আবারও হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব, নেতানিয়াহু বলছেন ‘অবাস্তব দাবি’

গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি স্থল হামলার সময় আকাশে ধোঁয়া উড়ছে। ছবি: রয়টার্স (১৪ মার্চ, ২০২৪)
গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি স্থল হামলার সময় আকাশে ধোঁয়া উড়ছে। ছবি: রয়টার্স (১৪ মার্চ, ২০২৪)

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হামাস একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। এই প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি বন্দি ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে এই প্রস্তাবের দাবিগুলোকে অবাস্তব বলে অভিহিত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।

আজ শুক্রবার রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

রয়টার্সের হাতে এই প্রস্তাবের একটি কপি এসেছে। হামাস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলি নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আটক ৭০০ থেকে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবেন। ফিলিস্তিনি বন্দিদের অন্তত ১০০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

ইসরায়েলের নারী সেনারাও এই পর্যায়ে মুক্তি পাবেন।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, হামাসের উপস্থাপন করা নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি 'অবাস্তব দাবির' ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও জানায়, এ বিষয়ে শুক্রবার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ও বর্ধিত নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার কাছে একটি ব্রিফিং দেওয়া হবে।

মিশর ও কাতার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে শিগগির যুদ্ধবিরতি চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

হামাস বলেছে, গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে নেতানিয়াহু হামাসের দাবিগুলো নাকচ করে দেওয়ায় আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে।

হামাসের দাবির মধ্যে আছে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, দক্ষিণ গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজা ও গাজার কেন্দ্রে ফিরতে দেওয়া এবং ত্রাণের প্রবাহে কোনো বাধা না দেওয়া।

এর আগে সর্বশেষ প্যারিসে আয়োজিত আলোচনার ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে হামাসকে ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবে প্রতি ১০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির বিনিময়ে একজন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির কথা বলা হয়েছিল। এবারের চুক্তিতেও একই অনুপাত বজায় রাখা হয়েছে।

ইসরায়েল ফেব্রুয়ারির সেই খসড়া চুক্তি নাকচ করে জানিয়েছিল, 'হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত' তারা যুদ্ধও চালিয়ে যাবে। অপরদিকে, হামাস চাইছে চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে।

সর্বশেষ প্রস্তাবে মতে, হামাস বলেছে, প্রাথমিকভাবে বন্দি ও জিম্মি বিনিময়ের পর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের গাজা ছেড়ে পাকাপাকিভাবে চলে যাওয়ার জন্য দুইটি সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

এটাই তাদের মূল দাবি, এবং মূলত এ দাবিকেই অবাস্তব বলছেন নেতানিয়াহু।

এবার আবার দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স (১৪ মার্চ, ২০২৪)
এবার আবার দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স (১৪ মার্চ, ২০২৪)

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, এই পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায়ে উভয় পক্ষের সব বন্দি ও জিম্মি মুক্তি পাবে। 

বৃহস্পতিবার রাতের শেষভাগে হামাস জানিয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতির একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র উপস্থাপন করেছে। এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হবে, ফিলিস্তিনিরা ত্রাণ পাবে, বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীরা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবে এবং ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

জাতিসংঘ হুশিয়ারি দিয়েছে, গাজার অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে প্রায় হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ হাজার ১৮৪ জন মানুষ। নিহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭২ হাজার ৮৮৯ জন মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

8h ago