প্রাকৃতিক উপাদানে রূপচর্চা কি সত্যিই ত্বকের জন্য নিরাপদ?

প্রাকৃতিক উপাদানে রূপচর্চা কি ত্বকের জন্য নিরাপদ
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দেশে অনেকেই ত্বকের যত্নে নিয়মিত ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে থাকেন। 'উপাদান যখন প্রাকৃতিক তাহলে কোনো ক্ষতি হবে না' এটা ভেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অন্যের পরামর্শ শুনে হাতের কাছে থাকা অনেক উপকরণ ত্বকে ব্যবহার করে ফেলেন তারা। কিন্তু সব প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকের জন্য নিরাপদ না। এগুলো ব্যবহারে ত্বকের ভালোর বদলে ক্ষতি হওয়ারই আশঙ্কা বেশি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খানের কাছ থেকে।

রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকের জন্য কতটা ভালো?

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, রূপচর্চায় সব ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান অবশ্যই ভালো না। সাধারণত হাতের কাছে বা রান্নাঘরে যেসব উপাদান থাকে রূপচর্চার অংশ হিসেবে সেসব উপকরণ ত্বকে ব্যবহার করেন অনেকে। যেমন- কাঁচা হলুদ, বেসন, শসা, অ্যালোভেরা। এ ছাড়া মুলতানি মাটি, চন্দন, চিনি, কাঁচা দুধ এসবও ব্যবহার করেন।

কিন্তু প্রতিটি জিনিস ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করার কথা বলেন ডার্মাটোলজিস্টরা। প্রাকৃতিক উপকরণ থেকেই বিভিন্ন প্রসাধনী ও ওষুধ তৈরি করা হয়, তবে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে। ত্বকের ধরন না জেনে প্রাকৃতিক উপকরণে রূপচর্চার ফলাফল সবসময় ভালো নাও হতে পারে। যেমন-

১. প্রাকৃতিক উপকরণ সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করলে অনেকের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে।

২. অনেকে ত্বকের যত্নে চিনি ও কফি ব্যবহার করেন। চিনি ও কফি দানার মতো, মুখে সরাসরি ম্যাসাজ করা হলে ত্বকে স্ক্র্যাচ পড়তে পারে, ঘর্ষণজনিত আঘাতে ত্বকের অনেক বেশি ক্ষতি পারে। লাল হয়ে চামড়া উঠে যেতে পারে।

৩. অনেকে লেবু ও টমেটো ব্যবহার করেন রূপচর্চায়, তাদের ধারণা এতে সান ট্যান দূর হবে ও ত্বক উজ্জ্বল হবে। লেবু ও টমেটোর মধ্যে সাইট্রিক অ্যাসিড ও ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। এই দুটো উপকরণের মধ্যেই ল্যাকটিক অ্যাসিড অপরিমিত পর্যায়ের আছে। যার কারণে ত্বকে লেবু ও টমেটো ব্যবহারের ফলে অনেক সময় বার্ন হয়ে যেতে পারে, জ্বালাপোড়া ও চুলকানি হতে পারে। যারা নিয়মিত ব্যবহার করেন এতে তাদের ত্বক পাতলা ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। পরে তাতে স্থায়ীভাবে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

৪. কাঁচা হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-অ্যাজিং উপাদান রয়েছে। চিকিৎসকরা প্রয়োজন অনুযায়ী টারমারিক ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু ভেষজ উপাদান হিসেবে সরাসরি ত্বকে কাঁচা হলুদ, কাঁচা হলুদের পাউডার, বিভিন্ন ফেস প্যাক ব্যবহার করেন অনেকে। সত্যিকার অর্থে এতে করে ত্বকে খুব একটা ভালো প্রভাব পড়ে না।

৫. কাঁচা হলুদ, বেসন, চন্দন বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণে বাজারে যেসব উপটান পাওয়া যায় সেগুলোও ত্বকের জন্য খুব একটা কার্যকরী নয়।

৬. সান ট্যান থাকলে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে বলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কারো অ্যালার্জি থাকলে তিনি ব্যবহার করতে পারবেন না। অ্যালোভেরা, শসার রস ত্বকের জন্য ভালো হলেও তা সরাসরি ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে।

৭. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেন অনেকে। এতেও ত্বকে বার্ন হতে পারে।

৮. নিম পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে। অনেকে কাঁচা হলুদ, নিম পাতা একসঙ্গে ত্বকে ব্যবহার করেন। কিন্তু যারা নিয়মিত নিমপাতা ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে একজিমা পাওয়া যায় বলে জানান এই চিকিৎসক।

৯. ত্বকে নারকেল তেল ব্যবহার করেন অনেকে। যদি তৈলাক্ত ত্বক হয় এবং ত্বকের ছোট ছোট ছিদ্র বা পোর ব্লক হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো আরও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে নারকেল তেলে। সেক্ষেত্রে ত্বকে ব্রন হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

১০. চালের গুঁড়ো ক্লিনজিংয়ে ভালো কাজ করে। তবে চালের গুঁড়োতে যদি দানা দানা থাকে তাহলে মুখে ম্যাসাজ করলে ক্ষতি হতে পারে।

১১. মুলতানি মাটি ত্বক শুষ্ক করে। যার ত্বক শুষ্ক তিনি যদি না জেনে ব্যবহার করেন তাহলে আরও শুষ্ক হয়ে যাবে ত্বক।

সবার ত্বক এক রকম নয়, কারো পাতলা কারো পুরু। সে কারণে ত্বকে সরাসরি কিছু ব্যবহার না করে ত্বকের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ডা. আসমা তাসনীম।

ত্বক ভালো রাখতে যা করবেন

১. আসলে অনেক কিছু ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই ত্বকে। ভালো মানের ক্লিনজার, সানব্লক ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করারই পরামর্শ দেন ডা. আসমা তাসনীম।

২. স্যুট করলে মধু, কস্তুরি হলুদ, অ্যালোভেরা, খাঁটি চন্দন, কাঁচা দুধ, পেঁপে, চালের গুঁড়ো সপ্তাহে দুই-একদিন ব্যবহার করতে পারেন।

৩. যেকোনো প্রাকৃতিক উপকরণ মুখে অনেক বেশি ঘষাঘষি করা যাবে না। অনেক বেশি সময় রাখা যাবে না। একটার পর একটা উপাদান ব্যবহার করা যাবে না পরপর। তাতে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৪. ত্বক ভালো রাখতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।

৫. ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইট্রেডের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

৬. শাকসবজি, ফলমূল ও সালাদ খেতে হবে।

৭. প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

৮. ব্যায়াম করতে হবে, শরীর থেকে ঘাম ঝড়িয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টার হাঁটা অভ্যাস করতে হবে।

৯. বিটরুট, কমলা, স্পিরুলিনা, মরিঙ্গার জুস খাওয়া যেতে পারে। এগুলো ভেতর থেকে ত্বক ভালো রাখবে।

৭. চিনি কম খেতে হবে ত্বক ভালো রাখতে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

1h ago