২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করা হয়েছিল। স্পটগুলোর মোট আয়তন ছিল ১৯ কিলোমিটার, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোকে সুরক্ষিত করার কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

যোগাযোগ করা হলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অরক্ষিত নর্দমায় স্ল্যাব স্থাপন এবং খালের পাশে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলমান। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ নর্দমাগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশ স্থানে স্ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ খালের প্রায় ৭০ শতাংশ স্থানে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।'

মুরাদপুর থেকে ষোলশহর সড়কে অরক্ষিত নর্দমা ও খালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বন্দরনগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের একটি মেগাপ্রকল্পের আওতায় সিডিএ রাস্তার খাল ও প্রাথমিক নরদমাগুলোর কাজ করছে। তাই এখানকার নর্দমা ও খালগুলোতে স্ল্যাব ও প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করা সিডিএর দায়িত্ব।'  

যোগাযোগ করা হলে সিডিএর মেগাপ্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নর্দমায় স্ল্যাব স্থাপন এবং খালে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ আমাদের প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। তা সত্ত্বেও, আমরা অনেক খালে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করছি। আমরা সম্পূর্ণ মানবিক কারণে এটি করছি।' 

তিনি আরও বলেন, 'প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর আমরা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খাল ও নর্দমাগুলো চসিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করব। তখন চসিক কর্তৃপক্ষ যদি প্রয়োজন মনে করেন এখানে নর্দমাগুলোর ওপর স্ল্যাব বসাতে পারেন এবং খালে প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করতে পারে।'

এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago