সাংবাদিকতায় আবুল মনসুর আহমদের চিন্তার নিজস্বতা

আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতা নিয়ে আলাপ করতে গেলে আইন ও রাষ্ট্র  বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরি। কারণ নিজেও ওকালতি করেছেন। সব সাংবাদিকদের আইন বিশেষজ্ঞ হওয়াটা জরুরি না হলেও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন নিয়ম ও আইন সম্পর্কে জানাটা অতীব প্রয়োজন। না হয় 'অমুকের বিরুদ্ধে তমুক বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে' বলা ছাড়া সাংবাদিকদের আর কিছুই করার থাকবে না।

তার সংবাদ চর্চার প্রেক্ষাপট আজ থেকে বহু আগের হলেও সূক্ষ্মভাবে বিবেচনা করলে, তার সাংবাদিক হিসেবে লেখালেখির প্রাসঙ্গিকতা আজকেও খুঁজে পাওয়া যায়। তার সাংবাদিকতা চর্চার লেখালেখির ২৫ বছরকে চার ভাগে ভাগ করলে প্রথম ভাগে তিনি মাসিক 'আল-এসলাম'-এ প্রবন্ধ ও 'সওগাত'-এ গল্প লিখতে শুরু করেন। তার লেখা ছোট আকারের সম্পাদকীয় মন্তব্য, দার্শনিক ও রাজনৈতিক প্রবন্ধগুলো মুসলিম সাংবাদিকদের নজর কাড়ে।

এখানে মুসলিম সাংবাদিকদের নজর কাড়ার বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সাংবাদিকতার ভাষা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে পুরো পৃথিবীর সব সংবাদ মাধ্যমই একমত যে, সংবাদ মাধ্যমের ভাষা হওয়া উচিত স্ব স্ব সংস্কৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ সহজ ও সবার উপযোগী। ভারতের ভিন্ন সংস্কৃতিতে সংবাদ মাধ্যমের যেই ভাষা রয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে একই রকম ভাষায় সংবাদ চর্চা করা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ যদি সংবাদের ভাষায় নিজেদের না-ই দেখতে পান, তবে তারা কতটুকু গ্রহণ করবেন? আর তাহলে কি সংবাদ মাধ্যমের যে গণ মানুষের কণ্ঠস্বর হওয়ার চেষ্টা, তা-ই বা কতটুকু সফল হবে?

সাংবাদিকতা চর্চা করতে গিয়ে আবুল মনসুর আহমদকে এই সমস্যা নিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। তিনি সংবাদ মাধ্যমে হিন্দু আধিপত্যের গণ্ডি থেকে বের হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। সেসময়কার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রচলিত ভাষার সঙ্গে আবুল মনসুর আহমেদের লেখা পাশাপাশি রাখলেই বোঝা যায়, তিনি কোনোভাবেই সবার পথে হাটেননি। মুসলিমদের 'মেজরিটি'কে অস্বীকার করে তৎকালীন শিক্ষিত অভিজাত সমাজের ভাষায় সংবাদ চর্চা করার ব্যাপারে তার অনাগ্রহ ছিল স্পষ্ট।

এমনকি তিনি বেশ স্পষ্ট ভাষায় আত্মকথা বইতে লিখেছিলেন, 'এ সময় বাংলা ভাষাকেও আমাদের "মুসলমানি" করে নিতে হতো; যেমন-'জল'-কে 'পানি' 'ঈশ্বর'-কে 'আল্লাহ', 'পৌরহিত্য'-কে 'এমামতি', 'অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া'-এর পরিবর্তে 'কাফন-দাফন' ইত্যাদি''। অর্থাৎ স্বকীয় ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যাপারে একজন আদর্শ সাংবাদিকের যতটুকু তৎপর থাকা দরকার, তার পুরোটাই আবুল মনসুর আহমেদের মধ্যে ছিল, যার প্রাসঙ্গিকতা আজও বিদ্যমান।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ব্যাপারটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। উকিল কিংবা সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদের পাশাপাশি সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদও এই ঐতিহাসিক সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এই মুহূর্তের সাংবাদিকতাই শুধু নয়; বরং সংস্কৃতি চর্চা বিষয়ক আলাপেও আমাদের এই অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। মুশকিল হলো, আমাদের সামনে 'সংখ্যাগরিষ্ঠতা' বা 'মেজরিটি' শব্দটি অনেক বেশি চর্চিত হলেও 'সংস্কৃতি' বা 'কালচার' নিয়ে খুব একটা গঠনমূলক আলাপ নেই। আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতার একটি স্বতন্ত্র বিষয় হলো, তিনি সাংবাদিকতার কোনরূপ নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটিয়েও সংস্কৃতি চর্চা করেছেন। একটু খোলাসা করা যাক।

আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় সংস্কৃতি নিয়ে বিরাট বিভ্রান্তি রয়েছে। এত বছর ধরে এই বিভ্রান্তি চলছে যে, অ্যাকাডেমিক পড়ার একটি বিষয় হয়ে উঠেছে 'কালচারাল হেজিমনি'। ইংরেজি হোক আর বাংলায় হোক, এই বিভ্রাট মূলত এক অভিজাত শ্রেণির ঠিক করে দেয়া সংস্কৃতি নিয়ে। পূর্বে আবুল মনসুর আহমদের সময় যা আমরা হিন্দু আধিপত্য হিসেবে দেখতে পাই। দিনে দিনে এই আধিপত্যের হোতাদের নাম পাল্টে গেলেও, কালচারাল ইজারাদারদের স্বভাব একই থেকে গেছে।

এই 'কালচারাল ইজারাদার' শ্রেণি আমাদের ঠিক করে দেন, কোন চর্চাটা আমি করবো বা আমার কালচার কোনটা হবে। আবার সেটা ঠিক করতে গিয়ে তারা অন্য দেশের কালচারকে ধারও করে থাকেন। তার মানে এটা বোঝা যায়, অন্তত একশ বছর ধরে কালচার বোঝার ভাষা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়নি। আবুল মনসুর আহমদের প্রাসঙ্গিকতা এখানেই। কারণ সংস্কৃতি বিষয়ে আমরা কতটা উদ্বিগ্ন তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই যে, আমাদের কালচার বোঝার ভাষা নেই।

আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতায় কালচার ও ভাষার আলাপ অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ । কারণ বাংলার আসল জনগণকে বাইরে রেখে যেই ভাষা চর্চা করে আসা হয়েছিল, সেই ভাষা যে অন্তত সবার উপযোগী ভাষা হতে পারে না, তা স্পষ্টভাবেই উচ্চারণ করেছিলেন।

আমাদের সংকটের মূলোৎপাটনে সাংবাদিকতার জায়গা থেকে হাত দিয়েছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। তিনি 'আমাদের ভাষা' নামে একটা প্রবন্ধে দেখিয়েছিলেন দেশভাগ হওয়ার আগে এই অঞ্চলে ভাষার চর্চা কেমন ছিল, আর দেশভাগের রাজনীতি কীভাবে এই ভাষা পাল্টে দিল। বর্তমানেও পশ্চিমবঙ্গের ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশের ভাষার অমিল নিয়ে যে রূপ বাতচিত দেখা যায়, তাতে ভাষার মধ্যকার রাজনীতি উঠে আসে না বললেই চলে। তাছাড়া কোন অদৃশ্য কারণে বাংলা ভাষার আলোচনায় ভারতের সাহিত্যিকদের মতই শেষ মতামত হিসেবে ধার্য করার প্রবণতা আমাদের মধ্যে আছে। 

আবুল মনসুর আহমদ বেশ স্পষ্ট ভাষায় লিখেছিলেন, 'দ্বিজেন ঠাকুর রবিঠাকুর ও শরৎচন্দ্রের চেষ্টায় বাংলা ভাষা বড় জোর পশ্চিম-বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভাষা হইতে পারিয়াছিল। প্রকৃত জনগণের ভাষা হইতে পারে নাই। কারণ বাংলার আসল জনগণ যে মুসলমানরাও এবং তাদের ভাষাও যে জনগণের ভাষা, এ সত্য হয়ত ঐ মনীষীদের নিকট ধরাই পড়ে নাই'। ১৯৬৬ সালে লেখা এই প্রবন্ধ কতটা প্রাসঙ্গিক বক্তব্য তা বলে দেবার প্রয়োজন পরে না। আবুল মনসুর আহমদের এই মতের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। প্রায় সত্তর বছর পর প্রকাশ পাওয়া তার পিএইচডি গবেষণার উপর লেখা 'পলিটিকাল পার্টিজ ইন ইন্ডিয়া' বইতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের লেখায় সাম্প্রদায়িকতার আধিপত্য ও 'মুসলিমবিরোধীতা' বেশ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। 

তাই আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতায় কালচার ও ভাষার আলাপ অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ । কারণ বাংলার আসল জনগণকে বাইরে রেখে যেই ভাষা চর্চা করে আসা হয়েছিল, সেই ভাষা যে অন্তত সবার উপযোগী ভাষা হতে পারে না, তা স্পষ্টভাবেই উচ্চারণ করেছিলেন। বর্তমানের সাংবাদিকতা চর্চায় এই কথাই এখন ধর্মীয় বাণীর মত সত্য হিসেবে নতুন করে আবির্ভূত হয়েছে। কারণ 'ভিউ' বাণিজ্যের সময়ে সংবাদ মাধ্যমের যেই ভাষা আমরা দেখতে পাই, তা যে অভিজাত তরুণদের একটি শ্রেণির ভাষা মাত্র তা সহজেই অনুমেয়। সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা সংবাদ মাধ্যমের ভাষার এই সংকট বিষয়ে তার ভাবনা শত বছরেও প্রাসঙ্গিক।


আবুল মনসুর আহমেদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- সময়কে ধারণ করতে পারা। যে কোন সৃষ্টিশীল মানুষেরই নিজের সময়কে ধরতে পারার প্রয়োজন হয়। মুশকিল হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা সঠিকভাবে সময়কে পরিলক্ষিত করেন, তারা সেটাকে ধরে রাখতে সক্ষম হন না। ব্যাপারটাকে সহজভাবে বুঝতে হলে ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারের একটি কথা ধার করতে হয়। যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ইতিহাসের ঘটনাগুলো কেন মানুষের কাছে ঠিকঠাকভাবে পৌঁছায়নি, তখন তিনি বলেছিলেন, 'এই সময়ে যারা ঘটনার সাথে থাকেন, তারা লেখেন না বা লিখতে পারেন না। আবার যারা সময়ের ঘটনার সঙ্গে থাকেন না, তারাই বরং দূর থেকে একটা গল্প তৈরি করেন'।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে আবুল মনসুর আহমদ একদমই ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব। কারণ পাকিস্তানের জন্ম থেকে শুরু করে প্রায় অর্ধ শত বছর তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ তথা তিনটি দেশ তিনি জন্ম হতে দেখেছেন এবং এই তিনটি দেশের জন্মপূর্বক রাজনীতিতে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তাই তার লেখাগুলো আলাদা গুরুত্ব বহন করে। সঙ্গে এই বার্তাও দেয় যে, সাংবাদিকতা চর্চায় সময়কে ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু।

আবুল মনসুর আহমদ যখন সাংবাদিক তখনও তিনি মাঠের খবর জানেন, যখন তিনি সাহিত্যিক তখনও তিনি মাঠের রাজনীতির কথা জানেন। তাই তার পক্ষেই লেখা সম্ভব হয়েছিল ফুড কনফারেন্সের মত 'পলিটিক্যাল স্যাটেয়ার'।

স্যাটেয়ারের প্রসঙ্গ আসলে সবসময়ই আবুল মনসুর আহমদের কথা আমাদের সামনে আসে। বিশেষ করে তার স্যাটেয়ারের ভাষা ছিল অনবদ্য। তিনি যাদের সঙ্গে চলাফেরা কিংবা ওঠাবসা করতেন, স্যাটেয়ার গল্পে তাদেরকেও তিনি ছেড়ে কথা বলেননি। সাংবাদিকতা চর্চায় যেটি এখনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিক হিসেবে আপনার সঙ্গে যার বা যাদের সখ্যতা তৈরি হয়েছে, সাংবাদিকতা চর্চার সময় তাদেরকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তাঁর এই নীতি আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। তবে তার স্যাটেয়ারের ভাষা যে সবসময় স্যাটেয়ারধর্মী গল্পেই আবদ্ধ থেকেছে তা কিন্তু নয়; বরং সাংবাদিকতা চর্চারত অবস্থায় সিরিয়াস লেখাগুলোতেও উঠে এসেছে তার নিজস্ব রসবোধ। যা চিরায়ত সাংবাদিকতার কাটখোট্টা ভাষাকে আরও বেশি প্রাঞ্জল করে তুলেছে।

আবুল মনসুর আহমদের জীবনের বড় অংশজুড়েই তিনি রাজনীতি করেছিলেন। ওকালতি ও সাহিত্যের বাইরে গিয়ে সাংবাদিকতা যতটুকু সময়েই করেছেন, তার প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। কিন্তু আবুল মনসুর আহমদর যে একান্ত চিন্তার একটি নিজস্বতা ছিল, তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও সাহিত্যে। এই প্রসঙ্গকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলছেন, 'আবুল মনসুর আহমেদ নিরপেক্ষ ছিলেন না। কারণ তার লেখাগুলোতে (বিশেষ করে সাংবাদিকতা চর্চার সময়) নিজের একটা শক্ত অবস্থান পরিষ্কার করার প্রবণতা তার ছিল'। অর্থাৎ আবুল মনসুর আহমদ মূলত সংবাদ সংগ্রহ বা একটি ঘটনাকে সবার সামনে দেখানোর মত 'মামুলি' সাংবাদিকতা চর্চায় বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি কোন একটি ইস্যুকে তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখানোর চেষ্টা করতেন, কালেভদ্রে পঞ্চাশ বছরের রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে সমাধানও দেয়ার চেষ্টা করতেন।


আবুল মনসুর আহমেদের সাংবাদিকতা চর্চার প্রধান মাধ্যম অর্থাৎ লেখাগুলোর দিকে যদি আমরা নিবিড়ভাবে দৃষ্টি দেই, তবে সেখানে তার নিজস্ব 'ডিসকোর্স' প্রকাশ করার একটি প্রবণতা দেখতে পাই। তিনি যখন 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর' বইতে কোন ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তখন সেখানে ঘটনাটিকে নিছক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা না করে; বরং সময়ের আয়নায় সেটিকে রেখে একটি কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরো ঘটনাকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সাংবাদিকতা চর্চা করতে গিয়ে যে সব লেখা তিনি লিখেছিলেন, সেগুলোতেও এই ছন্দের পতন ঘটেনি।

'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর' বইতে তিনি শিরোনাম ও উপশিরোনাম দ্বারা যেভাবে ঘটনার কালতামামি বর্ণনা করছেন, ঠিক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যে সব লেখা তিনি লিখেছিলেন, সেগুলোর শিরোনাম ও প্রথম অনুচ্ছেদই- ঘটনাকে বর্ণনা করার পাশাপাশি তিনি কোন দৃষ্টিতে ঘটনাকে বর্ণনা করতে চলেছেন তার ইঙ্গিত দিতেন। এবং সেই লেখাগুলোর নকশা (ফরম্যাট) খেয়াল করলে দেখতে পাবো যেন সেসব লেখাগুলো আধুনিক সময়ের সাংবাদিকতার বেশ কিছু তত্ত্ব মেনে তৈরি করা। উল্টো পিরামিড পদ্ধতিতে শুরুতেই আকর্ষণের মূল বিষয়কে তুলে আনা এবং ধাপে ধাপে পাঠকের কাছে আকর্ষিত বিষয়গুলো বর্ণনা করার ফর্মুলা তিনি অনেক লেখাতেই ব্যবহার করেছেন। এমনকি বেশিরভাগ লেখাতেই তিনি মূল বিষয়ের উপর একটি ঘটনা উল্লেখ করে বিশ্লেষণের দিকে গিয়েছেন। যেই ফর্মুলা এখনও পৃথিবীর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগেই পড়ানো হয়ে থাকে।

এই ফর্মুলা ব্যবহার করার কারণে লেখাগুলো অনেক বেশি গোছানো ও পাঠ উপযোগী হয়ে উঠেছিল। তবে মজার বিষয় হলো, আবুল মনসুর আহমদ সুকৌশলে তত্ত্ব এড়িয়ে এমনভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, যেন এই লেখা যে কেউ পড়েই বুঝতে পারে।

আবুল মনসুর আহমদের লেখার মধ্যে যে অদ্ভুত এক ভাষার প্রাঞ্জলতা ছিল, তা এত বছর পর পড়লেও বোঝা যায়। তাই বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলেও আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতা যে শত বছর পরেও প্রাসঙ্গিক, তা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা না। তার সাংবাদিকতায় নিবিড়ভাবে যে প্রদীপ জ্বালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, তা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষদের আলোকচ্ছটা দিয়ে চলেছে।

(শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে ৫ম বারের মত ২০২৩ সালের আবুল মনসুর আহমদ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর লেখাটি প্রকাশ করা হলো।)

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

5h ago