অপরিষ্কার জাবি ক্যাম্পাসের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে গরু পালছেন এস্টেট কর্মকর্তা

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে এ দুটি গরু পালছেন এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আজীম উদ্দীন। ছবি: শেখ তাজুল ইসলাম তাজ/স্টার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) যেখানে-সেখানে স্তূপাকারে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। যত্রতত্র আবর্জনা পোড়ানোয় উৎপন্ন হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এমন অভিযোগ করছেন।  

বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, কচুরিপানায় ভরে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলো, পাড়ে জমে আছে আবর্জনা। অধিকাংশ জলাশয়গুলো পরিষ্কার করা হয়নি। তদারকির অভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় জলাশয়সহ ছোট-বড় আরও কিছু জলাশয়। 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বর্জ্য রিসাইক্লিং প্ল্যান্টটি অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

জাবি ক্যাম্পাসের যেখানে-সেখানে স্তূপাকারে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। ছবি: শেখ তাজুল ইসলাম তাজ/স্টার

সরেজমিন দেখা যায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে ঘাস খাচ্ছে দুটি গরু। তবে গরু দুইটির মালিকানা সম্পর্কে জানে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই গরু দুটির মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আজীম উদ্দীন।

গরু দুটির মালিকানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আজীম উদ্দীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হ্যাঁ, আমি কিনে দিয়েছি। যারা কেয়ারটেকার আছেন, তারা পালেন। একটা প্ল্যান্ট আছে গোবরের জন্য, গ্যাস উৎপাদন করার জন্য। সেটা পরীক্ষা করার জন্য গরু। আর দুটি গরু না, একটা গরু আরেকটা বাছুর।'

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গরু কেনার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এখানে অনুমতি নেওয়ার কিছু নেই। আমি টেস্ট করার জন্য কিনে দিয়েছি।' 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গরু দুটির বিষয়ে জানে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'দুটো কেন বলছেন। একটা গরু, একটা বাছুর। প্রশাসনকে জানান।'

ক্যাম্পাসের ভেতরে সড়কের পাশে আবর্জনা পোড়ানোয় উৎপন্ন হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া। ছবি: শেখ তাজুল ইসলাম তাজ/স্টার

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেখানে গরু পালনের ব্যাপারে কিছু জানে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিতে হচ্ছে না।'

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে কীভাবে, জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এস্টেট অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আ. রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এগুলো ভরাট হচ্ছে মাটি ক্ষয়ের কারণে। দীর্ঘসময় খনন কাজ না হলে ধীরে ধীরে এগুলো ভরে যায়।'

খনন কাজের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে প্রশাসনকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।

কচুরিপানা
কচুরিপানায় ভরে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়। ছবি: শেখ তাজুল ইসলাম তাজ/স্টার

তিনি বলেন, 'এটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। প্রশাসন আগ্রহী কি না, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেগুলো ভরাট হয়ে গেছে, সেগুলোর সংস্কার করা দরকার। বড় বাজেট দরকার। এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতির এমন অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে এস্টেট অফিসে তালা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অমর্ত্য রায়।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বপ্রথম দায়িত্ব আবাসন, খাদ্যসহ আবাসস্থলের পরিষ্কার-পরিছন্নতা ঠিক রাখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সচল রাখা। পাশাপাশি লেকগুলোকে পরিষ্কার করে নতুন করে খননকাজ চালানো।'

'আমরা বহুদিন ধরে লেক, পুকুরের খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলছি। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি এস্টেট অফিসকে। কিন্তু এস্টেট অফিস ব্যর্থ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এস্টেট অফিস এসব বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আমরা তালাবদ্ধ করব তাদের,' বলেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড নুরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এস্টেট অফিসের দুজনের সঙ্গেই এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করব। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।'

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে গরু পালনের বিষয়টি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলমকে জানাতেই, তিনি তাৎক্ষণিক ডেপুটি রেজিস্ট্রার আজীমকে ফোন করে একদিনের মধ্যে সেখান থেকে গরু সরানোর আদেশ দেন।

Comments