বারবার প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন, কী করবেন!

প্রতীকী ছবি

মাঝেমধ্যেই কি মনে হয় যে, আপনাকে কেউ পছন্দ করে না? আড্ডার আসরে কেউ মধ্যমণি হয়ে থাকে, আর আপনার উপস্থিতি বন্ধুদের আড্ডায় কেউ টেরই পায় না। 

তবে মনে রাখুন আপনি যতই পছন্দযোগ্য হোন না কেন, কারো কারো মন হয়ত জয় করতে পারবেন না। কারণ, সবাইকে খুশি করা সম্ভব না। এটা বলা বেশ সহজ হলেও, মেনে নেওয়াটা খুব কঠিন।

আপনি যখন আপনার বন্ধু বা সহকর্মীদের কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবেন না, তখন কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। যেকোনো ধরনের প্রত্যাখ্যানই কষ্টদায়ক।

তাছাড়া নিজের সার্কেলের মধ্যেই কোনোকিছু থেকে বাদ পড়ে গেলে, সেটা ইগোতেও বেশ জোরেশোরে আঘাত করে। হৃদয়ের এক কোণে মেঘ জমতে জমতে এক সময় সেটি ঝড়ের রূপ নেয়। 

কী করনীয়, যখন দেখছেন কেউ আপনাকে পছন্দ করছে না?

কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক

মানুষ সামাজিক জীব। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে বেশি পছন্দ করি। তাই প্রত্যাখ্যাত হলে আমরা মনে কষ্ট পাই, মনে একাকীত্বের ভয় ঢুকে যায়।

বিবর্তনের একপর্যায়ে আমরা যখন দলবদ্ধ হয়ে বাস করতাম, তখন দল থেকে বের করে দেওয়া হলে, সেটা তখন বাঁচা-মরার লড়াই হয়ে দাঁড়াত। 

আমরা যখন প্রত্যাখ্যাত হই, আমাদের মস্তিষ্ক এক ধরনের শক্তিশালী ইমোশনাল কেমিক্যাল নিঃসৃত করে, যার কারণে শারীরিকভাবে যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়। আমরাও এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বেশকিছু প্রতিক্রিয়া দেখাই। নিজেকে দোষারোপ করার মাধ্যমে শুরু করি কাজটা। 

আমাদের মনে হয় যে সব দোষ নিজের, কোনো কথায় বা কাজে অন্য পক্ষ কষ্ট পেয়েছে। তারপর আমরা লজ্জিত হই, অপমানিত অবহেলিত বোধ করি। তখন প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তির মতোই প্রত্যাখ্যানকারীর মন জয় করার চেষ্টা করি। এই কাজটি আমরা করি এই চাওয়াটা থেকে যে, তাদের আপনাকে পছন্দ করতেই হবে এমনটা নয় বরং আপনি কারো অপছন্দের মানুষ হওয়ার অনুভূতি থেকে মুক্তি চান।  

একবার এই অনুভূতিটা আপনার ভেতর ঢুকে পড়লে আপনার বিষণ্ণতা আরও বেড়ে যাবে এবং আপনি পিছিয়ে পড়বেন।

পুরো দোষ আপনার না

কেউ যখন আপনাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেবে, আপনাকে তার পছন্দ নয়, তখন খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। এরকম পরিস্থিতিতে সচরাচর নিজের যোগ্যতা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। 

যে মানুষটা আপনাকে অপছন্দ করে, তার ব্যক্তিত্ব ও পরিস্থিতি আপনার থেকে আলাদা। ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে কিন্তু আমাদের সবারই কিছু পছন্দের দিক রয়েছে। এর মানে এই যে, আপনার ব্যক্তিত্ব আমার ব্যক্তিত্বের থেকে আলাদা এবং যার সঙ্গে আমার মিল আছে, এমন মানুষের সঙ্গে আমরা মিশতে পছন্দ করি। এই ব্যাপারটি যত দ্রুত সম্ভব তত তাড়াতাড়ি মেনে নেওয়া উচিত।

আবার মাঝে মাঝে আপনাকে জানার মতো যথেষ্ট সুযোগ আপনিই হয়ত অন্যদের দেন না। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে আমরা অন্যের সঙ্গে যোগাযোগে কিছু কৌশল অবলম্বন করি এবং কাজের প্রয়োজনে সম্পর্ক গড়ে তুলি। বেশিরভাগ সময়েই ব্যক্তিগতভাবে কাউকে পছন্দ অপছন্দ করার সাথে এর কোনো সম্পর্কই থাকে না।

আপনার যদি কারও সঙ্গে কোনো বিষয়েই মিল না থাকে, উভয়পক্ষের কিছু কমন ইন্টারেস্ট না থাকে, তাহলে আপনি প্রত্যাখ্যাত হবেন। এটাই হয়ত আপনার এবং অপরপক্ষের জন্য ভালো। বিষয়টি তাই কি না, ভেবে দেখুন।

খারাপ আচরণ করছেন কি না, খেয়াল রাখুন

কেউ আপনাকে অপছন্দ করলে, সবসময় নিজেকে দোষারোপ করবেন না। কিন্তু এটা যদি নিয়মিত বিষয়ে হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে একটু নিজের আচরণ পর্যালোচনা করে দেখুন। ভেবে দেখুন, আপনি কোনো অসঙ্গত আচরণ করছেন কিনা।

কাছের কাউকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে যে, সে কেন আপনাকে পছন্দ করে। কিংবা আপনার মধ্যে এমন কিছু আছে কি না, যেটি তার কাছে মন্দ লাগে। সে যদি বলে আপনি একঘেঁয়ে ,অহংকারী কিংবা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে একটু সময় নিয়ে যাচাই করে দেখুন এই অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি আছে কিনা। যদি থেকে থাকে, তাহলে সেগুলি পরিবর্তনে মন দিন।

নতুন বন্ধু তৈরি করা সহজ কাজ নয়, এটা নিজেকে মনে করিয়ে দিন। আপনি যখন নতুন একটা পরিবেশে যাবেন, কর্মস্থল পরিবর্তন করবেন, তখন খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় লাগবে। আর এ সময়ে আপনার নিজেকে আলাদা মনে হবে, একা মনে হবে। 

আমাদের সবার মনেই যেকোনো সময়, যেকোনো পরিবেশে, যেকোনো মানুষের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বা মিশে যাওয়ার একটা অদ্ভুত আশা আছে। কিন্তু বাস্তবে সবসময় তা হয় না। নতুন পরিবেশে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, আপনি আগে থেকে তৈরি একটা পরিবেশে যাচ্ছেন, যেখানে নানারকম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ আছে, নানারকম চিন্তার মানুষ আছে। 

আপনি কী ধরনের পরিবেশে যেতে চাচ্ছেন, সে সম্পর্কে আপনার হয়ত তেমন ধারণাই নেই। নতুন জায়গায় গিয়ে ধীরে ধীরে খাপ খাওয়ান। সব জায়গাতেই কিছু মানুষ আপনাকে সাদরে গ্রহণ করবে আবার কিছু মানুষ আপনার থেকে দূরে থাকবে।

একটি গ্রুপে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকেন, তার মন জয় করার চেষ্টা না করে যে সহজে সবার সঙ্গে মিশতে পারে তাকে জানার চেষ্টা করুন। আপনাকে পছন্দ করে এমন মানুষের সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটান।

হেটার্সদের পাত্তা দেবেন না

যত যাই হোক, মাঝে মাঝে আপনার কিছু শত্রু থাকবে, এ বিষয়টা মেনে নিন, উপভোগ করুন। সবার সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি করাটা যেমন অনর্থক, তেমনি কেউ যদি আপনাকে অপছন্দ করে এবং আপনিও তাকে অপছন্দ করেন, তাহলে তাকে শুধু শুধু খুশি করতে যাওয়ারও কোনো মানে নেই।

সর্বশেষ, নিজের মতো থাকুন। আপনি যেমন, তেমনই। সবাই যেমন আপনাকে পছন্দ করবে না, তেমনি এমন কেউ থাকবে যে আপনাকে সবসময় ভালবাসবে।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka sends diplomatic note to Delhi to send back Hasina: foreign adviser

The Ministry of Foreign Affairs has sent a diplomatic note to the Indian government to send back ousted former prime minister Sheikh Hasina to Dhaka.

5h ago