অফিসে ঢুকতে পারছেন না সোনালী লাইফের সিইও, বোর্ড বলছে বরখাস্ত

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিমা, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশের বিমা কোম্পানি,

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ। বিপরীতে সিইও মীর রাশেদ বিন আমান বলেছেন, তাকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অথচ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) মনে করছে, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সিইওকে অফিসে থাকা দরকারি।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সিইও'র বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত চলাকালে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সোনালী লাইফ জানিয়েছে, এক বৈঠকে অর্থ আত্মসাত নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে 'তদন্ত কমিটি ও বোর্ড গঠন' করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোনালী লাইফের পর্ষদ।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোম্পানির নিজস্ব তদন্তে সিইও'র বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।'

এর আগে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের নিয়োগসহ সোনালী লাইফের ১৭টি অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত ৩০ দিনের মধ্যে শেষ করতে অডিট ফার্ম হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়োগ দিয়েছিল আইডিআরএ।

বিমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে, ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কোম্পানির ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক হওয়ার পূর্বশর্ত পূরণ না করা এবং চেয়ারপারসনের জন্য এক কোটি সাত লাখ টাকার বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে অতিরিক্ত ব্যয়।

আরও অভিযোগ আছে, ২০২১ সালে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিংয়ের কর বাবদ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে সোনালী লাইফ। অথচ সোনালী লাইফের সঙ্গে এই কোম্পানির কোনো সম্পর্ক নেই।

এছাড়া ২০১৮ সালে সোনালী লাইফের পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধিতে পরিচালকরা কীভাবে তাদের শেয়ার কিনেছিলেন তাও অডিটে খতিয়ে দেখা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইডিআরএ'র এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটি লাইফ ফান্ডের বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

আইডিআরএ এক নির্দেশনায় সোনালী লাইফকে বিমা দাবি নিষ্পত্তি ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ প্রদান ব্যতীত অন্য কোনো খরচ না করার নির্দেশনা দিয়েছিল।

এর মধ্যে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস আইডিআরএ'র কাছে পাঠানো এক চিঠিতে অডিট স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান। চিঠিতে তিনি দাবি করেন, সিইও অফিসে 'অনুপস্থিত'।

তবে, আরেকটি চিঠিতে সিইও মীর রাশেদ বিন আমান আইডিআরএকে জানান, চলতি বছরের শুরু থেকেই পরিচালনা পর্ষদ তাকে তার অফিসের রুমে ঢুকতে দিচ্ছেন না এবং তার রুম তালা মেরে রাখা হয়েছে।

'শুধু তাই নয় তাকে কোনো সফটওয়্যারের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। এজন্য তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।'

এরপর গত ১০ জানুয়ারি সোনালী লাইফ বোর্ডকে একটি চিঠি পাঠায় আইডিআরএ। ওই চিঠিতে বোর্ডকে সমালোচনা করে বলা হয়, বোর্ডের কর্মকাণ্ড অবৈধ ও সুশাসনের পরিপন্থী।

একইসঙ্গে সিইওকে তার অফিসে প্রবেশ ও তিনি যেন দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেজন্য সহযোগিতা করারও নির্দেশ দিয়েছিল আইআরডিএ।

গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে সিইও'র কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে আইডিআরএ। পুলিশকে বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বোর্ডের কয়েকজন সদস্য তাকে রুমে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।

আইডিআরএ'র মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'সোনলী লাইফের সিইও যেন দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেজন্য সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছিল আইডিআরএ। কিন্তু, সোনালী লাইফের বোর্ড সেই নির্দেশনা মানেনি। এখন আইডিআরএ আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।'

এদিকে সিইও মীর রাশেদ বিন আমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'আমাকে বরখাস্তের বিষয়ে এখনো কোনো অফিসিয়াল চিঠি পাইনি। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।'

'কেন তারা (বোর্ড) কোম্পানির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অডিট ফার্মকে সহায়তা করছে না,' প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সোনালী লাইফ ২০১৩ সালে নিবন্ধন পেয়েছে। যার ২০৫টি শাখা রয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিটির সাত লাখের বেশি বিমা গ্রাহক রয়েছে।

এ ছাড়া কোম্পানিটির এজেন্ট আছে ৩০,০০০ মতো। কোম্পানিতে প্রায় ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন বলে জানা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Over 102,000 annual deaths in Bangladesh linked to air pollution

Study also finds air pollution behind 266 million sick days every year hurting the economy

1h ago