মানসিকভাবে একটু শক্ত থাকো বাবা: জলদস্যুদের হাতে বন্দি ছেলেকে মা

এমভি আব্দুল্লাহ। ফাইল ছবি সংগৃহীত

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের কয়েকজনকে গতকাল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দিয়েছে দস্যুরা।

স্বজনদের কাছে মানসিকভাবে চাপে থাকার কথা জানিয়েছেন নাবিকেরা। সেইসঙ্গে জাহাজে পানির অপ্রতুলতার কথাও বলেছেন।

জিম্মি ২৩ নাবিকের মধ্যে রয়েছেন সিফাত আরার (ছদ্মনাম) জ্যেষ্ঠ সন্তানও।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান এই মা।

জলদস্যুরাই স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে অল্প কিছুক্ষণ কথা বলার অনুমতি দিয়েছে বলে তিনি জানান।

দিনের বেশিরভাগ সময় ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত জলদস্যুদের মাঝে একটি রুমে আটক থেকে অন্য নাবিকদের মততো তার ছেলেও মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন।

এই মা বলেন, ছেলে জানিয়েছে জাহাজে ব্যবহার্য পানির অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে। তাই সীমিত পানি ব্যবহারে কড়াকড়ি করেছে দস্যুরা। সপ্তাহে একদিনের বেশি গোসল না করতে বলেছে তারা।

দিনের বেশিরভাগ সময় অন্য নাবিকদের সঙ্গে একটা রুমে বন্দি থাকতে হয় বলে জানিয়েছে ছেলে। তাদের দিকে অস্ত্র তাক করে থাকে দস্যুরা। এরকম পরিস্থিতিতে ছেলে কিছুটা মানসিক চাপে পড়েছে, তাই মা তাকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন।

'আমি শুধু ছেলেকে বলেছি, মানসিকভাবে একটু শক্ত থেকো, বাবা।'

ছেলেকে শক্ত থাকতে বললেও এই বিধবা মা যেন আর শক্ত থাকতে পারছেন না।

করোনা মহামারীতে স্বামীকে হারানোর পর দুই ছেলেকে ঘিরে কিছুটা গুছিয়ে উঠেছিলেন তিনি। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় নতুন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তিনি।

দিনরাত প্রার্থনা করছেন যাতে অচিরেই এই সংকট কেটে যায়, সুস্থ শরীরে যাতে ছেলে ফিরে আসে।

এই মায়ের মতো আরও দুই জন নাবিকের স্বজন জানিয়েছেন, গত দুই দিনে দস্যুদের অনুমতি পেয়ে নাবিকেরা যোগাযোগ করেছে।

জাহাজে থাকা আরেক নাবিকের ভাই জানিয়েছেন, গতকাল সকালে তার ভাইকে দস্যুরা ফোনে কথা বলতে দিয়েছেন।

তার ভাইয়ের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতদিন ধরে বন্দি দশায় থেকে তার ভাইয়ের এই সমস্যা প্রকট হয়েছে। পানির স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় গোসল করাও সীমিত করা হয়েছে।

ভাই জানিয়েছেন তাদের জাহাজ থেকে বেশ কিছুটা দূরে নৌবাহিনীর একটা জাহাজ অবস্থান করছে।

গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজে থাকা ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে।

ঘটনার নয় দিনের মাথায় গত বুধবার তৃতীয় একটি পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

এই যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে জিম্মি নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার পথ সুগম হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যিক জাহাজে কাজ করা নাবিকেরা।

জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়া উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙ্গর করে আছে। 

(নাবিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় তাদের নাম ও স্বজনদের নাম প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি)

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

1h ago