বাঁশের সাঁকোয় পারাপার, ৪০ বছরেও হয়নি সেতু

বারোমাসিয়া নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হয় ছয় গ্রামের মানুষকে। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

বারোমাসিয়া নদীর ওপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষের কাছে।

গ্রামগুলো হলো কান্তাপাড়া, ঝাউকুটি, চর গোড়কমন্ডল, পশ্চিম ফুলমতি, জামাকুটি এবং কলাবাগান।

গ্রামবাসী বলছেন, গত ৪০ বছর ধরে তারা প্রতিশ্রতি পাচ্ছেন নদীর ওপর সেতু তৈরি হবে। তবে এক যুগ ধরে গ্রামবাসীর চাঁদায় নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে তাই দিয়েই চলাচল চলছে।

গ্রামবাসীরা জানায়, নদীর ওপর সেতু নেই তাই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলতে হয়। নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর কেউ খোঁজ রাখেন না। এসব গ্রামে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সময়মতো বাজারে নিতে পারেন না তারা। এ কারণে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর কারণে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের।

কান্তাপাড়া গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী (৬৭) ডেইলি স্টারকে বলেন, আগে সারাবছরই নৌকায় পাড়ি দিতেন বারোমাসিয়া নদী। এখন শুধু বর্ষাকালে নৌকায় পাড়ি দেন নদীটি। গেল বারো বছর ধরে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছেন। নিজেরাই চাঁদা দিয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি ও মেরামত করে আসছেন।

ঝাউকুটি গ্রামের কৃষক আলী আকবর (৫৫) বলেন, প্রতিবছর গ্রামের মানুষের কাছে চাঁদা তুলতে হয় বাঁশের সাঁকোটি মেরামতের জন্য। জনপ্রতিনিধিদের কোনো সহযোগিতা জোটে না। গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে তাদেরকে কষ্ট পোহাতে হয। রোগীদের হাসপাতালে নিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুরী আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। 'বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে খুব ভয় লাগে। প্রতিদিন এই সাঁকোর ওপর দিয়ে যেতে হয়।'

নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোটির ওপর চলাচল করেন। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেন না। বারোমাসিয়া নদীতে সেতু নির্মিত না হওয়ায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে ওই সব গ্রামের শিক্ষার্থীরা।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, বারোমাসিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করতে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।

ফুলবাড়ী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল রাজিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বারোমাসিয়া নদীতে সেতু নির্মাণ করতে হলে নদীশাসন করতে হবে কারণ এ নদীতে ভাঙন রয়েছে। অতীতে জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ কারণে দীর্ঘদিনেও এখানে সেতু নির্মিত হয়নি। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনার প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুমোদনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনাটি পাঠানো হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

কুড়িগ্রাম-২ (ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও কুড়িগ্রাম সদর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার জানান, চলতি বছর বারোমাসিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

15m ago