ড. ইউনূসের সাজা ও জামিন, এরপর কী?

ড. ইউনূসের ৬ মাসের জেল
রায় পাওয়ার পর শ্রম আদালত থেকে বের হয়ে আসছেন ড. ইউনূস। ১ জানুয়ারি ২০২৪। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং আপিলের শর্তে জামিন দেওয়া হয়েছে। এরপর কী হবে? জনমনে প্রশ্ন, ড. ইউনূসের জামিনের মেয়াদ কি বাড়বে? তাকে কি জেলে যেতে হতে পারে? তার বিদেশ যাতায়াতে কোনো প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে? দেশে চলাচলে কোনো সমস্যা হতে পারে?

বিষয়গুলো নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি ও ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য জেড আই খান পান্না, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার সঙ্গে।

তাদের প্রত্যাশা, সামনে আর বাড়তি কোনো 'জটিলতা'র সম্মুখীন হতে হবে না ড. ইউনূসকে।

ড. ইউনূসের সাজা ও জামিন, এরপর কী?

জেড আই খান পান্না বলেন, 'ড. মুহাম্মদ ইউনূস উচ্চ আদালতে আপিল করলে সেখানে মামলার সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখা হবে। তার যা ক্ষতি হওয়ার, তা তো হয়ে গেছে। পরবর্তীতে তার আর কোনো ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ উচ্চ আদালত ভাবমূর্তি ও আইনগত দিক-নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কিছু করবে বলে মনে হয় না।'

তিনি বলেন, 'ড. ইউনূসের স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষেত্রে আগেও যে খুব অসুবিধা হয়েছে, তা নয়। কিন্তু কার কখন কী হয়, সেটা তো বলা যায় না। তবে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পর তার আর কিছু হবে বলে মনে করছি না। এমনিতে একটা মানসিক যন্ত্রণা ও ভোগান্তি তো থাকবেই।'

ড. ইউনূসের সাজা ও জামিন, এরপর কী?

সুলতানা কামাল বলেন, 'আমি মূলত পারিবারিক আইন নিয়ে কাজ করি। কিন্তু সাধারণভাবে বলতে পারি যে, এখন ড. ইউনূস জামিনে আছেন। জামিনে থাকায় তার স্বাভাবিক জীবনযাপনের ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধু একটা শর্ত থাকে যে, নির্দিষ্ট দিন পর হাজিরা দিতে হয়। কারণ তিনি যে আছেন, কোথাও চলে যাননি, তার একটা প্রমাণ দিতে হয়। কিন্তু এরপর কী হবে, সেটা আমরা বলতে পারছি না। সেটা অনুমান করা খুবই কঠিন।'

তিনি আরও বলেন, 'এখন ড. ইউনূস আপিল করবেন। আপিল খুব টেকনিক্যাল ব্যাপার। তখন আর কোনো যুক্তিতর্কেও যাওয়া হয় না। শুধু রেফারেন্স দেখে বলে দেওয়া হবে যে, রায়টা সঠিক হয়েছে, কি হয়নি। এই পর্যন্তই হয় আপিলে। কিন্তু কেস নতুন করে আর খোলা হয় না। শুধু বলবে যে, নিম্ন আদালতের রায়টা সঠিক কি না। সেজন্য কিছু বলা খুব কঠিন। আমরা আশা করব উচ্চ আদালত মুক্তমন নিয়ে বিষয়টি দেখবেন।'

ড. ইউনূসের সাজা ও জামিন, এরপর কী?

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, 'সাধারণত ৪২৭ ধারার অধীনে যদি কম সাজা হয়, যিনি সাজা দিচ্ছেন, সেই আদালতই জামিন দিতে পারেন আপিল করার সুযোগ দিয়ে। ড. ইউনূসের ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছে। এখন এক মাসের মধ্যে আপিল করার কথা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি ড. ইউনূস আপিল করেন, সেখানে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হবে। অ্যাপিলেট কোর্ট যদি জামিন দিয়ে দেন, তাহলে ড. ইউনূসের বিদেশে যাতায়াত বা অন্যান্য কোনো কিছুই বাধাগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।'

তিনি বলেন, 'তারপর তার শুধু মামলা কনটেস্ট করলেই হলো। আপিলের যখন শুনানি হবে, তখন সিদ্ধান্ত হবে যে কী হবে না হবে। এখানে আর অন্য কোনো বিষয়ে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা যদি সুনির্দিষ্টভাবে তার রায়ের আদেশে বলে দেওয়া না থাকে, তাহলে সামনে তার আলাদা আর কিছু হওয়ার সুযোগ নেই।'

'তিনি আপিল করবেন। আপিলে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এই আপিলকে বলা হয় কন্টিনিউয়েশন অব ট্রায়াল। অর্থাৎ ট্রায়ালটা তিনি মানেননি বলে আপিল করবেন। আপিলের সিদ্ধান্তের পরেও যদি তিনি বা রাষ্ট্রপক্ষ অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে তারা পরের ধাপে যাবেন', যোগ করেন তিনি।

উচ্চ আদালতে যদি জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হয়, তাহলে কী হতে পারে? জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, 'সেটা না হওয়ার কোনো প্রভিশন নেই। যেকোনো নাগরিকের জন্যই কোর্টের কিছু নির্দিষ্ট চর্চা আছে। এখানে ছয় মাসের কারাদণ্ডে জামিন না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এখানে জামিন দেওয়াটাই হলো কার্টেসি।'

উল্লেখ্য, শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সোমবার ড. ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার শ্রম আদালত। পরে উচ্চ আদালতে আপিলের শর্তে তাকে এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন একই আদালত।

Comments

The Daily Star  | English

Battery-run rickshaws allowed back on Dhaka roads for one month

SC chamber judge issues status quo on HC order

3h ago