গ্রামীণ টেলিকম শ্রম আইনের পরিবর্তে নিজস্ব আইন অনুসরণ করেছে: খুরশিদ আলম

গ্রামীণ টেলিকম শ্রম আইনের পরিবর্তে নিজস্ব আইন অনুসরণ করেছে: খুরশিদ আলম
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশে আইনের শাসন আছে। যে যত বড় হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

খুরশিদ আলম আরও বলেন, 'আপনি যখন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন শ্রম আইনের অধীনে, শ্রম আইন মানতে হবে। আপনি নোবেল লরিয়েট, তার মানে এটা না—শ্রম আইন আপনি মানবেন না।'

আজ সোমবার বিকেলে আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

খুরশিদ আলম বলেন, 'দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যে মামলা দায়ের করেছিল, সেটি আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।

'৩০৩ এর উপধারায় ড. ইউনূস এবং অন্যান্যদের ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন এবং ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন,' বলেন তিনি।

এই আইনজীবী আরও বলেন, 'যে শ্রমবিধিগুলো উনারা ভঙ্গ করেছেন এবং যেসব শ্রমিকদের স্থায়ী করেননি—আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সেগুলো কমপ্লাই করার জন্য বলা হয়েছে। রায়ের পরে ড. ইউনূস ও অন্যান্য আসামিদের পক্ষে একটি জামিনের দরখাস্ত দেওয়া হয়, আদালত আগামী ৩০ দিনের জন্য উনাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন আপিল দায়েরের শর্তে।'

খুরশিদ আলম বলেন, 'আজকে ৮৬ পাতার রায়ের অধিকাংশ পাতা উন্মুক্ত আদালতে পড়ে শোনানো হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন যে, শ্রম আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। তারা শ্রম আইন না মেনে তাদের নিজস্ব আইন অনুসরণ করেছেন। শ্রম আইন মানতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের দুবার শোকজ করা হয়েছে। তারা জবাব দিয়েছেন কিন্তু সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। যে ত্রুটিগুলো ছিল, তারা সেগুলো সংশোধন করেননি।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এখানে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার বিচার হচ্ছে না। শ্রম আইন লঙ্ঘন করার কারণে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তার বিচার হচ্ছে। কিছু হলেই বলে নোবেল লরিয়েট, নোবেল লরিয়েট তো আইনের ঊর্ধ্বে না! সেটা তার ব্যক্তিগত অর্জন কিন্তু আপনি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে যে আইনটি লঙ্ঘন করেছেন সেটাই আমরা আদালতের কাছে বলেছি।

'উনারা নোবেল লরিয়েট বলে সাধারণ জনমনে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে—সরকারের পক্ষে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নোবেল লরিয়েটের বিরুদ্ধে হয়রানি করার জন্য মামলাটা করা হয়েছে। এটা আমরা বারবার অস্বীকার করেছি। আজকে আদালতের রায়েও এটা পর্যবেক্ষণে এসেছে যে, এটা কোনো নোবেল লরিয়েটের বিচার হচ্ছে না, এখানে শ্রম আইন ভঙ্গকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যদের বিচার হচ্ছে,' যোগ করেন খুরশিদ।

রায়ের সময় উনার আইনজীবী কিছু আপত্তি জানিয়েছেন—গণমাধ্যমকর্মীরা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুরশিদ বলেন, 'রায় চলাকালে কোর্টকে বারবার বিরক্ত করা; এটা আমি কখনো দেখিনি। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ, এমনকি বিচারিক আদালতেও যখন রায়ের জন্য দিন ধার্য থাকে। তখন আমরা দুই পক্ষ বসে থাকি আর আদালতের রায়টা রিসিভ করি। আমরা অত্যন্ত লজ্জা পাচ্ছি, আমাদের আইন অঙ্গনের একজন লোক তার মক্কেলের জন্য বারবার আদালতকে বিরক্ত করছিলেন।

'আপনারা খেয়াল করেছেন, আদালত অসন্তুষ্ট হচ্ছিল। রায় চলাকালে উনি কীভাবে বলেন, আমার এটা নিতে হবে, ওটা নিতে হবে। এটা আদালতের এখতিয়ার; আদালত কোনটা নেবে কোনটা নেবে না। বারবার বিরক্ত করা অশোভনীয়,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Penalty less than illegal gains fuels stock manipulation

While fines are intended to deter future offences, questions remain over their effectiveness if the amount is lower than the illegal gain.

12h ago