সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে এক নারী (২৯) ও তার ১২ বছরের এক মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী মা-মেয়েকে চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে ওই নারী আজ বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দুজনকে চিনতে পারলেও আরেকজনকে তিনি চিনতে পরেননি।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চর ওয়াপদা ইউনিওন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের মুন্সিকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি চর ওয়াপদা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য। চরজব্বার থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
আজ বিকেলে চরজব্বার থানায় ভুক্তভোগী নারী দুই জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আবুল খায়ের মুন্সিকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামি অজ্ঞাত।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, কয়েক মাস আগে পার্শ্ববর্তী হাতিয়া থেকে সপরিবারে চলে আসেন তারা। তারা সুবর্ণচরের চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চরকাজী মোখলেছ গ্রামে বাড়ি তৈরি করেন। তার স্বামী পেশায় একজন শ্রমিক। কাজের সন্ধানে তিনি প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকেন। তিন-চার দিন পর পর তিনি বাড়িতে আসেন। দুই দিন আগে তিনি কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যান। তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি একাই বাড়িতে ছিলেন। সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে একজন সিঁধ কেটে তার ঘরে ঢোকে। তিনি দরজা খুলে দিলে আরও দুজন ভেতরে ঢুকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেয়ে ও তাকে ধর্ষণ করেন।
দুজনকে চিনতে পারার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের একজন সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বার এবং অন্যজন গরু ব্যবসায়ী হারুন। ধর্ষণকারীরা যাওয়ার সময় আমার ও মেয়ের হাত, পা ও মুখ বেঁধে রেখে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। তারা যাওয়ার পর আমার ছোট মেয়েদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে। বিষয়টি জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করা হলে চরজব্বর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
চর জব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা শুনে রাতেই টহল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সকালে নোয়াখালী পুলিশ সুপার (এসপি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বার নামের স্থানীয় এক জনকে আটক করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
নোয়াখালীর এসপি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে পুলিশ এক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছে। পুরো ঘটনাটি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের রাতে সুবর্ণচরে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আলোচিত ওই ঘটনার মামলার রায়ে গত সোমবার ১০ জনকে ফাঁসি ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বার। আলোচিত ওই মামলার রায়ের ১২ ঘণ্টার মধ্যে একই উপজেলায় আরেকটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠল।
Comments