৬ দিন দেখা নেই সূর্যের, ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন

বেড়েছে ঠান্ডা। ঘন কুয়াশায় গত সোমবার থেকে সূর্যের দেখা নেই। শনিবার সকালে লালমনিরহাট রেলস্টেশন এলাকা থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে গত সোমবার থেকে দেখা নেই সূর্যের। চারদিক ঢেকে আছে কুয়াশায়। শীতে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

অন্যদিকে ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা ও সবজিখেত। তীব্র শীতে ঠিকমতো খাবার খেতে না পারায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে গবাদি পশুও।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার শনিবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার থেকে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় শীতার্ত মানুষজন আরও বেশি কাহিল হয়ে পড়েছেন। চারদিক ঢেকে থাকছে ঘন কুয়াশায়। রাতে ও সকালে ঠান্ডার প্রকোপ বেশি থাকছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, টানা কয়েকদিন সূর্যের আলো না থাকায় ফসলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বোরো ধানের বীজতলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ঠান্ডার কারণে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে কাজ করতে পারছে না। এ রকম কুয়াশা ও ঠান্ডা আর ৩-৪ দিন থাকলে ফসলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর গ্রামের কৃষক দীজেন্দ্র নাথ (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, টানা কয়েকদিনের কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। বোরো বীজতলা নষ্ট হলে তারা বোরো ধানের চারা সংকটে পড়বেন। টানা ৬ দিন সূর্যের দেখা নেই। এমনটা তিনি গেল একযুগেও দেখেননি বলে জানান।

কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদেরপাড় চর পার্বতীর কৃষক আকবর আলী (৬৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঠান্ডায় চরের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। চরের মানুষের শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্যও নেই। এতবেশি ঠান্ডা পড়েছে যে চরের মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।

এদিকে ঠান্ডার কারণে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী।

লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। গেল  পাঁচ দিনে লালমনিরহাট  সদর ও চার উপজেলা হাসপাতালে ৭৮০ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪০ হাসপাতালে ভর্তি। এছাড়া বযস্ক লোকজনও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীতজনিত রোগের মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট বেশি দেখা দিয়েছে।

সকালে লালমনিরহাট রেলস্টেশনে কয়েকজন ছিন্নমূল মানুষকে দেখা যায় আগুন জ্বলে তাপ পোহাতে। তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, টানা কয়েকদিনের ঠান্ডায় নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। ঠান্ডার কারণে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। অনেকরাত পযর্ন্ত আগুনে শরীর তাপ দিতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ঠান্ডা নিবারণে চরম কষ্ট করতে হচ্ছে।

ছিন্নমূল মহুয়া বেগম (৪৫) বলেন, তিনি দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঠান্ডায় চরম কষ্ট পাচ্ছেন। তাদের তেমন শীতবস্ত্র নেই। কেউ তাদের সাহায্যও করছেন না।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন শীতার্ত দুস্থদের মাঝে সরকারি কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। টানা কযেকদিনের ঠান্ডায় স্বাভাবিক জীবনযাপন স্থবির হয়ে পড়েছে। আরও বেশি শীতবস্ত্র চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

5 Edn institutions: Academic life of 40,000 in disarray

Academic activities in five major educational institutions in Dhaka remain suspended for the past week amid multiple incidents of clashes, affecting at least 40,000 students.

3h ago