আমের গুটি আসতে শুরু করেছে রাজশাহীতে

ছবি: স্টার

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজশাহী অঞ্চলের কিছু গাছে আমের গুটি আসতে শুরু করেছে। তবে 'প্রলম্বিত শীতের' কারণে এখনো মুকুল দেখতে পাননি অনেক আম উৎপাদক। অনেকের গাছে মুকুল এসেছে অনিয়মিতভাবে। এতে কম ফলনের আশঙ্কা করছেন উৎপাদকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মাহমুদুল ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'এই বছর আমের অফ ইয়ার।'

তার মতে, গত বছর যেসব আম গাছে প্রচুর ফল ধরেছিল, সেসব গাছে এ বছর কম ফল ধরতে পারে। এই পরিস্থিতি আবহাওয়া, পরাগায়নের সমস্যা ও রোগবালাই ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

তিনি জানান, সাধারণত ২০ শতাংশ গাছে এক বছর পর পর ফল আসে। তবে এ কারণে ফলনের তারতম্য কমই ঘটে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রীষ্মকালীন ফল আম উচ্চ তাপমাত্রা পছন্দ করে। তবে চাষের সময় খুব বেশি তাপমাত্রা ভালো নয়।'

মুকুল ও গুটি আসার সময়ের আদর্শ তাপমাত্রা ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু বর্তমানে দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাচ্ছে এবং রাতের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির আশেপাশে নেমে যাচ্ছে।

'এই চরম ওঠানামা মুকুল ও গুটির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে,' বলেন তিনি।

ছবি: স্টার

আলিম উদ্দিন আরও জানান, আমের পরাগায়নে সহায়ক মাছি, প্রধানত সিরফিড মাছি শুধু গ্রীষ্মকালেই দেখা দেয়। চাষিরা সিরফিড মাছিকে একই রকম চেহারার জন্য মৌমাছি বলে ডাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর—এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন।

গত বছর এ অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়েছিল।

গত সপ্তাহে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, চব্বিশনগর ও দরগাপাড়া এলাকার আম বাগানগুলোতে কয়েকটি গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। চাষিরা এই পর্যায়ের ফলকে 'গুটি' বলে থাকেন।

দরগাপাড়া গ্রামের আমচাষি মো. শামীম আখতার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের গ্রামের কিছু গাছে গুটি এসেছে। কিন্তু ৪০ শতাংশ গাছে মুকুলই আসেনি। কিছু গাছের মুকুল ফল না ধরেই শুকিয়ে যাচ্ছে।'

এ বছর পরাগায়নের জন্য এখনো যথেষ্ট মৌমাছি দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।

বাঘা উপজেলার আম উৎপাদক শফিকুল ইসলাম রপ্তানিকারকদের জন্য আম সরবরাহ করেন। তিনি জানান, তার ৩০০ বিঘা জমির আম বাগানে ৫০ শতাংশ গাছে মুকুল আসেনি।

ছবি: স্টার

তিনি বলেন, 'আবহাওয়ার জন্যই এরকম হয়েছে। আম গ্রীষ্মকালের ফল হলেও শীত এখনো আছে। রাতে এত ঠান্ডা থাকে যে শীতের পোশাক লাগে। আর দিন গ্রীষ্মের মতো।'

আম উৎপাদক নওগাঁর সোহেল রানা জানান, এ বছর তার ২০০ বিঘা জমির বাগানে শতভাগ গাছে মুকুল দেখা গেছে। তিনিও রপ্তানিকারকদের আম সরবরাহ করেন।

তিনি বলেন, 'আমি সারাবছর গাছের যত্ন নিই। আবহাওয়ার কারণে আগের বছরগুলোর মতো এবার একসঙ্গে মুকুল আসেনি, পর্যায়ক্রমে এসেছে। কিছু গাছে গুটিও এসেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

54m ago