রিজার্ভ স্থিতিশীল ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে মুদ্রানীতি: ঢাকা চেম্বার সভাপতি

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ডিসিসিআই, মুদ্রানীতি, পলিসি রেট, রেপো রেট, মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি,
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি নিয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেছেন, এই মুদ্রানীতি দেশের আর্থিক খাতকে পুনর্জীবিত ও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রবাহ নিশ্চিত করা ও মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া কঠোর নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার।

বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে মুদ্রানীতিতে 'ক্রগিং পেগ' পদ্ধতি অনুসরণের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ডিসিসিআই। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করে বাজারে মুদ্রা প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার এ উদ্যোগ কার্যকর হবে বলে ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে এ নীতি সুনির্দিষ্ট প্রভাব রাখবে।

তাছাড়া অন্যান্য প্রি-ফাইন্যান্সিং ও রি-ফ্যাইন্যান্সিং স্কিমের মাধ্যমে সিএমএসএমই খাতকে সহায়তার উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি।

সর্বশেষ ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে 'স্মার্ট' এর উপর ভিত্তি করে ঋণের সুদ হার নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, তবে সেটি খুব বেশি কার্যকর হয়েছে বলে মনে হয়নি। কারণ গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে নেওয়া উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাবে।

চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও অর্থবছরের প্রথমার্ধে জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে অর্জিত হয়েছিল মাত্র ১৮ শতাংশ।

অপরদিকে জানুয়ারি-জুন মেয়াদে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে অর্জিত হয়েছিল মাত্র ১০ দশমিক ২ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা, গত মেয়াদের অর্জিত মাত্রার চেয়ে কম নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি প্রত্যাশা করেছিল।

এ অবস্থায় ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশা প্রকাশ করেন, যথাযথ আর্থিক ঋণ কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে বেশি হারে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সরকারি খাতে ঋণ কমার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধি করতে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধন এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ওপর জোরারোপ করেন তিনি।

মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে ঢাকা চেম্বার সভাপতি মনে করেন, 'ক্রগিং পেগ' পদ্ধতি বাজারকে কিছুটা স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হবে, তবে এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে রায়ার্স ক্রেডিট, ইউজেন্স এলসি, ডেফার্ড পেমেন্ট এবং এক্সপোর্ট ফ্যাক্টরিং প্রভৃতি বিষয়গুলো বিকল্প উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনার দাবি করছে ডিসিসিআই।

দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে 'এক্সপোর্টার রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ)' হার আগের ১৫ শতাংশ, ৬০ শতাংশ এবং ৭০ শতাংশের তুলনায় যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়াও পেমেন্টের ক্ষেত্রে রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ৪০ শতাংশ অফশোর ব্যাংকিং অপারেশনস থেকে ধারের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ডিসিসিআই সভাপতি মনে করেন, এ উদ্যোগ বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল করবে, যদিও সীমিত হস্তক্ষেপ ও সুসংগঠিত নীতি কাঠামোর আওতায় বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

Comments

The Daily Star  | English

‘Polls delay risks return of autocracy’

Says Khandaker Mosharraf after meeting with Yunus; reiterates demand for election by Dec

1h ago