চিন্তা করি চাকরি যখন শেষ হবে তখন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করব: এনবিআর চেয়ারম্যান

এনবিআর চেয়ারম্যান
রাজশাহীতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আজ প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, চাকর শেষে তিনি রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চান।

আজ বুধবার রাজশাহীতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি যে, চাকরি যখন শেষ হবে তখন একটা রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করতে হবে। সিরিয়াসলি চিন্তা করি। এটা কিন্তু আমি শুধু ফান করার জন্য বলছি না, সিরিয়াসলি চিন্তা করি।'

'এই চিন্তার পেছনে কারণ কী? খেয়াল করে দেখেন…আমরা বলছি যে, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হয়ে যাব, খুব বেশি দেরি নেই। উন্নত দেশ হতে হলে, আমাদের জনসংখ্যার যে অর্ধেক নারী আছেন, তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসতে হবে এবং তারা কিন্তু আসছেন,' বলেন তিনি।

আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, '১২ বছর আগে দেখেছি, স্কুলে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। গত কয়েকদিন আগে পত্রিকাতে দেখলাম ইউনিভার্সিটিতেও ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্র সংখ্যার কাছাকাছি চলে এসেছে। অর্থাৎ, ওই ফ্লো শুরু হয়ে গেছে। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়ে যাবে। রান্নাটা করবে কে?'

'আমি এই ব্যবসাটা করতে চাই তার কারণ, উন্নত দেশ হয়ে গেলে আপনার ঘরে রান্না, মাছ কেটে দেওয়ার জন্য লোক পাবেন না। কাজের লোক যদি না পাই এবং আমি যদি নিজে রান্না না করে অন্য কাজে সময় ব্যয় করি তাহলে বেশি আয় করতে পারি। এই অবস্থা যখন তৈরি হবে তখন লোকেদের রেস্টুরেন্টের ওপর ডিপেন্ডেন্সি বেড়ে যাবে। সব উন্নত দেশে এ রকম হয়। সেজন্য মনে হয়, রেস্টুরেন্টের ব্যবসা সামনে ভালো হবে,' বলেন তিনি।

রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও বগুড়া জেলার ব্যবসায়ী ও চেম্বার নেতারা অংশ নেন।

আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্যের আগে কয়েকজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বলেন যে, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বর্ধিতহারে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসায় টিকে থাকতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

অপরদিকে, রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ দোকান মালিকরা কোনো ট্যাক্স-ভ্যাট না দিয়েই ব্যবসা করতে পারছেন। তারা রেস্তোরাঁ ব্যবসায় সমতা আনার দাবি করেন।  

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বা তারা আর পারছেন না কোনোভাবেই, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কারণ, সবচেয়ে বেশি লাভজনক যে ব্যবসাগুলো, তার একটি গাড়ির ব্যবসা, অন্যটি রেস্টুরেন্ট।'   

'মাত্র পাঁচ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয় আপনাদের। কাজেই, ভ্যাট দেব না, ট্যাক্স দেব না এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন,' যোগ করেন তিনি।

সভায় রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি চাওয়ার মানসিকতা থেকেও সরে আসার আহ্বান জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। 

তিনি বলেন, 'আমাদের উন্নত জাতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং ভর্তুকির ওপর ব্যাপক নির্ভরশীলতা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। একদিকে বলছি, আমরা উন্নত দেশ হব, আরেকদিকে বলছি সবক্ষেত্রে ভর্তুকি দাও। এই দুটো বিষয় একসঙ্গে যায় না।'  

তিনি আরও বলেন, 'উন্নত দেশ হব মানেই আমার সক্ষমতা অনেক বেশি হবে। যতই আমরা উন্নত দেশ হিসেবে উত্তরণের দিকে যাচ্ছি, ততই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশা করছে আমরা ভর্তুকি থেকে সরে আসব। সরকার স্বাভাবিকভাবেই আস্তে আস্তে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি তুলে নেবে।' 

এর আগে আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা যুক্তি দেখান যে, রাজশাহী অঞ্চলে শিল্প বিকাশের জন্য ভর্তুকি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অঞ্চল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের তুলনায় কম উন্নত। 

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'যখন উন্নত দেশ হব, তখন যে সক্ষম যে সব বিষয়ে ফাইট করে সারভাইব করতে পারবে। উন্নত দেশ মানেই এটা, সক্ষমতা।'

আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেওয়ার সময় ভর্তুকি চাওয়ার মানসিকতা থেকে সরে আসুন।'

ব্যবসায়ী নেতারা আসন্ন বাজেটে করের আওতা সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান ব্যবসায় কর, ভ্যাট ও শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'গত চার বছরে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে এবং ভ্যাট নিবন্ধনের হার আড়াই গুণ বেড়েছে।'

তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, 'সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রসারিত করেছে এবং অনেক সেবাকে অটোমেশনের আওতায় এনেছে।'

রাজশাহী চেম্বারের সহসভাপতি সুলতান মাহমুদ, আবদুল আউয়াল, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) রাজশাহী চ্যাপ্টারের সভাপতি মোজদার শফিকুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ ও বগুড়া চেম্বারের সহ-সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ অন্যান্যদের মধ্যে সভায় বক্তব্য দেন।

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

2h ago