এস আলম রিফাইনারিতে আগুন: মণপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা

এস আলম গ্রুপের চিনির রিফাইনারিতে আগুনের ঘটনার পর পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা।
চিনি
ছবি: সুমন আলী/ স্টার

এস আলম গ্রুপের চিনির রিফাইনারির গোডাউনে আগুনের ঘটনার পর পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি চিনির দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা। নগরীর খুচরা বাজারগুলোতে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা।

যদিও এস আলম গ্রুপ বলছে, আগুনের কারণে বাজারে চিনির সংকট বা দাম বাড়ার মতো ঘটনা ঘটবে না।

মঙ্গলবার পুড়ে যাওয়া কারখানা পরিদর্শনে এসে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ এ মন্তব্য করেন।

গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কর্ণফুলী থানা এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনি শোধনাগারের একটি গোডাউনে আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চেষ্টাতেও আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। আগুনে গোডাউনটিতে থাকা ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে গেছে বলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এস আলম গ্রুপের প্রতি মণ চিনি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯৮০ টাকা ৫ হাজার ৩০ টাকায়। একদিন আগে এর দাম ছিল ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। অপরদিকে সাপ্লাই অর্ডার (এসও) পর্যায়ে মণপ্রতি চিনির দাম এক দিনের ব্যবধানে ৮৫-৯০ টাকা বেড়ে ৫ হাজার টাকায় লেনদেন হতে দেখা গেছে। অন্যান্য ব্র্যান্ডের চিনির দামও মণপ্রতি ৫০-৮০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে চিনির দাম আরও বাড়তে পারে এমন গুজবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বাড়তি দাম হাঁকানোর পাশাপাশি চিনি বিক্রি করছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আগুনের ঘটনার পর থেকেই চিনির এসও ব্যবসায়ীরা লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে পণ্যটির দাম মণে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।

একইভাবে চিনির খুচরা বাজারেও পণ্যটির দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। সোমবার প্রতি কেজি চিনি ১৪২ টাকা বিক্রি হলেও আজ সেটি ১৪৫-১৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রমজানকে সামনে রেখে গত দুই মাসে চিনির আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। এ দুই মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৪ লাখ টন যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ২৭ লাখ টন।

গত দুই মাসে আমদানি হওয়া ৪ দশমিক ৭৪ লাখ টন চিনির মধ্যে এস আলম গ্রুপ আমদানি করেছে ১ দশমিক ১২ লাখ টন। এ ছাড়া সিটি গ্রুপ ১ দশমিক ৬১ লাখ টন, মেঘনা গ্রুপ ১ দশমিক ৫৬ লাখ টন, আবদুল মোনেম গ্রুপ ২১ হাজার ৫০০ টন এবং দেশবন্ধু গ্রুপ আমদানি করেছে ২০ হাজার ৫৯৫ টন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে মোট ১৭ দশমিক ১২ লাখ টন, ২০২২ সালে ২১ দশমিক ৫১ লাখ টন, ২০২১ সালে ২১ দশমিক ৯৬ লাখ টন, ২০২০ সালে ১৭ দশমিক ২১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছিল। 

মঙ্গলবার দুপুরে পুড়ে যাওয়া গোডাউন দেখতে এসে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ড্রাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, আগুনে গুদামের ক্ষয়ক্ষতি হলেও কারখানার কোনো ক্ষতি হয়নি। ফলে দু-এক দিনের মধ্যে উৎপাদন শুরু করা যাবে।

তিনি বলেন, এখনো পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। রমজানের চাহিদা মেটানোর মতো চিনি মজুত আছে। দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তবে কী পরিমাণ মজুত আছে এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পাঁচটি গুদামে প্রায় চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আছে। যে গুদামে আগুন লেগেছে সেখানে প্রায় এক লাখ টন চিনি ছিল।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য গত দুই মাসে অনুযায়ী এস আলম গ্রুপের ১ দশমিক ১২ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আরও আগের চিনি আছে। প্রতিদিনই চিনি খালাস হয়ে গুদামগুলোতে রাখা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আগুন গতকাল রাত ১২ টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসলেও আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। পুরোপুরি নেভাতে আরও পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। তবে জাহাজ থেকে গুদামে পণ্য আনার জন্য যে বেল্ট ব্যবহার করা হয় সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

8h ago