ঠান্ডা, কুয়াশায় বরই উৎপাদন ব্যাহত
এবারের কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় বরই উৎপাদনে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গেল বছরের তুলনায় বরই উৎপাদন কমেছে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ। গাছে বরই এর ফলন আশানুরূপ হলেও ফলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি বলছেন চাষিরা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি গ্রামে বরই বাগানের মালিক নাজমুল ইসলাম নবাব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার এক একর জমির ওপর বরই গাছ রয়েছে ৩৫০টি। প্রতিটি গাছে আশানুরূপ বরইয়ের ফলন এসেছে। কিন্তু অনবরত ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে বরইয়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি। গেল বছর প্রতিটি বরই ৭০-৮০ গ্রাম ওজন হয়েছিল কিন্তু এবছর ওজন হয়েছে ৪৫-৫৫ গ্রাম। তারা বাউকুল, আপেলকুল ও বলসুন্দরী বরই চাষ করছেন।
'আমরা ফল ব্যবসায়ীর কাছে বাগানের বরই আগাম বিক্রি করে দিই। আমার বাগানে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৪০ কেজি বরই উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে। গেল বছর উৎপাদন হয়েছিল ৫০-৫৫ কেজি।'
'আমার বাগানে বলসুন্দরী বরই উৎপাদিত হচ্ছে,' তিনি বলেন।
একই গ্রামের ফল ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঠান্ডা আর কুয়াশার সাথে সূর্যের আলো থাকলেও বরই স্বাভাবিক বাড়তো। কিন্তু বেশ কয়েকদিন সুর্যের আলো না থাকায় ঠান্ডা আর কুয়াশায় বরইয়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে।
'আমরা প্রতি কেজি বরই বাগান থেকে ৬০-৭০টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি,' তিনি বলেন।
'এ বছর বরই ফলের ব্যবসা করে লাভবান হতে পারছি না। অনেক ফল ব্যবসায়ী লোকসান গুনছেন,' তিনি বলেন।
'যদি বরইর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত না হতো তাহলে আমরা বরই বিক্রি করে লাভবান হতাম,' তিনি বলেন।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের কৃষক সুধীর চন্দ্র বর্মণ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার দুই বিঘা জমির ওপর ২০০ বরই গাছ রয়েছে। তার বাগানে রয়েছে বাউকুল ও আপেলকুল। ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে বরইর স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়ায় ওজনে কম হয়েছে। বর্তমানে বরইর বাজারদর সন্তোষজনক হলেও ওজন কম হওয়ায় খুব বেশি মুনাফা করতে পারছেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ৩৫০ একর জমির ওপর ৩০০টি বরই বাগান রয়েছে। এসব বাগানে বরই গাছ রয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার গাছ। এসব গাছে গেল বছর ৬ হাজার ১০০ মেট্রিক টন বরই উৎপাদন হয়েছিল। গাছে বরইর ফলন আশানুরূপ আসলেও এ বছর ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে বরই এর স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়নি। এতে উৎপাদন ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঠান্ডা আর কুয়াশা দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় বরই ফল কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে বরইর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। তারপরও প্রতিটি গাছে ৪০ কেজি বরই উৎপাদিত হয়েছে। বরই চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বরই স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়েও বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীরা।
Comments